নির্বাচন বর্জন, ভোটদান থেকে বিরত থাকতে এবং ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলন গড়ে তুলে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। বৃহস্পতিবার রাতে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে গত দুটি নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে মুজিবুর রহমান বলেন, বারবার নির্বাচনের নামে প্রহসন করে ক্ষমতা দখলের নেশায় আবারো পুরাতন স্টাইলে সাজানো নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। তারা পরিকল্পিতভাবে নিজেদের দলীয় লোকদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে ডামি প্রার্থী প্রদান করে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার এক আজব প্রহসনের আয়োজন করেছে। গত ৩টি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে এবং মানুষের ভোটাধিকার হরণ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দাফন করার মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশকে চূড়ান্তভাবে বাকশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ছিনতাইকারীরা যেভাবে মানুষের অর্থসম্পদ লুট করে নিজেদের মধ্যে তা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়, একই কায়দায় আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার ছিনতাই করে এবং ভোট প্রয়োগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নিজেদের মধ্যে জাতীয় সংসদের আসন ভাগাভাগি করে নেয়ার ব্যবস্থা করেছে। এই ভোট ছিনতাইকারীদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে হবে।
মুজিবুর রহমান আরো বলেন, স্বাভাবিকভাবে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে কোনোভাবে নির্বাচিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই বিরোধীদল যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে, সেজন্য তারা পরিকল্পিত চেষ্টা চালায়। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিজেদের লোকদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগদান, প্রশাসনকে দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা সাজিয়ে এবং নিম্ন আদালতে অনুগত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার নীল নকশা তৈরি করে। আর সরকার নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির পরিবর্তে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নির্বাচনের আগে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে নিজেদের ছক অনুযায়ী রায় ঘোষণা করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিচ্ছে-যাতে বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে।
জামায়াতের আমীর বলেন, গত ৩ সপ্তাহে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে।
মাত্র ৬ কার্যদিবসে চার্জ গঠন, সাক্ষ্য গ্রহণ, সাফাই সাক্ষ্য প্রদান, যুক্তিতর্ক এবং রায় ঘোষণার মাধ্যমে আদালত নজিরবিহীন ঘটনার অবতারণা করেছে। জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রেখেছে। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত সরকারের দায়ের করা মামলা দায়ের করা হয়ে ১৪ হাজার ৮৪৯টি।
তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সকল মামলায় জামিন পাওয়া সত্ত্বেও তাকে মুক্তি না দিয়ে নতুন নতুন মামলা দিয়ে কারাগারে আটক রেখেছে। এমনকি তাকে কারাগারে আটক থাকাবস্থায় বাইরের একটি মামলায় তাকে আসামি করে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রেখেছে। সংবিধানে বর্ণিত ৩৫ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে রফিকুল ইসলাম খানকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে তার সঙ্গে অমানবিক, নিষ্ঠুর ও সংবিধান বিরোধী আচরণ করা হয়েছে।
জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি জেনারেল এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব আবদুর রহমান মুসা প্রমুখ।