নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি গুপ্তহত্যার দিকে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এ নির্বাচন ঘিরে হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা বা প্রার্থীকে লাশ বানানোর চক্রান্ত তাদের আছে।
আজ শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে তারা যে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করেছিল, তারা স্বাভাবিক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে নাশকতার দিকে গেছে। এখন আমরা খবর পাচ্ছি, লন্ডন থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে তারা গুপ্তহত্যার দিকে যাবে। এ নির্বাচন ঘিরে হয়তো দেখা যাবে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা বা প্রার্থীকে লাশ বানানোর চক্রান্ত তাদের আছে। আমরা সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিএনপি খুবই ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, সবকিছু ব্যর্থ হওয়ার পর তারা এখন লিফলেট বিতরণ করছে। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে আরও ভয়ংকর কোনো হামলার। গুপ্তহত্যার পথে তারা যাচ্ছে, সেই খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এই নির্বাচনকে ব্যর্থ হতে দেওয়া হবে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার জনসভাগুলো জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছে। তারা কী টের পাচ্ছে না, মানুষ কত উৎসবমুখর, স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ৭ জানুয়ারি ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে যারা সন্দেহ করছে, লিফলেট বিতরণ করছে, মানুষ যেন ভোট না দেয়—এমনও হতে পারে, তারা লাশ বানিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। মানুষ যেন ভোটকেন্দ্রে না আসে। এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও সতর্ক হতে হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা যেটুকু খবর পেয়েছি, তারা মানুষ পুড়িয়ে, আন্দোলনের নামে গাড়ি পুড়িয়ে, বাস পুড়িয়ে, ট্রেন পুড়িয়ে মা ও সন্তানকে মেরে তাদের কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট পাচ্ছে না। এখন তারা এই নির্বাচনের বিষয়ে লাশ বানানোর যে অপরাজনীতি, সে পথেও তারা যেতে পারে।’
বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় একজনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জনসভায় মারা যাননি। হাসপাতালে মারা গেছেন, হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন, ডাক্তার তা-ই বলেছেন। কি নানক, (তখন জাহাঙ্গীর কবির নানক পাশের চেয়ারে বসে ছিলেন) ঠিক আছে?’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘নির্বাচনী সংঘর্ষ দেশে দেশেই হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশে আরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়। তাই বলে সত্যকে আমরা অস্বীকার করব কেন? এটা আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। আর কয়টা নিহত হয়েছে, বলেন? নিহত হওয়ার আর কোনো ঘটনা আছে কি? সংঘর্ষে তো মৃত্যু হয়নি। একটা লোকের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, স্ট্রোক হতে পারে অথবা উত্তেজনা থেকেও হতে পারে। তিনি মারা গেছেন কিন্তু হাসপাতালে। তাঁর গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।’
বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই মামলা-গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির অপকর্ম ও নেতিবাচক রাজনীতির কারণে নিজেরাই নিজেদের নিশ্চিহ্ন করেছে। এটার জন্য আর কারও দরকার হবে না। বিএনপির অপরাজনীতি তাদের ধ্বংসের জন্য দায়ী হবে। বিএনপির অপকর্মই দলটিকে গভীর খাদে ফেলে দিয়েছে।
বিএনপি এখন সংলাপ চাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন হোক। পরে আমরা দেখব সংলাপ করার কোনো সুযোগ আছে কি না।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে। উদ্বেগ থাকার কারণেই দ্রব্যমূল্য কমানোর তাগিদ আছে। সেটা আমরা অনুভব করি। আমরা প্রায়োগিক বাস্তবতায় ও দ্রব্যমূল্য যেন মানুষের জীবনে খুব কঠিন অবস্থা সৃষ্টি করতে না পারে, যতটুকু নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়, সে ব্যাপারে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও সুজিত রায় নন্দী; উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান প্রমুখ।
প্রথম আলো