সংসদ নির্বাচন শেষে এবার দল গোছানোয় হাত দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে নির্বাচন ঘিরে তৈরি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল মিটিয়ে সারাদেশে দলীয় শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দলের তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন শুরু হবে শিগগির। মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে দলে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলা হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ কয়েকটি সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন শুরুর বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ২২ জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি বৈঠকে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদ নির্বাচন ঘিরে নৌকা ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে, সংসদ নির্বাচনের কারণে দলের তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন কার্যক্রম অসমাপ্ত রয়েছে। এই সম্মেলন দ্রুত শুরুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে দলের তৃণমূল সম্মেলন কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার (মহানগর কমিটিগুলোও সাংগঠনিক জেলা) মধ্যে ৬৯টির সম্মেলন হয়ে গেছে। সম্মেলনের মাধ্যমে সিংহভাগ জেলা ও মহানগরে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে। উল্লিখিত সময়ে ৪৯২টি উপজেলার সিংহভাগ এবং কয়েক হাজার পৌর, ইউনিয়ন ও ইউনিট কমিটির সম্মেলনও হয়। তবে চার বছরের বেশি সময়ে বাকি ৯টি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন করা যায়নি। এরই মধ্যে বিরোধী দলের আন্দোলন ও নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হওয়ায় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল সম্মেলন কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, আগামী মাসে রোজা শুরু হয়ে এপ্রিলের মাঝামাঝি ঈদুল ফিতর হবে। তার পরপরই দলের তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন শুরু হবে। প্রথমে মেয়াদোত্তীর্ণ ৯টি সাংগঠনিক জেলা ও উপজেলা কমিটির সম্মেলন হবে। তবে এরই মধ্যে তিন বছরের মেয়াদ পার করে ফেলেছে আরও অন্তত ১০টি সাংগঠনিক জেলা ও বেশ কিছু উপজেলা কমিটি। ধারাবাহিকভাবে এগুলোতে সম্মেলন হবে। যেসব জায়গায় উপজেলা ভোট হবে, সেখানে আপাতত সম্মেলন হবে না।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ঢাকা মহানগরীতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলো পুনর্গঠনের কাজও শেষ করা হবে। ২০২২ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে ঢাকা মহানগরীর দুই অংশের ৫০টি থানা, ১৩৯টি ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়নে সম্মেলন শেষ হলেও দেড় বছরে এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৬টি থানা, ৬৪টি ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়ন এবং মহানগর দক্ষিণের ২৪টি থানা ও ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। বারবার তাগাদা সত্ত্বেও এসব কমিটি গঠনে বিলম্ব হওয়ায় দলের নীতিনির্ধারকরা রীতিমতো বিরক্ত। থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলো না হওয়ায় মহানগরীতে দলীয় কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই সংকট কাটাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন আয়োজনের চিন্তাভাবনা চলছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা। তবে সংসদ নির্বাচনসহ নানা কারণে ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন করা যায়নি। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা মহানগর সম্মেলন হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনও দ্রুত আয়োজন করা হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগ। ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সর্বশেষ জাতীয় কংগ্রেস (সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ৬ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগ ও ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এ বিষয়ে সমকালকে বলেন, ‘নির্বাচন শেষে দলীয় কার্যক্রমে গতি আনার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে, নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে যে কোন্দল তৈরি হয়েছে, তা মিটিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।’ তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সম্মেলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের কারণে এই কার্যক্রম কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকলেও নতুন করে শুরু হবে।’
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিছুটা সংকট ছিল। এগুলো নিরসন করা হবে। নির্বাচনের আগে কয়েকটি জেলায় সম্মেলন করা যায়নি। শিগগির সেখানে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হবে।’
samakal