নিজেকে এখনো বৈধ প্রধানমন্ত্রী দাবি করছেন শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ফাইল ছবিআওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ফাইল ছবিছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাঁর দাবি, সংবিধান অনুযায়ী তিনি এখনো দেশের ‘বৈধ প্রধানমন্ত্রী’।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ফোনালাপে এমন দাবি করেছেন শেখ হাসিনা। তাঁর দাবি, দেশ ছাড়ার আগে তিনি পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে গণভবন থেকে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেননি।

শেখ হাসিনার দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আজ শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উনি যদি নিজেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, সেটা তো ভারতে বসে দাবি করলে হবে না। এ দাবি তো বাংলাদেশে এসে করতে হবে। উনি তো ওখানে কোনো রাষ্ট্রীয় সফরে নেই। এ বক্তব্যের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।’

শেখ হাসিনার কথোপকথনের ভাইরাল হওয়া অডিওটি ২০ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের। এতে তাঁর সঙ্গে বেলজিয়ামপ্রবাসী এক আওয়ামী লীগ নেতার কথা বলতে শোনা যায়। এই নেতা নিজেকে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে লবিস্ট হিসেবে কাজ করেন বলে দাবি করেন।

আজকের পত্রিকা ফোনালাপটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। তবে আজ বিকেলে আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘বক্তব্য শুনলেই তো বোঝা যায়, এগুলো কার কথা। আমাদের সভাপতি এখন ভারতে আছেন। তাঁর তো কারও সঙ্গে কথা বলতে নিষেধাজ্ঞা নেই। তিনি কথা বলতেই পারেন।’

ফোনালাপের একপর্যায়ে ৫ আগস্টের ঘটনা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তাঁর মতে, সেদিন গণভবন এমনভাবে ঘেরাও করা হয়েছিল যে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা গুলি চালালে সবাই লাশ হতো।

লাশ ফেলে ক্ষমতায় থাকতে চাননি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, আমার নিরাপত্তা রক্ষায় বাধ্য হয়ে সরে যেতে হলো গণভবন থেকে। যার ফলে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারিনি। কাজেই আমার পদত্যাগ হয়নি। কাজেই আমি এখনো সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।’

৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দিতে চেয়েছিলেন দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের সিস্টেম হচ্ছে, আমি পদত্যাগ করার পরে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতে নতুন কেউ নির্বাচিত হলে তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী। সেটা হলে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে হবে সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য, তখনই সংবিধান ভাঙবে, তা ছাড়া ভাঙবে না। এটাও সংবিধান অনুযায়ী। আমি তো পদত্যাগ করি নাই। আমাদের সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যেভাবে পদত্যাগ করতে হয়, আমার কিন্তু সেইভাবে পদত্যাগ করা হয়নি।’

পদত্যাগের ভুয়া ছবি প্রচার করা হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছবিটা ভালো করে দেখলে দেখা যাবে, ওইটা একটা মোটা বই। ওই রকম কোনো বইয়ে প্রধানমন্ত্রী সই করে পদত্যাগ করে না। আর আমার সেই চিঠিও কেউ দেখাতে পারছে না। চিঠি তো গণভবনে রেখে আসছিলাম। গণভবনে আগুন দিয়েছে, লুটপাট হয়েছে, ওইগুলো সব চলে গেছে।’

এখন প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের একটি মেয়ে, তাঁকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো। বলল, আত্মহত্যা করেছে। এসব লাশের দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টাকে নিতে হবে।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে হত্যাকাণ্ড হয়নি, আন্দোলনকারীদের মধ্যে কিলিং এজেন্ট ছিল বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের একটি বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, ‘উপদেষ্টা সাখাওয়াত সাহেব আর্মির লোক। তিনি নিজেই বলেছেন, এ বুলেট পুলিশের কাছে থাকে না। তার মানে, সাধারণ লোকের কাছে অস্ত্র ছিল। আজ পর্যন্ত বুলেট সম্পর্কে তদন্ত নেই, অস্ত্র কে ব্যবহার করেছে, কোনো তদন্ত নেই।’

হত্যাকাণ্ডের দায় বর্তমান সরকারকে নিতে হবে—শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘হত্যাগুলো কেন হলো, কে করল, এগুলোর মোটামুটি ধারণা পাবেন যখন জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল আসবে। মানুষগুলোকে মেরে ফেলা হয়েছে ৫ আগস্টের মধ্যে। আর এর দায় আমাদের হওয়ার প্রশ্নই নেই। কারণ, আমরা দায়িত্ব নিয়েছি ৮ আগস্ট।’

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার মো. তানভীর কায়সার নামের এক যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসীর সঙ্গে শেখ হাসিনার ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। গতকাল মধ্যরাতে তাঁর ফেসবুক আইডি সচল দেখা গেলেও শুক্রবার সেটি সচল ছিল না। সেখানে তানভীরকে বলতে শোনা যায়, ‘বাংলাদেশ থেকে একটা ভিডিও নিউজ আসছে আপা, সেখানে বলা হয়েছে আপনাকে নাকি হেলিকপ্টার দিয়ে ভারতের গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লিতে ট্রান্সফার করা হয়েছে। খুব কষ্ট হয় আপা। আপনি বললে আমি এই মুহূর্তেই দেশে চলে আসব।’

তানভীরের কথা শুনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোথায় নিয়ে গেছে? হেলিকপ্টারের ছবি দিয়েছে? আজগুবি কথা বলে এরা। আমি কিন্তু দেশের খুব কাছেই আছি। যেকোনো সময় চট করে ঢুকে পড়তে পারি।’

তানভীরকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু এখন তুমি দেশে গেলে মামলা খাবে। আমার বিরুদ্ধে ১১৩টি মামলা হয়েছে। এটা কোন ধরনের কথা? আমার পরিবারের কেউ বাকি নাই। সবার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে।’

ফোনালাপ দুটির বিষয়ে আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। ফেসবুক পেজের অটো বার্তায় দুটো মেইল আইডি দেওয়া হয় যোগাযোগের জন্য। সেখানেও বার্তা দিয়ে ফিরতি জবাব পাওয়া যায়নি।

ajker patrika