নতুন ১০১ অর্থ পাচারকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৫: ৫৯

নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে রাজনীতির মাঠে কারো বক্তব্যে কিছু যায় আসে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বক্তব্য ওরা রাখুক। আমি বামপন্থি রাজনীতি করেছি। তখন কত বক্তব্য দিয়েছি- হল বন্ধ করে দাও, ইউনিভার্সিটি বন্ধ করে দাও। বন্ধ হয়েছে না কি?’

গতকাল বুধবার সরকারের এক বছর পূর্তিতে দেশের সার্বিক অর্থনীতি পরিস্থিতির ওপর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মালটিপারপাস হলে সংবাদ সম্মেলনটি হয়।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী আমলে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোয় ঋণের নামে নজিরবিহীন লুটপাট হয়েছে। এ টাকার বড় অংশই বিদেশে পাচার করা হয়। আদায় হচ্ছে না বলে ওই অর্থ খেলাপি ঋণে পরিণত হচ্ছে। ওই সময় সরকারের নীতিনির্ধারক ও ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা প্রভাব খাটিয়ে এসব অপকর্ম করেছেন। শুধু একটি ব্যাংকের মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ খেলাপি। ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও তার বন্ধুবান্ধব মিলে সব টাকা নিয়ে চলে গেছেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নতুন আরো ১০১ অর্থ পাচারকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা করে বিদেশে পাচার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ও পাচারের অর্থ ফেরত আনার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। এর আগে এক ব্যক্তি একাই কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন, এমন ১১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

আগামী চ্যালেঞ্জ কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা দূর করতে পারিনি। সেখানে কর্মরত মানুষগুলোকে ঠিক করতে পারিনি। কাজটি শুরু করেছি, এটি অব্যাহত রাখা বড় চ্যালেঞ্জ আগামীতে নির্বাচিত সরকারের জন্য।

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই এক বছরে অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা একটি সন্তোষজনক পর্যায়ে আছে। কিছুটা দ্বিমত থাকতে পারে আপনাদের। তবে সুশাসনের ঘাটতি, অর্থপাচার ও দুর্নীতির কারণে আর্থিক খাত খাদের কিনারায় পড়েছিল। সেখান থেকে এখন একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে সব সূচক ছিল নেগেটিভ, এখন সব পজিটিভ হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আইএমএফের শর্ত পালনে মুদ্রা বিনিময়হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে আমরা ভুল করিনি। যদিও শুরুতে শঙ্কায় ছিলাম।’

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন, জুনে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে আসবে। বর্তমানে ৮ শতাংশের উপরে আছে আর জুলাইয়ে ছিল ১৪ শতাংশ।

ব্যাংকগুলো একীভূত করা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কতগুলো ব্যাংক একীভূত করা হবে, সে তথ্য প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যাংক সমন্বয় করা মানে আমাদের দেশের ভাষা হচ্ছে শেষ হয়ে গেল, যে কারণে এ তথ্য এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক করবে।

টাকা ফেরত আনা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যে বড় ধরনের ১১টি কেস ফাইল হয়েছে। পাচারকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। কোন কোন জায়গায় পাচার করেছে, সেটি শনাক্ত হয়েছে। এসব টাকা ফেরত আনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ১২ দেশের সঙ্গে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএলএ) করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। টাকা ফেরত আনতে আমরাও আইনজীবীর মাধ্যমে চেষ্টা করছি।

ঋণ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশের রাজস্ব আহরণ খুব আশাতীত নয়। এমন পরিস্থিতিতে ঋণ না আনলে কীভাবে চলবে? এখানে করের হার বাড়ালেই আয় বেশি হবে, তা নয়। কর আদায় নির্ভর করে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতির ওপর। তবে ঋণ পরিশোধের সীমা যেন ঠিক থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক আছি। এতকিছুর পরও চার বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here