স্পোর্টস রিপোর্টার
৩১ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
২০১২, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রথম আসর থেকেই বিতর্ক এর পিছু ছাড়েনি, যা আজও অব্যাহত। বিপিএলকে দু’টি ভয়াবহ ভাইরাস গ্রাস করেছে, যা দিন দিন আরও ভয়ংকর আকার ধারণ করে। একটি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক না দেওয়া আরেকটি ফিক্সিং। এর ভয়াবহতা সর্বশেষ আসরেও দেখা গেছে। ‘দুর্বার রাজশাহী’ ও ‘চিটাগাং কিংস’- এই দু’টি ফ্র্যাঞ্চাইজি সর্বশেষ আসরে বিপিএলের গায়ে কলঙ্ক মেখে দিয়েছে। দল দু’টি এখনো দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করেনি। শুধু ক্রিকেটারই নয়, দল দু’টির বেশির ভাগ কোচিং স্টাফ ও টিম ম্যানেজমেন্টের পারিশ্রমিকও তারা দেয়নি। এমনকি ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি-ও দেয়নি তারা। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ড্রাফট থেকে নেওয়া ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়েছে। বাকি কেউ টাকা পাচ্ছে না, কারণ রাজশাহী ও চিটাগাংয়ের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে । বিশেষ করে রাজশাহীর মালিক শফিকুর রহমান ও দলটির অপারেশনস ইনচার্জ জায়েদ আহমেদ পলাতক। অন্যদিকে, এই দুটি দলের ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, গত বিপিএলে প্রায় প্রতিটি দলের কোনো না কোনো ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ আছে, যা নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। এই পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে বিসিবি। বিপিএলের নতুন সাইকেলে প্রবেশ করার আগে বড় ধরনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। আসরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল করতে মার্কেটিং পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে তারা বাছাই করেছে, সেখান থেকে সব ধরনের যোগ্যতার বিবেচনায় একটিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। বিসিবি’র একটি সূত্র জানায়, ‘বিপিএলে যেন আর বিতর্ক তৈরি না হয়, আমরা সেই দিকে নজর দিচ্ছি। বিশেষ করে ক্রিকেটার ও টিম ম্যানেজমেন্টের পারিশ্রমিক, ফিক্সিং প্রতিরোধ ও আসরকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা হবে সবচেয়ে বড় কাজ। এই জন্য যতটা কঠোর হওয়া দরকার, বিসিবি তা করবে। আগের যে সব ফ্র্যাঞ্চাইজিদের এমন অভিযোগ আছে, তাদের কাউকে আর বিপিএলে আসতে দেওয়া হবে না কোনভাবেই।’ এক কথায় নতুন মোড়কে সাজানো হচ্ছে বিপিএল। বিপিএল আয়োজনের জন্য স্পোর্টস মার্কেটিং পরামর্শক নিয়োগের আগ্রহপত্র জমা দেওয়ার পর্ব শেষ হয়েছে। মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে, যার মধ্যে চারটিই বিদেশি। সাড়া দেওয়া পাঁচটি প্রতিষ্ঠান হলো, অ্যাপেক্স স্পোর্টস কনসাল্টিং, আইএমজি, রিয়েল ইম্প্যাক্ট অ্যান্ড অ্যাবসলুট লিজেন্ডস স্পোর্টস, দ্য আইপিজি গ্রুপ ও মাইন্ড ট্রি লিমিটেড, এবং ট্রান্সপোর্ট গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে বিসিবি একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করবে। তাদের কাছে বিস্তারিত প্রেজেন্টেশন ও অর্থনৈতিক প্রস্তাব চাওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর আজ ভার্চুয়ালি প্রেজেন্টেশন দেওয়ার কথা রয়েছে, যা দুপুর ২টা থেকে শুরু হবে। মূলত, বিপিএলের পরের আসরকে সামনে রেখে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। লীগের মান উন্নয়ন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই এসব পরিবর্তনের প্রধান লক্ষ্য। মার্কেটিং কনসালটেন্ট নিয়োগের কারণ হলো বিপিএলের ব্র্যান্ডিং এবং বাণিজ্যিক দিক আরও শক্তিশালী করে তোলা। এর ফলে টুর্নামেন্টের প্রচার-প্রচারণা এবং স্পন্সরশিপের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে বাড়বে বিপিএলের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তাও। তবে বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক হিসেবেই নিয়োগ দেবে। তারা এই আসরের উন্নয়নে একটি মডেল দেবে। তবে চালিকাশক্তি থাকবে বিসিবি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের হাতেই।
নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি ও কঠোর নীতি
অন্যদিকে, আগের আসরের চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্চাইজিদের আর নতুন করে দল দেওয়া হবে না বলেই জানা গেছে। যারা পারিশ্রমিক দিতে পারেনি ও বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি পরিশোধ করেনি, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আগামী সাইকেলের জন্য বেশ কয়েকটি নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজিকে দল দেওয়া হবে। এছাড়াও, পরের সাইকেলে দল দেওয়া হবে পাঁচ বছরের জন্য। তবে যাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক কোনো অভিযোগ নেই, যেমন রংপুর ও বরিশাল, যার দায়িত্ব থাকবে পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিদের হাতেই। এছাড়াও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে একটি হলো দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের পেমেন্ট সবার আগে নিশ্চিত করা। অতীতে পেমেন্ট সংক্রান্ত জটিলতা দেখা যাওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যা খেলোয়াড়দের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। টুর্নামেন্টের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ফিক্সিং রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং দুর্নীতি দমন শাখার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হবে, যাতে ম্যাচের সততা কোনোভাবেই ক্ষুন্ন না হয়।