ধর্ষিতার প্রতি ইতালির আদালত এবং আমাদের গণমাধ্যম

Minar Rashid

ধর্ষিতার প্রতি ইতালির আদালত এবং আমাদের গণমাধ্যম

( দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত উপ সম্পাদকীয় কলাম )

ইতালির একটি আদালত জনৈকা ধর্ষিতাকে এক হৃদয়বিদারক প্রশ্ন করে বসে, ধর্ষণের সময় আপনি পা দু’টিকে একত্রে রাখলেন না কেন? ধর্ষিতার প্রতি সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো পরিস্থিতিতে বিজ্ঞ বিচারকগণ এই ধরনের প্রশ্ন না করে পারেন না। যদিও নারীবাদীগণ ওই বিচারকের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছেড়েছে। তজ্জন্যে কাউকে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হতে হয়নি। পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিম বিশ্বের নারীদের প্রতি প্রায়ই দরদ দেখালেও নিজেদের নারীদের প্রতি এরা অনেক জায়গায় অত্যন্ত নির্মম আচরণ করে থাকেন । অবলা নারীদেরও অনেক সময় Woman Card ব্যবহার করতে দেন না।
পশ্চিমা বিশ্বে এটি একটি জটিল সামাজিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী কিংবা ক্ষণস্থায়ী গার্লফ্রেন্ডরা তো করেই, এমনকি স্ত্রীরাও আপন স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে বসে। ফলে কোন কর্মটি পারস্পরিক সম্মতিতে আর কোনটি অসম্মতিতে ঘটেছে, তা নির্ণয় করতে বিচারকগণ হিমশিম খেয়ে যান। তরতাজা ধর্ষণের সাথে আবার কয়েক যুগ বাসী ধর্ষণ নিয়েও বিচার করতে হয়। যদিও শুভ কিংবা অশুভ কর্মটি সংঘটিত হওয়ার সময় বিচারক ও বিচারালয় বহাল তবিয়তেই ছিল। কাজেই ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে এই কিছিমে বিচারকদের মেজাজ বিগড়ানো অত্যন্ত স্বাভাবিক।
ওদের সমাজের রক্ষণশীল অংশ এবং সমাজচিন্তকগণ অবশ্য কিছুটা দোষ ধর্ষিতাকেও দিতে চান। হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় নেতারা এ ব্যাপারে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্বেও রক্ষণশীল অংশ কোনো কোনো ধর্ষিতার বেশভূষা দেখে প্রায়ই বলেন, She asked for it অর্থাৎ ধর্ষিতাই এই ধর্ষককে উত্তেজিত ও প্রলুব্ধ করেছেন।
ইতালির বিচারক যে হতাশায় ধর্ষিতাকে এমন বেখাপ্পা প্রশ্ন করে বসেছেন, সেই একই ধরনের হতাশা থেকে জনতার আদালত এ দেশের গণমাধ্যমকে একই কিছিমের প্রশ্ন করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আজ হোক বা কাল হোক, জনতার আদালত থেকে এই প্রশ্নটি আসবেই। মিডিয়ার অনেকে আত্মপক্ষ সমর্থনে বলে থাকেন, আমরা কী করব? সরকার আমাদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। মুখ বন্ধ করলেও পায়ের নিয়ন্ত্রণটি তো নিজের কাছেই আছে। সেটি কি আমাদের গণমাধ্যম সঠিকভাবে ব্যবহার করছে?
একটা মোটামুটি গণতান্ত্রিক দেশকে এভাবে এক দলীয় স্বৈরতান্ত্রিক দেশে রূপান্তর করে ফেলেছে আর গণমাধ্যম শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে। ইতিহাস এদের কাউকেই ক্ষমা করবে না। প্রত্যেকটি চিড়িয়াকে চিহ্নিত করে ইতিহাস বিশেষ চিড়িয়াখানা বানাবে।
পুরো জাতিকে একটা False sense অব সিকিউরিটিতে আটকানো হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়টি দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। ‘False sense অব সিকিউরিটি’ কী জিনিস তা হদয়ঙ্গম করতে বন্ধুদের মনোরঞ্জনে পাঠানো আমার এক কাপ্তান বন্ধুর মন্তব্যটি সহায়ক হতে পারে।
Condoms don’t guarantee safe sex anymore! A friend of mine was wearing one when he was shot dead by the woman’s husband!!
কাজেই একদিককে অরক্ষিত করে অন্য দিক রক্ষা করে লাভ হয় না। এগুলো নিয়ে অন্ধ সমালোচনা কিংবা বিদ্বেষ কাম্য নয়। জাতির জন্য নিঃসন্দেহে এটা কঠিন সময়। প্রতিবেশীর সাথে সমস্যা জিইয়ে রেখে আমরা টিকে থাকতে পারব না। তবে একটা সম্মানজনক সহাবস্থানের উপায় আমাদের বের করতে হবে। আমরা প্রতিবেশীর ধ্বংস চাই না, সেখানকার নেতৃত্বের সুমতি চাই। এই চাওয়াটি প্রতিবেশীকে জানাতে হবে। তবে এই বোধটি আসতে হবে উভয়পক্ষের মনে। এগুলো নিয়ে South Asian Journal এবং Bangladesh Chronicle এ Headless democracy, Heartless neighbor নামে আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছে। নিচের লিংকে লেখাটি রয়েছে।
http://southasiajournal.net/headless-democracy-heartless-ne…

এই লেখাটি আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন। চিমটি খেলে যে ব্যথা পান, সেই কথাটি যে কিছিমেই হোক আমাদের প্রতিবেশীকে জানান। চিমটি খাওয়ার পর দাঁত কেলিয়ে হাসলে ভুল সঙ্কেত পাবে।
এই কাজটি আমাদের গণমাধ্যমের করার কথা ছিল। কিন্তু তারা তা করছে না। চিমটি খেয়ে হয় এরা নীরব থাকছে কিংবা দাঁত কেলিয়ে হাসছে। জনগণ থেকে জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগ স্থাপনে এরাই বড় বাধা।
দুই.
২০০৫ সালে তখনকার তুমুল জনপ্রিয় সাপ্তাহিক যায়যায় দিনে আমার একটি লেখা ছাপা হয়েছিল। যতদূর মনে পড়ে সেই লেখার শিরোনাম ছিল, মিডিয়ার আক্রমণে দিশাহারা বিএনপি।
সময়টি ছিল এক-এগারোর প্রস্তুতি পর্ব। আর এই প্রস্তুতিতে গণমাধ্যমের একটা অংশ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। এ কথা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে পড়েছে যে তথাকথিত এক-এগারো ছিল এ দেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটা সুগভীর ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের প্রধান বাহক ছিল গণমাধ্যমের বড় একটা অংশ।
বিষয়টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আগে কিংবা সংঘটনের পরপর উপলব্ধিতে টানতে অনেকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। সময় হলো সবচেয়ে বড় হিলার বা টিচার। অনেক প্রশ্নের জবাব সময় স্পষ্ট করে ফেলেছে। পুরো বিষয়টি এখন যৎ সামান্য আইকিউ সম্পন্ন একজন মানুষের বোধগম্যের আওতাতেও চলে এসেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই যুগে বিএনপির অবস্থান ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক পাল্টালেও আক্রমণের সেই ধারা ও তীব্রতাটি যেন সেই একই রয়ে গেছে। প্রিন্ট মিডিয়ার গুরুত্ব কমে ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার গুরুত্ব বেড়ে গেছে। সরকারের সাথে গণমাধ্যমের একটা অংশ মিলে বিরোধী দলের যেকোনো আন্দোলনকে পেট্রলবোমা থেরাপি দেয়া শুরু করেছে। আন্দোলনের সময় পেট্রলবোমাগুলো কারা ছুড়েছে তার সঠিক অনুসন্ধান করাই ছিল গণমাধ্যমের কাজ। সেই কাজটি না করে গণমাধ্যমের বড় একটা অংশ সরকারের প্রপাগান্ডা মেশিন হিসেবে বিরোধী দলের ওপরই সব দোষ চাপিয়ে দিয়েছে। বিরোধী দলগুলো এ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুসরণ করে এগিয়ে এলে ‘আগুন সন্ত্রাসী’র খেতাব পরিয়ে দেয়, আবার এই ধারার আন্দোলন থেকে পিছিয়ে গেলে হেডমের অভাব বলে তিরস্কার করে। অর্থাৎ এ দেশের সুশীল মিডিয়া বিরোধী দলগুলোকে দুই পা উপরে তুলে কোন পায়ে হাঁটতে বলে তা বোধগম্য হয় না। মোট কথা হলো সরকারের সাথে গণমাধ্যম মিলে এ দেশে গণতন্ত্রের হাতে হারিকেনটি ধরিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জ্বালাও পোড়াও নতুন কিছু নয়। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারি দলের অতীতটি খুবই বর্ণাঢ্যময়। আওয়ামী লীগ তাদের খায়েশ মতো ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে তারপরেও যদি বিরোধী দলে যায় তবুও এই কাজটি শুরু করবে, তাতে এক বিন্দুও সন্দেহ নেই। যারা সেই সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন তারা আমার এই লেখাটি কিংবা বক্তব্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। আল্লাহ চাহে তো আগেই আমার এই কথার সত্যতা যাচাইয়ের সুযোগ চলে আসতে পারে। এমনকি তখন দরকার পড়লে জামায়াতের সাথে জিরো টলারেন্সের এই আওয়ামী লীগ আবার ঐক্য করবে। তখন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের মতো আওয়ামী লীগের কেউ এটা নিয়ে তেমন মাইন্ড করবে না। কারণ কতটুকু ঠেকায় পড়ে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সাথে ঐক্য করে- তা সেই সব আওয়ামী দরদি বুদ্ধিজীবীরা অত্যন্ত দরদের সাথেই উপলব্ধি করেছেন। দরকার পড়লে ভবিষ্যতে আরো কয়েকবার এই দরদটি দেখাবেন । এ ক্ষেত্রে আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবীদের আক্কেলজ্ঞানের প্রশংসা না করে পারা যায় না। কেউ তাদের নামের আগে আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী ট্যাগ লাগাক এটা তারা পছন্দ করেন না। এই ধরনের ট্যাগ না থাকলেও তারা জানেন যে দলের প্রয়োজনে কখন কথা বলতে হয়, আর কখন চুপ মেরে থাকতে হয়। তারা আরো জানেন যে, কোন জায়গাটি রাজনীতি নামক স্টেডিয়ামের মাঠ, আর কোন জায়গাটি গ্যালারি। কিন্তু বিএনপির মধ্যে এই ছন্দের শুধু পতন নয়, মহাপতন পরিলক্ষিত হয়। গ্যালারিতে বসেই বিএনপি ট্যাগ মারা বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ পুরো খেলাটি খেলে ফেলতে চান। কোন খেলা যে এর খেলোয়াড়দেরই খেলতে দেয়া উচিত কিংবা খেলতে হলে লুঙ্গিতে মালকুছা মেরে মাঠে নেমে পড়তে হবে- এই সত্যটি বিশেষ ট্যাগ মারা বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা ভুলে যান। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের বাতাস দেয়ার প্রবণতাটি লক্ষ করার মতো। তারাও মাঠ থেকে এনে ক্যামেরাটি ঠিক সময়ে গ্যালারির দিকেই ফোকাস করে ফেলেন।
কাজেই আমাদের রাজনীতিকে ফুটবল বানিয়ে নোংরা খেলাটি খেলছে মূলত মিডিয়া। সবার চোখের আড়ালে অবস্থান করে আসল খেলাটি খেলছে এক খেলারাম বা নটরাজ। বাকি নট নটিরা তারই ইঙ্গিত মতো খেলে যাচ্ছে।
একই যুদ্ধকে টার্গেট করে পুরো বাহিনীকে তিনটি স্তরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী যেমন করে ইনফেন্ট্রি, আর্টিলারি ইত্যাদি স্তরে বিন্যস্ত থাকে, এখানেও তাই রয়েছে। সেই স্তরগুলো নিয়ে নিম্নরূপ :

১. ইনফেন্ট্রি বা সম্মুখ ভাগের বাহিনী

প্রথম পর্যায়ে আছে মিডিয়ার ইনফেন্ট্রি বা সম্মুখ স্তরের বাহিনী। দলীয় মুখপত্র না হলেও এরা অনেকটা অন্ধভাবে নিজেদের পছন্দের দলটিকে সমর্থন করে। এই সমর্থনে তাদের কোনো লজ্জা বা সঙ্কোচ থাকে না। বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও স্বাভাবিক কমন সেন্সের বিরুদ্ধে এদের সব অশুদ্ধ ভূমিকাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দিয়ে শুদ্ধ করে ফেলে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কিংবা কোনো ঘটনার সাপোর্টিং ডকুমেন্ট সম্পর্কে এরা থোড়াই কেয়ার করে। নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে এরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সংবাদ তৈরি করে। বদরুলরা বদ কাজ করতে গিয়ে পিটুনি খেলেও এরা জামায়াত-শিবিরকে টেনে এনে বদরুলদের হিরো বানিয়ে ফেলে। এই ঘরানার পত্রিকাগুলোর মালিক এবং সম্পাদক থেকে শুরু করে সবাই আওয়ামী বলয়ের। পাঠকও একই ঘরানার।
বাংলাদেশের মিডিয়ার একটা উল্লেখযোগ্য অংশই এদের সমন্বয়ে গঠিত। পশ্চিমবঙ্গের জনগণ পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশের তুলনায় সামাজিকভাবে অধিকতর সচেতন। সেই পশ্চিমবঙ্গে যেখানে হাতেগোনা অত্যন্ত সাদামানের দুই-একটি দৈনিক ছিল, স্বাধীনতার পর থেকে সেখানে এ দেশে সংবাদপত্রের উত্থান রীতিমতো অবাক করার মতো। বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী শক্তি যেখানে একটি বা দু’টি সংবাদপত্র বা টিভি স্টেশন চালাতে হিমশিম খেত, তখন তাদের বিরোধী শক্তির হাতে এতগুলো সংবাদমাধ্যম বিস্ময়ের সৃষ্টি করত।

২.আর্টিলারি বা গোলন্দাজ বাহিনী

এরা ইনফেন্ট্রি বাহিনীর পেছনে থাকে কিংবা কিছুটা আড়াল থেকে আক্রমণ পরিচালনা করে। এসব মিডিয়ার মালিক পক্ষ সুবিধাবাদী করপোরেট জগতের বাসিন্দা হলেও সম্পাদক মহাশয় সেই বলয়ের সুশীল।
সঙ্গতকারণেই প্রথম সারির যোদ্ধাদের চেয়ে এদের মগজটি খানিকটা উন্নত। এরা নিজেদের নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম হিসেবে তুলে ধরে। এরা চতুর, কুশলী। এরা ব্যবসায়িক বুদ্ধির কারণে মাঝে মধ্যে কিছু সত্য কথা বলে ফেলে। এরা জাতে মাতাল বা নিরপেক্ষ কিন্তু তালে ঠিক আওয়ামী লীগ। এরা প্রথম স্তরের আওয়ামী বাহিনীর কাছ থেকে একটা দূরত্ব বজায় রাখে।
তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে নিরপেক্ষ পত্রিকা গ্রুপ। এরা নিজেদের নিরপেক্ষ বললেও প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী নিরপেক্ষ। এরা পান থেকে চুন খসলেই বিএনপির সময়ে নিজ নিজ পত্রিকার প্রথম পাতায় গুরুগম্ভীর সম্পাদকীয় মন্তব্য প্রকাশ করেছে। দেশটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাবে বলে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এক হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে এরা যেভাবে দাঁড়িয়েছিল, আজ শত শত জলভবনের বিরুদ্ধে এরা ঋষিবৎ নীরবতা পালন করে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভয়ে মাঝে মধ্যে নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে দুই-একটা আওয়াজ তুললেও তাতে সরকারের কোনো মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে না। যেমন ঢাকার মেয়র নির্বাচনের পরের দিন এরা ঠিকঠাকমতোই নির্বাচনের কারচুপি তুলে ধরেছে। কিন্তু সেই অবৈধ মেয়রদের সম্পর্কে এরপর আর কোনো বাক্য উচ্চারণ করে না। বরং নানা কায়দায় এই অবৈধদের সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। নিজেদের এরা নিরপেক্ষ মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরলেও এদের আওয়ামী নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম বলাই অধিকতর শ্রেয়।
নিজেদের এরা বাকস্বাধীনতা রক্ষায় একেকজন সিপাহসালার হিসেবে তুলে ধরে। অথচ সরকার এতগুলো সংবাদপত্র ও টিভি স্টেশন বন্ধ করে দিলো, একজন সম্পাদককে বছরের পর বছর বিনা বিচারে আটক রেখেছে সেই দিকে এদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এগুলো নিয়ে এদের বিরাট বিরাট হৃদয়ে সামান্য দংশনও অনুভূত হয় না। কাজেই বর্তমান এই পরিস্থিতির জন্য গণমাধ্যমকে দোষ না দিয়ে পারা যায় না। ইতালির আদালত ওই ধর্ষিতাকে যে প্রশ্ন করেছিল, জনতার আদালতেও হুবহু গণমাধ্যমের প্রতি সেই একই প্রশ্ন ছুড়ছে।