- ইকতেদার আহমেদ
- ১৮ অক্টোবর ২০২১
নাগরিকত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ রাষ্ট্রে দুই ধরনের নীতি অনুসৃত হয়। একটি, নিজ অথবা বাবা-মার জন্মস্থানের সূত্রে নাগরিকত্ব। অপরটি, একস্থানে একাদিক্রমে কিছুকাল বসবাসের কারণে নাগরিকত্ব। স্বদেশ ছেড়ে অন্য দেশে বসবাসকে অভিবাসন বলা হয়। আর যখন একজন ব্যক্তি স্বদেশ ছেড়ে অন্য দেশে বসবাস করেন তখন তিনি সে দেশের অভিবাসী। সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কারণে আমাদের দেশের অনেকে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতিতে অভিবাসী হতে আগ্রহী। তাদের অনেকেরই ধারণা ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকা অথবা উপরিউক্ত অন্য কোনো দেশে অভিবাসী হলে সুখী হওয়া যাবে। এভাবে অভিবাসী হয়ে অনেকের জীবনে সমৃদ্ধি এলেও সামাজিক অবস্থান স্বদেশীদের তুলনায় নিম্নতর হওয়ায় অথবা মাতৃভূমিতে উচ্চপদের আশায় পরিণত অথবা মাঝ বয়সে অনেককেই আবার নিজ মূল দেশে ফিরে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে দেখা যায়। আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের অনেক মুসলিম নাগরিক সে দেশে পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি না পেয়ে অথবা কর্মজীবনে ঢুকে সুবিধা করতে না পেরে এ দেশে চলে এসেছেন এমন হাজারো নজির রয়েছে। এমন অনেক অভিবাসীর কথা শোনা যায়, যারা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে চাকরি শেষে সেখানে পেনশনভোগী আবার নিজ মূল দেশে এসে চাকরি ও ব্যবসাবাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। এটা অনেকটা গাছের আগা ও গোড়া উভয়টি খাওয়ার মতো বিষয়।
আমাদের নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫১-তে দ্বৈত নাগরিকত্ব বারিত হলেও বাংলাদেশ নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধান) আদেশ, ১৯৭২-এর বিধান অনুযায়ী ইউরোপ অথবা উত্তর আমেরিকা অথবা গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্ধারিত অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের নাগরিককে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিতে পারেন সরকার। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী বিদেশী নাগরিকত্ব বহাল রেখে সংসদ সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে বা অপরাপর সাংবিধানিক পদধারী হওয়ার ক্ষেত্রে ভাবাগতভাবে বিধিনিষেধ সাংবিধানিক পদধারীদের অনুরূপ হওয়া সত্ত্বেও অনেকে বিষয়টিকে উপেক্ষা করে দেশের সর্বোচ্চ আইনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনপূর্বক গোটা জাতির সঙ্গে উপহাস করছেন।
নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫১-তে অভিবাসন বা অভিবাসীর কোনো সংজ্ঞা দেয়া হয়নি। ওই আইনের ৬ ধারায় অভিবাসনের মাধ্যমে নাগরিকত্বের কথা বলা হয়েছে। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে- সরকার কোনো ব্যক্তিকে এ আইনের অধীন নিবেসী সনদ গ্রহণ সাপেক্ষে বাংলাদেশের অভিবাসী নাগরিক হিসেবে নিবন্ধিত করতে পারেন যদি ওই ব্যক্তি এ আইন কার্যকর হওয়ার পর এবং ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারির পূর্বে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে পাক-ভারত উপমহাদেশের কোনো অঞ্চল হতে বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে প্রবজন করে থাকেন।
সরকার কোনো সাধারণ অথবা বিশেষ আদেশে যেকোনো ব্যক্তি অথবা ব্যক্তি শ্রেণীকে এ উপধারার অধীন আবশ্যক নিবেসী সনদ গ্রহণ হতে অব্যাহতি প্রদান করতে পারেন।
উপরিউক্ত উপধারার অধীন প্রদত্ত নিবন্ধনে নিবন্ধিত ব্যক্তি ব্যতীত তার স্ত্রী যদি থেকে থাকে এবং তার সাথে তার বিবাহবিচ্ছেদ যদি না হয়ে থাকে এবং তার উপর সম্পূর্ণ বা আংশিক নির্ভরশীলের নাবালক সন্তান অন্তর্ভুক্ত হবে।
নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫১-এর ৯ ধারায় বলা হয়েছে- সরকার যেকোনো ব্যক্তি যাকে দেশ্যকরণ আইন, ১৯২৬-এর অধীন দেশ্যকরণ সনদ মঞ্জুর করা হয়েছে তার এ প্রেক্ষিতে আবেদন করা সাপেক্ষে তাকে দেশ্যকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিবন্ধিত করতে পারেন।
কোনো ব্যক্তি দেশ্যকরণ সনদ গ্রহণ না করা সত্তে¡ও সরকার তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিবন্ধিত করতে পারেন। দেশ্যকরণ আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী সরকার যেকোনো ব্যক্তিকে দেশ্যকরণ সনদ মঞ্জুর করতে পারেন যদি তিনি এ উদ্দেশ্যে দাখিলি আবেদনের মাধ্যমে সরকারকে সন্তুষ্ট করেন যে- (ক) তিনি নাবালক নন; (খ) তিনি বাংলাদেশ অথবা অন্য কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক নন যে রাষ্ট্রের দেশ্যকরণের মাধ্যমে নাগরিক হওয়া বাংলাদেশের একজন নাগরিকের জন্য আইন দ্বারা বারিত; (গ) তিনি আবেদন দাখিলের দিন থেকে অব্যবহিত পূর্ববর্তী বারো মাস একাদিক্রমে বাংলাদেশে বসবাস করেছেন এবং উক্ত বারো মাস অব্যবহিত পূর্ববর্তী সাত বছরের মধ্যে সর্বসাকুল্যে অন্যূন চার বছর বাংলাদেশে বসবাস করেছেন; (ঘ) তিনি ভালো চরিত্রের অধিকারী; (ঙ) তার বাংলায় পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে ও (চ) আবেদন মঞ্জুর হলে তিনি বাংলাদেশে বসবাস অথবা প্রবেশ অথবা বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে অবস্থান করতে ইচ্ছুক।
তবে শর্ত থাকে যে, দফা (গ) ও (চ) এ বর্ণিত কোনো কিছু একজন মহিলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না যিনি বিবাহ পূর্ববর্তী বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিক নন এমন ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এবং যার স্বামী মৃত্যুবরণ করেছেন অথবা যার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে।
নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫১-এর ১৪ ধারায় দ্বৈত নাগরিকত্ব অথবা জাতীয়তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫১-এর ১৪(১) ধারায় বলা হয়েছে- এই ধারার বিধানাবলি সাপেক্ষে যদি কোনো ব্যক্তি এ আইনের বিধানাবলির অধীন বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন এবং একই সময়ে অন্য কোনো দেশের নাগরিক বা অধিবাসী হয়ে থাকেন, তিনি যদি না ওই দেশের আইন অনুযায়ী তার নাগরিক অথবা অধিবাসী মর্যাদা পরিত্যাগ করে ঘোষণা প্রদান না করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া হতে বিরত হবেন।
উপধারা (১) এ বর্ণিত কোনো কিছুই যার বয়স ২১ বছর অতিক্রম করেনি তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
উপধারা (১) এ বর্ণিত কোনো কিছুই যে কোনো ব্যক্তি যিনি যুক্ত রাষ্ট্রের অধিবাসী যতদূর পর্যন্ত তার ওই রাষ্ট্রের অধিবাসী হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫১-এর ১৪ ধারায় বর্ণিত দ্বৈত নাগরিকত্ব বারিত সংক্রান্ত বিধানটি বাংলাদেশ নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধান) আদেশ, ১৯৭২ ২(বি) (২) এর বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। উক্ত আইনে ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে সামরিক শাসন বহাল থাকাবস্থায় অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধনী আনয়নপূর্বক ২(বি) ধারা সন্নিবেশিত করে দফা (২) এ বলা হয় উক্ত আইনের ২ ধারায় এবং বর্তমানে বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন ইউরোপ অথবা উত্তর আমেরিকা অথবা সরকার কর্তৃক গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উল্লিখিত অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের নাগরিককে সরকার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করতে পারেন।
অভিবাসী আইন, ১৯৮২-তে অভিবাসী ও অভিবাসনের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। উক্ত আইন অনুযায়ী অভিবাসী অর্থ যেকোনো ব্যক্তি যিনি স্বদেশ ত্যাগ করেন অথবা যাকে স্বদেশ ত্যাগে সাহায্য করা হয় অথবা স্বদেশ ত্যাগ করেছেন এবং তার ওপর নির্ভরশীল যে কেউ এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। অপর দিকে অভিবাসন অর্থ কোনো ব্যক্তির মজুরির জন্য কাজের উদ্দেশ্য অথবা ব্যবসা ও পেশার অভিপ্রায়ে অথবা বাংলাদেশবহির্ভূত কোনো দেশে ফেরত যাওয়ার উদ্দেশ্যে নৌ, বিমান বা স্থল পথে বাংলাদেশ ত্যাগ।
নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫১-এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে- সরকার তার বরাবরে বিস্তারিত বিবরণ সংবলিত নির্ধারিত পদ্ধতিতে দাখিলি আবেদন সাপেক্ষে কোনো ব্যক্তিকে নিবেসী সনদ মঞ্জুর করতে পারেন যার বিষয়ে সরকার এই মর্মে সন্তুষ্ট যে, তিনি আবেদন দাখিলের অব্যবহিত পূর্বে বাংলাদেশে এক বছরের অধিককাল বসবাস করেছেন এবং সেখানে নিবেসী অর্জন করেছেন।
যেসব বিধানাবলির ভিত্তিতে নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫১ অনুযায়ী একজন ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তিনি অথবা তার পিতা-মাতা অথবা প্রপিতা-মাতা এখন বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তিনি ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ আগস্টের পর বাংলাদেশ বহিস্থ কোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন না। অনুরূপভাবে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধান) আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন যদি তিনি অথবা তার পিতা অথবা পিতামহ এখন বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এমন অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসী ছিলেন এবং এখনো উক্তরূপ অধিবাসী আছেন।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং তার বয়স অবশ্যই ২৫ বছর পূর্ণ হতে হবে। এ ছাড়া যেসব অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তিনি কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে অথবা বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা অথবা স্বীকার করলে তিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। সাংবিধানিক অন্য কিছু পদ যেমন- রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা এর ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের জন্য বর্ণিত উপরিউক্ত যোগ্যতা ও অযোগ্যতা একান্তভাবে অপরিহার্য।
আমাদের সাংবিধানিক পদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান পদে অসাংবিধানিকভাবে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন এমন একজন ব্যক্তির ব্যাপারে শোনা যায় তিনি তার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের বিষয়টি গোপন রেখেই উক্ত পদে আসীন হয়েছিলেন। তাছাড়া বর্তমানে সংসদ সদস্য এবং অন্যান্য সাংবিধানিক পদে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব বহাল রেখে অনৈতিকভাবে পদের মোহে সংশয়হীনভাবে সমগ্র জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে পদটিকে আঁকড়ে ধরে আছেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব বিষয়ক অযোগ্যতার বিষয়টি বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক।
যেহেতু, দ্বৈত নাগরিকত্ব বহাল থাকাবস্থায় স্বদেশে অবস্থান না করলে ভোটাধিকার প্রয়োগ আইনানুগ সেহেতু, বিশেষ উদ্দেশ্যে সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সৃষ্ট দ্বৈত নাগরিকত্বধারী ব্যক্তিকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন সাংবিধানিক পদ এবং যেকোনো ধরনের সামরিক ও বেসামরিক পদে যোগ্য করা যুক্তিযুক্ত কি না তা বিবেচনার দাবি রাখে। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের কারণে বিষয়টি আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
সংসদ সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্বকে অযোগ্যতা গণ্যে সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৬৬ এর দফা (২) এর উপদফা (গ) এ বর্ণিত বিধান সম্পর্কে পূর্বে আলোকপাত করা হলেও আলোচনার পরিপূর্ণতায় এতদবিষয়ে আনীত সর্বশেষ সংশোধনীসমেত পুনঃব্যক্ত অত্যাবশ্যক।
সংশোধনীতে উপদফা (গ) এর হানি না ঘটিয়ে তা পূর্বেকার মতো বহাল থাকায় এর অভিন্ন রূপ অক্ষুণ্ণ রয়েছে যেমন- কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দ্বৈত নাগরিকত্ব বিষয়ে দফা (২ক) সন্নিবেশনের মাধ্যমে বলা হয়- এ অনুচ্ছেদের দফা (২) এর উপদফা (গ) এ যা কিছুই থাকুক কেন, কোনো ব্যক্তি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে এবং পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তি- (ক) দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে, বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করলে; কিংবা (খ) অন্য ক্ষেত্রে, পুনরায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে- এ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে তিনি বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন বলে গণ্য হবেন না।
পঞ্চদশ সংশোধনী পরবর্তী বাংলাদেশের সাংবিধানিক পদধারী ব্যক্তিরা হলেন- রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ সদস্য, প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার, মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্মকমিশনের সভাপতি ও সদস্য এবং অ্যাটর্নি জেনারেল। অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যতীত উল্লিখিত সব সাংবিধানিক পদধারী শপথের অধীন। নিয়োগ পরবর্তী শপথগ্রহণ ব্যতিরেকে তারা পদে আসীন হন না।
শপথগ্রহণ করাকালীন অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি তাদেরকে বলতে হয় তারা বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করবেন।
আমাদের সংবিধানে সংসদ সদস্যদের দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণকে সুস্পষ্টরূপে অযোগ্যতা বলা হলেও অন্যান্য সাংবিধানিক পদধারীর ক্ষেত্রে পদবি উল্লেখপূর্বক অযোগ্যতার বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে, দ্বৈত নাগরিকত্ব বিষয়ক অযোগ্যতাটি শুধু সংসদ সদস্য ও সংসদ সদস্য হতে উদ্ভূত পদ যথা প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী প্রভৃতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ বিষয়ে সাংবিধানিক পদধারীদের স্বপঠিত শপথ অবলোকনে প্রতীয়মান হয় শপথগ্রহণ করাকালীন তাদের উচ্চারিত উক্তি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ কোনোভাবেই বিভাজনের দায়ে আবদ্ধ হতে পারে না। এরূপ একজন সাংবিধানিক পদধারীর অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ শুধু নিজ দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যে দেশের সাংবিধানিক পদে তিনি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আসীন। একজন সাংবিধানিক পদধারী দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের মাধ্যমে দুটি দেশের নাগরিক হলে তিনি তার স্বপঠিত শপথ বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণের আবশ্যকতা লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হন। এরূপ অভিযোগ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সন্নিবেশিত অনুচ্ছেদ নং ৭ক(১)(খ) কে আকৃষ্ট করে। সন্নিবেশিত অনুচ্ছেদটিতে বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় এ সংবিধান বা এর কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করলে কিংবা তা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে তার এ কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবেন। প্রণিধানযোগ্য যে, সংবিধানের যেকোনো নির্দেশনা হতে বিচ্যুত হলে তা সংবিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করে। তাছাড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ এর দফা (১) এ উল্লেখ রয়েছে সংবিধান ও আইন মেনে চলা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। এমতাবস্থায়, দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ বা বহালে রুদ্ধতার ব্যাপ্তি সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বা শতভাগ হলে অপর সাংবিধানিক পদধারীদের ক্ষেত্রে আংশিক বা শতভাগের নিম্নে এমন দাবি বা যুক্তি উপস্থাপনের অবকাশ কোথায়?