দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি

নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের টানাপড়েনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি। এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামি ৩০শে নভেম্বর, তা বাছাই হবে ১লা থেকে ৪ঠা ডিসেম্বর এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ই ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ই ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ই ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ই ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৫ই জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। এবার ৩০০ আসনেই ভোট হবে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে। এবারো রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন জেলা প্রশাসকরাই। 

২০২৪ সালের ২৯শে জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা অনুসারেই তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন পরিচালনাকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি। তফসিল ঘোষণার ভাষণে সিইসি বলেছেন, পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়। পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক আস্থা, সহনশীলতা ও সহমর্মিতা টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য আবশ্যকীয় নিয়ামক।

বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে সিইসি আরও বলেছেন, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য কাঙ্ক্ষিত অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন প্রশ্নে, বিশেষত নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির প্রশ্নে, দীর্ঘসময় ধরে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বে মতভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বহুদলীয় রাজনীতিতে মতাদর্শগত বিভাজন থাকতেই পারে। কিন্তু মতভেদ থেকে সংঘাত ও সহিংসতা হলে তা থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মতৈক্য ও সমাধান প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সকল রাজনৈতিক দলকে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো সংঘাত ও সহিংসতা পরিহার করে সদয় হয়ে সমাধান অন্বেষণ করতে। জনগণকে অনুরোধ করবো সকল উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে এসে অবাধে মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে সকল দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সর্বদা স্বাগত জানাবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা হচ্ছেন ডিসিরাই: ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য এবার অন্তত ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকবেন। যার মধ্যে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগরের বিভাগীয় কমিশনারও রয়েছেন। এ ছাড়া ৬৪টি জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। তাছাড়া বাংলাদেশের ৪৯৫ জন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়াও মহানগর, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা এবং যে সমস্ত নির্বাচনী এলাকাগুলো একাধিক আসনে বিভক্ত হয়েছে, সেক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। যাদের মধ্যে থানা নির্বাচন অফিসার, উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার ১৪ জন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ৮ জন, জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিটি করপোরেশন) ১১ জন, ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার ৫ জন, সহকারী কমিশনার ভূমি ২ জন এবং সার্কেল অফিসার ১ জন। জেলা নির্বাচন অফিসাররা নির্বাচনের সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। যদিও ইসি’র ডাকা সংলাপে অংশগ্রহণ করা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনেরা জাতীয় নির্বাচনে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইসির রোডম্যাপেও রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা যতদূর সম্ভব ইসি’র কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগের উল্লেখ রয়েছে।

ভোটের কর্মযজ্ঞ: ৩০০ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচনে এবার ভোট দেবেন ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮৫২ জন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। সে হিসাবে পাঁচ বছরে দেশে ভোটার বেড়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৬ জন। ছবিসহ ভোটার তালিকা চালুর পর নবম সংসদ নির্বাচনে ৮ কোটি ১০ লাখ; দশম সংসদ নির্বাচনে ৯ কোটি ১১ লাখ, একাদশ সংসদে ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটার ছিল। এদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ১০৩টি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটকেন্দ্র পাঁচ শতাংশের মতো বেড়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনের সকল মালামাল ক্রয় ও মাঠপর্যায়ে তা পাঠানোর কাজ শেষ করেছে ইসি। ব্যালট পেপার, স্ট্যাম্প প্যাড, লালগালা, মনোনয়ন ফরম, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, অমোচনীয় কালির কলম, গানি ব্যাগ, হেসিয়ান ব্যাগ (বড়), হেসিয়ান ব্যাগ (ছোট) ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লকসহ সকল পণ্য কেনা হয়ে গেছে। এখন তা নির্বাচনী এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।

মানব জমিন