- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:৫৮
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত এক বছরে বাংলাদেশে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) পাঁচ হাজার বেড়েছে। এরমধ্যে তিন হাজারেরও বেশি ব্যাংক হিসাব বেড়েছে মাত্র তিন মাসের মধ্যে।
তবে যে হারে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে, সে তুলনায় ক্ষুদ্র আমানতকারীদের আমানত বাড়েনি। এই ভারসাম্যহীনতা দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে যাওয়াকে ইঙ্গিত করে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
কোনো দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়া মানে সেখানকার ধনীরা আরো ধনী হয়। অন্য দিকে গরিবরা আরো গরিব হয়। যা অর্থনীতির জন্য অশনি সঙ্কেত বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
কোটিপতি কারা?
কোনো ব্যক্তি তার সব সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকা রাখলেন কিংবা লটারিতে এক কোটি টাকা জিতলেন, এতে কিন্তু ওই ব্যক্তিকে কোটিপতি বলা যাবে না।
অর্থনীতির দৃষ্টিকোণে যদি টাকার প্রবাহ কোটি টাকা বা এর বেশি থাকে তখন তাকে কোটিপতি বলা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর জুনে কোটি টাকার হিসাব ছিল এক লাখ আট হাজার ৪৫৭টি। যা ২০২৩ সালের জুনে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টিতে দাঁড়ায়।
অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে পাঁচ হাজার ৯৭টি। এরমধ্যে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বেড়েছে তিন হাজারের বেশি।
তবে প্রকৃত কোটিপতির সংখ্যা এই ব্যাংক হিসাবের চাইতে আরো অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পরিসংখ্যান কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করে না।
অর্থাৎ ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তি নয়। এটি শুধুমাত্র ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত অর্থের হিসাব।
কিন্তু এমন অনেক কোটিপতি রয়েছেন যাদের ব্যাংকে হয়তো জমানো অর্থ নেই কিন্তু দেশে ও দেশের বাইরে প্রচুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। যার পরিমাণ কোটি টাকারও বেশি।
আবার ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও প্রতিষ্ঠান বা একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারেন। আবার একজনের একাধিক কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব থাকতে পারে।
সে হিসেবে দেশে এখন কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা কত। সে বিষয়ে ব্যাংকের এই প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট কোনো চিত্র পাওয়া যায় না। এ নিয়ে কোনো পরিসংখ্যানও নেই।
কোটিপতি হিসাবধারীদের বেশিরভাগই হয় ঋণখেলাপি, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, নাহলে বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ লুটেরা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিতে বলা আছে রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। যেখানে কোনো ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে পারবে না। অর্থের মালিক হতে হলে তাকে সেটা কায়িক বা বুদ্ধির শ্রমে উপার্জন করে নিতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশে যেভাবে গুটিকয়েক মানুষ এমন দ্রুত কোটি টাকার হিসেব খুলে বসেছেন, তাতে তাদের অর্থের উৎস বা উপার্জনের উপায় নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অরণি বারাকাত।
তার মতে, এসব কোটিপতি হিসাবধারীদের বেশিরভাগই হয় ঋণখেলাপি, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, নাহলে বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ লুটেরা।
যেমন: ব্যাংক থেকে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা তুলে তারা পরিশোধ করছে না, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ চুরি করছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করছে, ঠিকাদাররা এক টাকা পণ্যের খরচ ১০০ টাকা দেখিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশে অবৈধভাবে উপার্জিত কোটিপতিদের অধিকাংশই দুর্নীতির টাকা ব্যাংকে রাখেন না বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান।
তার মতে, অবৈধভাবে অর্জিত টাকা হয় বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়, না হলে সরকারকে না জানিয়ে নামে বেনামে সম্পদ কেনা হয়।
কেননা ব্যাংকে টাকা রাখলে এর কর ও টাকার উৎসের প্রমাণ দিতে হয়। তাই দেখা যায় অবৈধভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকার বেশিরভাগ প্রতি বছর দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
পাচার না হলে কোটিপতির সংখ্যা আরো বাড়ত বলে তার ধারণা।
কোটিপতি বেড়ে যাওয়া কী ইঙ্গিত দেয়?
কোটিপতির সংখ্যা বাড়া সমাজের জন্য ইতিবাচক কিনা সেটা দু’টি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অরণি বারাকাত।
প্রথমত, এখানে কোটি টাকার প্রকৃত মূল্য কতো অর্থাৎ এক কোটি টাকার ক্রয়ক্ষমতা কতো।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আগে লাখপতি মানেই বিশাল কিছু ছিল। এখন লাখ টাকায় কিছুই হয় না। তেমনটি কোটিপতি বাড়ার সাথে সাথে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যদি অর্থের মূল্য কমে যায়, তাহলে এই কোটিপতি বাড়লে অর্থনীতিতে কোনো লাভ নেই।’
দ্বিতীয়ত, এই কোটি টাকার ব্যাংক হিসেবের উৎস কী। অর্থাৎ কোন উৎস থেকে এই পরিমাণ আয় হয়েছে।
মিসেস বারাকাত জানান, বাংলাদেশের যেসব মানুষ কোটি টাকার হিসাব খুলছে। এই টাকা কি তারা উপার্জন করেছেন নাকি অবৈধভাবে অর্জন করেছে সেটার ওপর অর্থনীতির লাভ ক্ষতি নির্ভর করে।
যদি কারো বৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ শিল্পে বিনিয়োগ হতো তাহলে গরিব মানুষদের কর্মসংস্থান হতো এবং সেই অর্থের সুফল সব স্তরে পৌঁছাত।
কিন্তু অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীরা কর দেয় না, ঋণ শোধ করে না, দুর্নীতি করে অর্জিত সম্পদের হিসাব দেয় না, সিন্ডিকেট করে গরিব মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেয়, ঠিকাদারি করে লুটপাট চালায়।
এই অর্থে নিম্ন স্তরের মানুষের কোন লাভ তো হয়ই না বরং তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলেই অরণি বারাকাতের বক্তব্য।
অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ে
বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে একদিকে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি সঙ্কটকে পুঁজি করে বাড়ছে কোটিপতিও।
এই বিপুল পরিমাণ অর্থের বড় অংশই নির্দিষ্ট কিছু মানুষের পকেটে যাচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশে আয়ের বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। যা অর্থনীতির জন্য অশনি সঙ্কেত বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এ নিয়ে অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই কোটি টাকার হিসাবে দেশে আয় ও সম্পদের বৈষম্য প্রতিফলিত হয়েছে।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা জরিপেও বৈষম্যের এই চিত্র স্পষ্ট।
ওই হিসেবের বরাত দিয়ে রহমান বলেন, ২০১৬ সালে বৈষম্যের হার ছিল দশমিক ৪৬, এবং ২০২২ সালে হয়েছে দশমিক ৪৯। অর্থাৎ আয় ও সম্পদের বৈষম্য বেড়েছে। এই সংখ্যা যতো ১-এর দিকে যাবে, বৈষম্য ততো বাড়বে।
এদিকে সমাজে আয়ের বৈষম্য যেমন বাড়ছে তেমনি ভোগ, ব্যয়, সম্পদ এবং সুযোগের বৈষম্যও বাড়ছে। যার প্রতিফলন বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে।
ব্যাংকগুলোয় কোটিপতির হিসাব বাড়লেও ক্ষুদ্র আমানতকারীদের আমানতের পরিমাণ কমে গিয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যেও ছোট প্রতিষ্ঠান তেমন বাড়েনি।
কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন না হওয়ায় এবং ভোগ্যপণ্যের দাম ক্রমেই বাড়তে থাকায় ক্ষুদ্র আমানতকারীরা তাদের আয়ের সাথে ব্যয় সমন্বয় করতে পারছেন না।
জীবনযাত্রার বাড়তি ব্যয় মেটাতে গিয়ে নিম্ন-মধ্য ও স্থির আয়ের মানুষ নতুন করে আর সঞ্চয় করতে পারছেন না।
উল্টে তারা ব্যাংক থেকে জমানো টাকা তুলে নিচ্ছেন, সঞ্চয় ভেঙে খরচ করছেন। সঞ্চয়পত্র বিক্রিও অনেক কমে গিয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দিন দিন বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা কতটা প্রকট রূপ নিয়েছে, তা স্বাধীনতার পরবর্তী থেকে আজ পর্যন্ত দেশের কোটিপতিদের পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা যায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য থেকে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচজন।
তিন বছর পর ১৯৭৫ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ জনে। পাঁচ বছর পর ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে কোটিপতি ছিলেন ৯৮ জন।
১০ বছর পর ১৯৯০ সালে এ সংখ্যা ৯৪৩ জনে উন্নীত হয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশে কোটিপতির সংখ্যা হয় পাঁচ হাজার ১৬২ জনে।
২০০৮ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১৬৩ জনে। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধিতে বড় ধরনের একটা লাফ দেখা যায়।
২০১৯ সালে দেশে কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৩ হাজার ৮৩৯ জনে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯০ জন।
২০২১ সালে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৯৭৬ জন।
এভাবে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ নয় হাজার ৯৪৬টি।
কোটিপতি হিসাবের এই বৃদ্ধিকে সমাজে আয় বৈষম্যের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
একইসাথে ২০১৮ সালে সম্পদশালী বৃদ্ধির হার ও ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রক্ষেপণ ধরে ওয়েলথ-এক্স’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তিন কোটি ডলারের বেশি সম্পদের মালিকদের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হারে বাড়ছে।
অর্থনৈতিক বৈষম্য খুব প্রকট হলে পুষ্টিহীনতা দেখা দেবে এবং পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে সামাজিক অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
রহমান বলেন, ‘এখন এলসি খুলতে বিধিনিষেধের মধ্যেও ধনীদের বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে দেখা যাচ্ছে, অন্যদিকে গরিব মানুষ মূল্যস্ফীতির কারণে খেয়ে পরে চলতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘এ থেকে স্পষ্ট যে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য বাড়ছে। ব্যাংকের এই প্রতিবেদন এর আংশিক চিত্র মাত্র।’
একইসাথে ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব বেড়ে যাওয়ার পেছনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সীমিত সুযোগের বিষয়টি প্রতিফলিত হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
রহমান বলেন, ‘বিনিয়োগের সুযোগ কমে গেলেই মানুষ ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখেন। তারা আর উদ্যোক্তা হয়ে এই টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ পান না, কিংবা নিরাপদ ভাবেন না। ব্যাংকে টাকা ফেলে রাখা লোকসানের সামিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘কেননা বর্তমান মূল্যস্ফীতি যদি হয় প্রায় ১০ শতাংশের মতো তাহলে ব্যাংকের সুদের হারের সাথে তুলনা করলে এই টাকার প্রকৃত মূল্য ব্যাংকে রাখলে আরো পড়ে যাচ্ছে।’
কোটিপতি বেড়েছে, করদাতা বাড়েনি
অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে নির্দিষ্ট কিছু মানুষেরই আয় বাড়লেও করদাতা বাড়ার কোনো লক্ষণ কিন্তু দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটির বেশি। কিন্তু গত বছরের হিসাব অনুযায়ী দেশে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) রয়েছে ৭৩ লাখ। আর আয়কর দেন মাত্র ২৩ লাখ মানুষ।
বাংলাদেশের কর কাঠামো ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে প্রত্যক্ষ করের চাইতে পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা এই আয় বৈষম্যের বড় কারণ বলে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ কর অর্থাৎ দেশের নাগরিকের সম্পদ ও আয়ের উপর নিদিষ্ট হারে আদায় করা সরকারি রাজস্বের পরিমাণ তিন ভাগের এক ভাগ। এবং পরোক্ষ কর অর্থাৎ পণ্য ও সেবার উপর যে কর আরোপ করা হয় তা তিন ভাগের দুই ভাগ। যা নাকি বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় উল্টো।’
রহমান বলেছেন, ‘এই অপ্রত্যক্ষ কর বেশি দেয় সাধারণ ভোক্তা এবং প্রত্যক্ষ কর ধনীদের থেকে বেশি আসে। তাই কোটিপতি বাড়লে প্রত্যক্ষ কর বাড়ার কথা থাকলেও প্রকৃত অর্থে তা বাড়ছে না। চাপটা পড়ছে অল্প আয়ের মানুষদের ওপরেই’
এদিকে সরকারি হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হলেও বৈষম্যের কারণে এর সুফল সব স্তরে পৌঁছাতে পারছে না।
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বলতে বোঝায় বছরে একজন মানুষের মোট আয়কে। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাব সাধারণত কৃষি, শিল্প, সেবা এবং প্রবাসী আয় এই চারটি খাত থেকে হিসাব করে করা হয়।
এই জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় যা তিন লাখ ৩৩ হাজার টাকার মতো।
এ হিসাবে গড়ে একজন নাগরিক প্রতি মাসে ২৮ হাজার টাকা আয় করেন।
কিন্তু এই অর্থের সুষম বণ্টন তো হয়ই না, বরং তা অল্পসংখ্যক কিছু মানুষের মুঠোবন্দি থাকে বলে জানান অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অরণি বারাকাত।
তিনি বলছিলেন, ‘একটি দেশে উন্নতি হলেও এর একটি ‘ট্রিকেল ডাউন এফেক্ট’ থাকে। ট্রিকেল ডাউন এফেক্ট হল এক স্তূপ পাথরের ওপর থেকে পানি ঢাললে ওপরের পাথরগুলো আগে ভিজে। এই পানি গড়িয়ে গড়িয়ে নিচ পর্যন্তও নামে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে এমনটা হচ্ছে না। অর্থাৎ নিচের তলার গরিবদের কাছে পৌঁছচ্ছে না। সব টাকাই ওপরে জমে আছে। এতে সামগ্রিক অর্থনীতিতে কোনো লাভ হয় না।’
সূত্র : বিবিসি