কারও মৃত্যুর পরে তাকে নিয়ে শোকগাথা লেখা অনেক কঠিন কাজ। কিছুই গুছিয়ে লেখা যায় না, যদি তিনি সবচেয়ে কাছের মানুষ হন আর জড়িয়ে থাকে তার সঙ্গে হাজারো দিনের স্মৃতি, তাহলে তো আরও কঠিন।
দুই বছর হতে চললো আমি কলাম লিখি না নিয়মিত, যেখানে প্রতি মঙ্গলবার বাংলা ট্রিবিউন-এর জন্য লিখতাম। আশ্চর্য, সেই নির্ধারিত দিন মঙ্গলবারে আমার সম্পাদক, বাংলাদেশের আধুনিক সাংবাদিকতার প্রধান পৃষ্ঠপোষক, আমার দেখা সবচেয়ে সাহসী সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমেদের মৃত্যুতে তাকে নিয়েই লিখছি।
টেলিফোনে বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক শেরিফ আল সায়ার যখন গত রাতে শাহেদ ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটা জানালো, তা আমার কাছে আকস্মিক ছিল কিন্তু আনএক্সপেক্টেড ছিল না। কারণ, শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন শাহেদ ভাই। ২৮ আগস্ট ২০২৩, শোকের মাসেই আমাদের শোকাহত করে পরপারে চলে যান তিনি। ৮২ বছর ৯ মাস ২১ দিন বেঁচে ছিলেন তিনি এই পৃথিবীতে। জন্ম নিয়েছিলেন ১৯৪০ সালের ৭ নভেম্বর।
শাহেদ ভাইয়ের জন্মদিন, তিনি যতদিন মোটামুটি সুস্থ ছিলেন ঘটা করে পালিত হয়েছে। সম্ভবত তার ৬৭তম জন্মদিনে বিরাট এক পার্টির আয়োজন করেছিলেন তিনি ধানমন্ডি লেকের পাড়ে, ৬/এ নম্বর রোডের সুপরিচিত লাল দালানের বাড়িতে। আজকের কাগজের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান তখন দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক। সে পত্রিকার মিডিয়া পাতায় শাহেদ ভাইয়ের জন্মদিন উপলক্ষে লিখতে বললেন আমাকে।
আমি বললাম, অল্প পরিসরে আমি লিখতে পারবো না। পুরো এক পাতা লাগবে ওনাকে নিয়ে লিখতে। নাঈম ভাই বললেন, তুমি যতটুকু চাও ততটুকু দেবো। আমি শাহেদ ভাইয়ের সঙ্গে বসে তার যশোরের বাল্যকাল, লাহোর ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষা এবং সামরিক বাহিনীতে কর্মজীবন নিয়ে আলাপ করলাম; সাংবাদিকতা জীবন তো আমার দেখাই আছে মোটামুটি। আমি চেয়েছিলাম জীবদ্দশায় শাহেদ ভাইয়ের জন্য একটা শোকগাথা লিখবো এবং তার প্রতিক্রিয়া দেখবো। মৃত্যুর পরে তো আমি তাকে আমার অনুভূতি জানাতে পারবো না, এই চিন্তায়।
নাঈম ভাই দৈনিক আমাদের সময়ের পুরো একটি পাতাজুড়ে আমার লেখাটা ছেপে ছিলেন। শিরোনাম ছিল- ‘অ্যান অবিচুয়ারি ইন হিজ লাইফটাইম’। বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায় কারও জীবদ্দশায় তার মৃত্যুতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন কিংবা শোকগাথা।
সেই রাতে দেখা হয়েছিল শাহেদ ভাইয়ের সঙ্গে তার জন্মদিনের পার্টিতে। তার কনিষ্ঠ পুত্র কাজী ইনাম আহমেদ খুব প্রশংসা করেছেন লেখাটির, বিশেষ করে জীবদ্দশায় এমন শিরোনাম দিয়ে লেখার। শাহেদ ভাইয়ের মুখে হাসি ছিল, অনেকেই লেখার প্রসঙ্গ তুলেছেন সেদিনের পার্টিতে।
সেই লেখায় সম্পাদক এবং প্রকাশক কাজী শাহেদ আহমেদ সম্পর্কে আমার অনুভূতি, মূল্যায়ন তার মৃত্যুর আগেই তাকে জানিয়েছিলাম। লিখেছিলাম তার প্রশংসার পাশাপাশি কিছু পাগলামির কথা। তার এই পাগলামি প্রসঙ্গে তিনি আমাকে বলেছিলেন, সক্রেটিসকেও লোকে পাগল বলতো। আপনারা কেউ হয়তো বলবেন কত বড় পাগল হলে নিজেকে নিজে সক্রেটিসের সঙ্গে তুলনা করে!
শাহেদ ভাই সত্যিই একজন দার্শনিক ছিলেন। সাংবাদিকতার থেকে তিনি জীবন দর্শন নিয়ে বেশি কথা বলতেন। সক্রেটিসের কালে তার শিষ্যরা তাকে যেমন নমস্য ভাবতো, আমি নিশ্চিত করে বলছি, কাজী শাহেদ আহমেদকে সম্পাদক হিসেবে আমরা যারা কাছ থেকে দেখেছি, প্রতিদিন সকালে তার সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে আলাপ করেছি, আমাদের কাছে তিনি তেমনি ছিলেন।
সক্রেটিস তার দার্শনিক কথোপকথনের জন্য পরিচিত ছিলেন এবং এথেন্সের আগোরাতে তার ছাত্র এবং অন্যদের সঙ্গে বিতর্ক করতেন। শাহেদ ভাইয়ের সঙ্গেও আমাদের সেরকম কথোপকথন হতো প্রতিদিন সকালে আজকের কাগজের গোলটেবিল বৈঠকে। অনেকে তার সঙ্গে বিতর্ক করার সাহস পেতো না, কিন্তু আমি করতাম। মুখের ওপরে দ্বিমত করে কথা বলতাম যদি প্রয়োজন হতো, সম্ভবত স্বভাবটা আমি আমার আব্বা থেকে পেয়েছিলাম। তাতে শাহেদ ভাই কোনোদিন রাগান্বিত হননি, বরং আমার মনে হতো আমি যে তাকে চ্যালেঞ্জ করতাম সেটাই তিনি উপভোগ করতেন। আমাকে তিনি সে কারণেই ভালোবাসতেন। এত ভালোবাসতেন যে আমি পত্রিকা ছেড়ে টেলিভিশনে যোগ দিলেও তিনি আমাকে ছাড়েননি। একসঙ্গে চ্যানেল আই এবং আজকের কাগজের কূটনৈতিক রিপোর্টার থাকার সুযোগ দিয়েছিলেন, যেটা বাংলাদেশের মিডিয়ায় বিরল।
আমাকে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জ্বালাতন করছিলেন আজকের কাগজে, তার রুমে গিয়ে তেল মেরে আসি না বলে। সেটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে আমি শাহেদ ভাইয়ের কাছে একটা রেজিগনেশন লেটার দিলাম এই বলে, ঘাটে ঘাটে তেল মেরে আপনার পত্রিকার কাজ করতে পারবো না। আর যদি তেল মারা আপনি পছন্দ করেন সেটা বলেন, আপনাকেই মারবো। তিনি বললেন, কাল সকালে মিটিংয়ে আসো, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এটা গ্রহণ করছি না।
সকালে মিটিংয়ে এসে তিনি ঘোষণা করলেন, আমার অফিসে তেল মারামারি চলবে না। তেল যদি কাউকে মারতে হয় সেটা শুধু আমাকে মারতে হবে। তেল প্রত্যাশী পার্টি থেমে গিয়েছিল। একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে শাহেদ ভাই খুব ভালো করে জানতেন কীভাবে অফিসের পরিবেশ ঠিক রাখতে হয়।
আমি জীবনের অনেক দর্শন তার থেকে নিয়েছি। মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা তার থেকে শিখেছি। নির্ভয় নিঃসংকোচে বলে যাওয়া, লিখে যাওয়া তার আশকারায় আমি রপ্ত করেছি। আমার কোনও একটা লেখা তিনি অপ্রকাশিত রাখেননি, বলেননি এটি প্রকাশ করলে আমার ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক ক্ষতি হবে। জীবনে আমি যত সাহসী লেখা লিখেছি তার সিংহভাগ তার সম্পাদনায় লিখতে পেরেছি।
লেখা ভালো হলে ডেকে নিয়ে প্রশংসা করা, সম্মান জানানোর কায়দা শাহেদ ভাইয়ের থেকে বেশি এ দেশের কোনও সম্পাদক জানেন বলে আমার মনে হয় না। একটা উদাহরণ দেই। শেখ হাসিনা তখন প্রথমবার ক্ষমতায়। এক বক্তৃতায় তিনি বললেন, আমরা চোর ডাকাত দুষ্কৃতকারীদের জেলে দেই আর আদালত এবং উকিলরা মিলে তাদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেন। তার বিরুদ্ধে মামলা করলেন আইনজীবীরা, আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে। (ওই ঘটনার কারণে আদালত শেখ হাসিনাকে রং হেডেড আখ্যা দিয়েছিল।)
আমি আজকের কাগজে লিখেছিলাম ‘যেদিন দুনিয়ায় উকিলের জন্ম হলো’, যেখানে উকিলদের অপকর্ম আর দুনিয়ার সমস্ত আদালতের ঐতিহাসিক অনাচারের কথা ছিল।
শাহেদ ভাই পরদিন সকালের মিটিংয়ে লেখার প্রসঙ্গ তুললেন। তিনিসহ সবাই দাঁড়িয়ে আমাকে সম্মান জানালেন। এমন রীতি বাংলাদেশের সংবাদপত্র অফিসে অচল।
অবশ্য আমার সেই লেখার জন্য তাকে এবং আমাকে আদালতে দাঁড়াতে হয়েছিল। ঢাকার আদালতে এক উকিল মামলা করেছিলেন, তিনি নাকি বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিল আমার লেখা পড়ে। তার দেখাদেখি প্রত্যেক জেলায় আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হলো আদালতে উকিলদের দ্বারা। আইনজীবীরা সমিতির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে আমাদের পক্ষে কোনও উকিল দাঁড়াবেন না।
পরে হাইকোর্টে কোয়াশমেন্ট করে আমাদের হয়রানি থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন আমাদের পক্ষের উকিল প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, তিনি তখন আমাদের পত্রিকার লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি শাহেদ ভাইয়ের স্ত্রী মিসেস আমিনা আহমেদের আত্মীয় ছিলেন।
শাহেদ ভাই আমাকে নিঃসন্দেহে সাহসী সাংবাদিক জানতেন। তার জন্যই তিনি আমাকে আফগান যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ কাভার করার জন্য নির্বাচিত করেছিলেন। আমি কতটা সাহসী ছিলাম বা আছি সেটা অন্যরা বলবে, কিন্তু শাহেদ ভাই কতটা সাহসী ছিলেন সেটা হয়তো অনেকে জানেন না।
শেখ হাসিনার আমলে আরেকটা ঘটনা ঘটলো। সরেজমিন ভোলা সফর করে আমি লিখলাম, ‘ভোলার জনগণ অসহায় প্রশাসনের কাছে, প্রশাসন অসহায় মন্ত্রীর কাছে’। বলার অপেক্ষা রাখে না ওই মন্ত্রী ছিলেন তখনকার মন্ত্রিসভার জাঁদরেল সদস্য তোফায়েল আহমেদ, যিনি একইসঙ্গে শিল্প এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছিলেন। আমি ভোলা নিয়ে লিখেছিলাম কারণ তোফায়েল ভাইয়ের লোকজনের দ্বারা বিএনপি, তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন সেখানে নিগৃহীত হচ্ছিল এবং দেলোয়ার নামের ছাত্রদলের একজন সভাপতিকে হত্যা করা হয়েছিল এর কিছু দিন আগে।
পরবর্তী কাহিনি অনেক দীর্ঘ। তোফায়েল ভাইয়ের বাহিনী সেদিনের আজকের কাগজ ভোলায় প্রবেশ করতে দেয়নি। তিনি সকালবেলায় শাহেদ ভাইকে ফোন করে হুমকি, অকথ্য গালাগালি করেছেন। শাহেদ ভাই আমার সেই রিপোর্টের সত্যতা তদন্ত করার জন্য সকালবেলায় আমাদের আরেক রিপোর্টারকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ভোলায়।
সহকর্মীদের ঈর্ষা এবং শত্রুতার শিকার আমার হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। দুদিন ধরে আমি নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়েছিলাম বলতে পারেন। তিন দিন পরে আমাদের সেই সাংবাদিক সহকর্মী ফেরত এসে শাহেদ ভাইকে রিপোর্ট দিলেন, আনিস ভাই যা লিখেছেন সবই সত্য, বরং তিনি কম লিখেছেন। এর থেকে বেশি দুর্বৃত্তায়ন চলছে এখন ভোলায়।
আমার থেকেও বেশি খুশি হয়েছিলেন মনে হয় শাহেদ ভাই, আমার রিপোর্টের সত্যতা পেয়ে। ওই দিন বিকালেই অফিসিয়ালি চিঠি লিখেছেন তিনি বাণিজ্য এবং শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে- আনিস আলমগীরের ওই রিপোর্টের কোন বাক্য কোন শব্দ অসত্য তা সাত দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হচ্ছে আপনাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সেই চিঠি প্রাপ্তির কাগজ নিয়ে এসেছিলাম আমরা।
বুকে হাত দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে এমন সাহসী সম্পাদকের জন্ম কবে দেখেছেন আপনি আর! আমি আজকের দিনে যদি চিন্তা করি, অনেক সম্পাদক অস্থির হয়ে যেতেন তোফায়েল আহমেদের চাপে। প্রসঙ্গক্রমে এখানে বলে রাখি, আলম রায়হান নামের একজন সিনিয়র সাংবাদিক আজকের কাগজের ওই রিপোর্ট সাপ্তাহিক সুগন্ধা কাগজ নামের একটা পত্রিকায় ছেপেছিলেন এবং তা ভোলায় ডিস্ট্রিবিউট করা হয়েছে যথাযথভাবে। আলম রায়হানকে তখনকার প্রশাসন ৬ মাসের ডিটেনশন দিয়েছিল, শারীরিক নির্যাতন করেছিল এবং যার ফলশ্রুতিতে তার পত্রিকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমার মাথার ওপর ছায়া হয়ে ছিলেন কাজী শাহেদ আহমেদ, আমাকে কেউ স্পর্শ করতে পারেনি।
তিনি শুধু আমার নয়, প্রত্যেকটা রিপোর্টার, সংবাদদাতার মাথার ওপরে ছায়া হয়েছিলেন। সেই কারণে আজকের কাগজের সাংবাদিকদের মতো এত সাহসী সাংবাদিক বাংলাদেশের কোথাও ছিল না। এত নির্ভয়ে আর কোনও পত্রিকা কোনও সংবাদ প্রকাশ করতে পারেনি। সে কারণেই যারা একদিনও আজকের কাগজে কাজী শাহেদ আহমেদের সম্পাদনাকালে কাজ করেছেন, তারা ওই পত্রিকাটিকে, ওই পত্রিকার পরিবেশকে তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বিবেচনা করে। এক-এগারোকালে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে বলে আফসোস করি।
তিনি কতটা ছায়া হয়ে ছিলেন আমাদের মাঝে আর একটা উদাহরণ দেই। সেটি ঘটেছে আমাদের প্রধান ক্রাইম রিপোর্টার আমিনুর রহমান তাজের সঙ্গে। তাজ ভাইয়ের মুখে শুনেন সেই কথা।
“২০০০ সালে সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সংবাদ লেখার অভিযোগে গ্রেফতার হলাম। তখন মানুষটার উৎকণ্ঠা দেখেছি, দেখেছি একজন রিপোর্টারকে কীভাবে আগলে রাখতে হয়। জামিনে ছাড়া পাবার পর কিছুটা স্থির হলেন। পরদিন মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে পত্রিকার প্রথম পাতায় এক বিশেষ সম্পাদকীয় লিখলেন, যার শেষ লাইনটা আমার স্পষ্ট মনে আছে– ‘যিশুর ক্রুশ যিশুকেই বহন করতে হবে’।”
তাজ ভাই যে কথাটি জানতেন না, তা হচ্ছে, ওনাকে গ্রেফতার করার পর আমাদের অফিসিয়াল নির্দেশ আসলো তাজকে রমনা থানা থেকে বের না করা পর্যন্ত থানা ঘেরাও করে রাখতে হবে তোমাদের সবাইকে। আমরা পুরো অফিসের জনবল তা-ই করেছিলাম এবং সরকার ওই দিনের মধ্যেই আদালতে তুলে তাজ ভাইকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল।
এমন কোনও সাহসী, মাথায় ছাতা হয়ে থাকার মতো সম্পাদক বাংলাদেশে আর অবশিষ্ট আছে?
শাহেদ ভাইকে নিয়ে লিখতে গেলে পাতার পর পাতা আমাকে লিখতে হবে। তারপরও শেষ হবে না তার মতো একজন সম্পাদকের গুণাবলির বর্ণনা। তারপরও শেষ হবে না তার মতো একজন মানুষের বর্ণনা, যার সঙ্গে দিনের পর দিন আলাপ করলেও আলাপ শেষ হয় না, যাকে পেয়েছিলাম অভিভাবক হিসেবে, যিনি ছায়ার মতো ছিলেন মাথার ওপরে।
তিনি আমার দেখা হয়তো শেষ সম্পাদক, যার মতো স্মার্ট, শিক্ষিত, সাহসী সম্পাদক বাংলাদেশ আর চোখে দেখবে না।
পরপারে শান্তিতে থাকুন শাহেদ ভাই। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে আপনার নাম উজ্জ্বল করে লেখা থাকবে, আপনাকে বাদ দিয়ে এই দেশের সংবাদপত্র বিকাশের ইতিহাস লেখা যাবে না। আপনার পত্রিকা সাপ্তাহিক খবরের কাগজের মাধ্যমে শানিত হয়েছে এরশাদবিরোধী আন্দোলন, আপনার আজকের কাগজের মাধ্যমে শানিত হয়েছে রাজাকারবিরোধী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মিডিয়ায় পুনর্জনম দিয়েছেন আপনি।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ইরাক ও আফগান যুদ্ধ-সংবাদ সংগ্রহের জন্য খ্যাত।