নিজের প্রতিষ্ঠিত ভবন জবরদখল হওয়ার অভিযোগ করে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা অনেক দুঃখ, কষ্ট ও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে পড়ে গেছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান জবরদখল হয়েছে। পুলিশের কাছে সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। দেশের মানুষের কাছে এর বিচারের ভার দিলাম। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকম ভবনের নিচতলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম মঈনুদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ভবনটিতে থাকা ১৬টি প্রতিষ্ঠানের ৮টিতেই তালা দেয়া হয়েছে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, এ সুন্দর বিল্ডিংটা আমরা অতিসম্প্রতি বানিয়েছি। আমরা যখন গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে ছিলাম তখন সবাই সেখানে অফিস করেছিলাম। কিন্তু যখন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে যাওয়ার পালা আসলো তখন ভাবলাম আমাদের নিজস্ব একটা বিল্ডিং করি যেখানে শান্তিতে কাজকর্ম করতে পারি।
এটাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু ৪ দিন আগে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি কিছু লোকজন এসে এটা জবরদখল করে ফেললো। তাদের কাছে আমরা বাইরের হয়ে গেলাম। তারা তাদের নিয়ম চালু করছে। আমরা বুঝতে পারলাম না কী ব্যাপার! আমরা পুলিশকে বললাম- এ রকম কাণ্ড হচ্ছে, আপনারা এসে ঠিক করে দেন। পুলিশ প্রথমে গ্রহণই করলো না, তারপর এখানে এসে ঘুরে গেল কিন্তু কোনো অসুবিধা দেখলো না।
তিনি বলেন, দখলকারীরা দরজায় তালা দিয়ে যাচ্ছে, আবার সকালে এসে খুলে দিচ্ছে। তাদের এখতিয়ার, জবরদখল এবং ব্যবহার ইত্যাদি দেখে মনে হচ্ছে এটা আমরা কোন জগতে আসলাম। এখনো সেই পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে। নিজের বাড়িতে যদি অন্য কেউ তালা মারে এবং এসে বলে, আমি এখানে বসবো, ও ওখানে বসবে- এ ধরনের ঠিক করে দেয় তখন কেমন লাগার কথা আপনারাই বলেন। তাহলে দেশে আইন-আদালত কোথায় গেল, আইন-আদালত আছে কিসের জন্য। ড. ইউনূস বলেন, তারা আইন-আদালতের কাছে যাক, প্রমাণ করুক। তারা আদালতে যেতে চায় না। আমরা জীবনে বহু দুর্যোগ দেখেছি। এমন দুর্যোগ আর কখনো দেখিনি। যে হঠাৎ করে কিছু লোক এসে বলবে যে আপনারা সরেন এটা আমাদের ঘর। সেই কথাটাই জানানোর জন্য আজকের এ সংবাদ সম্মেলন- যে আমরা দেশবাসী ও দুনিয়ার সামনে কী বলবো, আমাদের এখানে কী হয়েছে। মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে জিজ্ঞেস করি যে, এভাবে একটা দেশ চলে কী করে? যেখানে কোনো কথা ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। আমাদের বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল হচ্ছে। আমরা তো নিজের বাড়িতে নিজের ঘরেই আছি। তিনি বলেন, আমরা যতগুলো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি তার প্রধান কার্যালয় এখানে। এখানে যারা আছে তারা সারা জীবন মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে গেছে। হঠাৎ করে কী হলো যে, বাইরের কিছু লোক এসে দাবি করছে যে, আপনারা এখান থেকে যান এটা আমাদের জায়গা।
দেশবাসীর কাছে আমরা ফরিয়াদ জানাই যে, আমরা কোথায় যাবো, কী করবো? কাকে দুঃখের কথা বলবো? পুলিশ আমাদের কথা শুনছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জবরদখল তো কোনো সভ্য সমাজের বিষয় হতে পারে না। ওনাদের হাতে হয়তো কিছু বিষয় আছে, যদিও আমরা জানি না কী আছে। সেটা তো নিষ্পত্তি করতে মৌখিক আলোচনা করবে, নিষ্পত্তি না হলে আদালতে যাবে তার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করবে। আইনসঙ্গত যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে আইনসঙ্গতভাবে হবে। সে কোর্টে যাবে, মামলা করবে। এখন আমার ঘরে তালা দিয়ে চলে যাবেন এটাতো প্রক্রিয়া হয় না। আদালতে বহু মামলা তো আমাদের আছে। আরেকটা মামলা নেয়া হতো অসুবিধা কী। আমরা তো এগুলো নিয়েই আছি সব সময়। জবরদখল কারা করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা এসেছেন তারা নিজেদের গ্রামীণ ব্যাংকের লোক পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া এমন লোকও ছিলেন যারা বলেছেন তারা সামরিক বাহিনীর রিটায়ার্ড লোক এবং কনসালটেন্সি ফার্মে কাজ করেন। সব মিলিয়ে ২০-২২ জন। তাদের দখলদার বাহিনীর মতো চলাফেরা, মেজাজ। আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ব্যবসার মুনাফার টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় হয়নি। যা হয়েছে আইন মেনে হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় যাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেতে হবে, তা না হলে আমাদের কী করার আছে। আমরা দেশের মানুষের কাছে বিচারের ভার দিলাম। দেশের মানুষ আমাদের পরামর্শ দেবে। এর আগে সকাল থেকে গ্রামীণ টেলিকম ভবনের সামনে অবস্থান নেয় কতিপয় বহিরাগত। এ সময় তারা ভবনটিতে কর্মরত কর্মকর্তাদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। এদের মধ্যে বেশ কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক এবং ঝাড়ু হাতে নারী ছিলেন। ছবি তুলতে গেলে দেয়া হয় বাধা।
মানব জমিন