দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা, কঠোর হস্তে দমন করুন

logo

প্রকাশ : বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ২১:৪৬

ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও দেশ থেকে এই শক্তি নির্মূল করা যায়নি। আর তাই সুযোগ পেলেই ফ্যাসিস্টরা শক্তি প্রদর্শন করছে। উত্তরায় স্কুলে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। একই সাথে এ ঘটনায় সারা দেশের মানুষ শোকাহত। অন্য দিকে আহতদের পর্যাপ্ত সুচিকিৎসা নিশ্চিতে চলছে নিরন্তর প্রচেষ্টা। এসব নিয়ে মানুষ যখন ব্যস্ত, ঠিক তখন পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি শিক্ষার্থীদের আবেগ পুঁজি করে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত মঙ্গলবার আইন উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি উত্তরায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যান। সেখানে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্র্থীরা উপদেষ্টাদের কাছে দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। সরকারের প্রতিনিধিরা সেসব দাবি মেনেও নেন; কিন্তু তারপরও তাদের ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ঘটনাস্থলে শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করে পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনার সময় ফেনীর এক যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, দাবি মেনে নেয়ার পরও যারা আন্দোলন করেছেন তাদের বেশির ভাগ লোককে তারা চেনেন না। সবচেয়ে মারাত্মক কাণ্ড ঘটেছে সচিবালয়ে। নয়া দিগন্তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয়ে অনুপ্রবেশ করে বিক্ষোভকারীরা। তাদের সাথে যোগ দেয় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরাও। তারা সচিবালয়ের অভ্যন্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গাড়িসহ ১৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে। বিক্ষোভের নামে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা শুধু ঢাকায় হয়নি, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটেও হয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। ছাত্র-জনতাই এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার জায়গাটা একটু বেশিই। সোমবার বিমান দুর্ঘটনার দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি দাবি ওঠে- মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হোক। বিষয়টি নিয়ে সরকার সময়ক্ষেপণ করে মধ্যরাতে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত দেয়। এটি যে সরকারের দুর্বলতা তা স্বীকার করতেই হবে। এ ঘটনায় সরকার ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে। শিক্ষা সচিবকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

যখন আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেয়া হয় তখন আর আন্দোলনের যৌক্তিকতা থাকে না; কিন্তু আমরা দেখলাম ভিন্ন চিত্র। আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেয়ার পরও তারা সচিবালয়ের মতো স্পর্শকাতর স্থানে জোরপূর্বক প্রবেশ করে গাড়ি ভাঙচুর করলেন। এটি অনাকাক্সিক্ষত। আমরা মনে করি, সচিবালয়ে প্রবেশ করে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শক্তির পূর্বপরিকল্পনার অংশ। তারা ছাত্রদের আবেগকে পুঁজি করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীদের খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন কোনো শক্তির ক্রীড়নকে পরিণত না হন।

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেশের প্রধান দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ চারটি রাজনৈতিক দলের বৈঠক হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক ইতিবাচক। চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই বৈঠক কাজ দেবে আশা করা যায়। ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই। জুলাই গণহত্যার বিচার ও নির্বাচন বানচাল করতে চাইবে তারা। তাই যেকোনো অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here