দেড় ডজন ঋণখেলাপি পালিয়েছেন কানাডায়

চট্টগ্রামের বাদশা গ্রুপের কর্ণধার ইছা বাদশা ওরফে মহসিন ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পালিয়ে গেছেন কানাডায়। তাঁকে দেশে ফেরাতে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতের নির্দেশের পর তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। গত ১০ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ‘নির্দেশক্রমে অনুরোধ’ জানিয়ে একটি চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ৯ অক্টোবর হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা আরেক ঋণখেলাপি লস্করকেও কানাডা থেকে ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরুর নির্দেশ দেন আদালত। আশিকুর রহমান লস্কর সীতাকুণ্ডের মাহিন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার।

চট্টগ্রামের অন্তত দেড় ডজন শীর্ষ ঋণখেলাপি সপরিবারে কানাডায় পালিয়ে গেছেন। তাদের ফেরাতে এসব উদ্যোগকে ইতিবাচক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দুই ঋণখেলাপিকে সরকার ফেরাতে পারলে দেশের ব্যাংক খাতে মাইলফলক সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি কমে আসবে লুটপাটও।

এর আগে চলতি বছরের ৯ মে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত মহসিনকে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। আদালত জানতে পারেন, তিনি বর্তমানে কানাডায় রয়েছেন। খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য এই ব্যবসায়ীকে দেশে ফেরত আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দেন আদালত।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, আদালতের এমন আদেশ ব্যাংক খাতের জন্য ইতিবাচক। রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগও ইতিবাচক। তবে সরকারের উদ্যোগ কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা যারা টাকা পাচার করে বিদেশে গেছেন, তারা সবাই পরিবার-পরিজন নিয়ে অভিবাসন নিয়েছেন। নাগরিকত্ব নিয়ে পাচারকৃত টাকা ওই দেশে বৈধ করেছেন। ওই দেশের সরকার কেন তাদের নাগরিককে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে? অর্থঋণ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ঋণখেলাপিদের এ চক্র ভাঙতে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে সরকারও উদ্যোগ নিয়েছে। এটি সফল হলে ব্যাংক খাতে লুটপাট কমে যাবে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড জুবলি রোড শাখার ২০১ কোটি টাকার অর্থঋণ মামলায় মেসার্স মুছা অ্যান্ড ইছা ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ডিক্রি জারি হয়। একই বছরের ৫ মে ডিক্রি বাস্তবায়নে একটি জারি মামলা হয়। খেলাপি ঋণ পরিশোধে মহসিনকে ৬ মাসের আটকাদেশসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আরও ৫টি অর্থঋণ জারি মামলা চলমান। গত ৯ অক্টোবর এবি ব্যাংকের মামলায় ঋণখেলাপি আশিকুর রহমান লস্করের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকার ডিক্রি দেন আদালত। লস্করকে দেশে ফেরাতে অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও বাংলাদশে ব্যাংকের গর্ভনরকে আদেশের অনুলিপি পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের অন্তত দেড় ডজন শীর্ষ ঋণখেলাপি সপরিবারে কানাডায় পালিয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে হাজার কোটি টাকা নিয়ে মেসার্স ইয়াছির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মোজাহের হোসেন, ৮০০ কোটি টাকা নিয়ে ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের মালিক জয়নাল আবেদিন, ৬০০ কোটি টাকা নিয়ে সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুম, ৫২৫ কোটি টাকা নিয়ে লিজেন্ড হোল্ডিংসের স্বত্বাধিকারী এসএম আবদুল হাই, মিশম্যাক গ্রুপের কর্ণধার মিজানুর রহমান শাহীন ও হুমায়ুন কবির, প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী আবু সালেহ মো. জাফর, বাগদাদ গ্রুপের কর্ণধার ফেরদৌস খান আলমগীর, ইফ্‌ফাত ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী দিদারুল আলম ও ইমাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ আলী কানাডায় পালিয়ে গেছেন।

সমকাল

1 COMMENT

  1. Doesn’t anyone ask how do they “take” so much money out of the country when the govt. only allows like 10 or 15 thousand dollars per year? They cannot be taking the money in suitcases? Do they take it out through over/under invoicing? Or, what other methods? In one go, or over a period of time? Why is it not noticed when they start, but only after they have already escaped with whole family to Canada?

Comments are closed.