দুর্নীতিই ব্যবসার বড় বাধা বাংলাদেশে

বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুর্নীতিকেই বড় বাধা বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) মিশন ডিরেক্টর রেড জে. অ্যাচিলম্যান। তাঁর মতে, সেবা পেতে দুর্নীতি বেশি হয়ে থাকে। দুর্নীতি বন্ধে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সরকারের সঙ্গে আরও সংলাপ এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, বেসরকারি খাতকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ-অ্যামচেমের মাসিক ভোজসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের উত্তরণ: ইউএসএআইডির সঙ্গে অংশীদারিত্বের অগ্রগতি’ শিরোনামে আলোচনা অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে, অন্যান্য দেশের কয়েকজন কূটনীতিক এবং অ্যামচেমের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

দুর্নীতি প্রসঙ্গে অ্যাচিলম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনার তুলনায় বিনিয়োগ যথেষ্ট কম। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও স্পষ্ট। বাণিজ্যে ভিয়েতনামকে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ধরলে সে দেশের এফডিআই বাংলাদেশের তুলনায় কয়েক গুণ। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সেবা পেতে দুর্নীতির কারণেই এ দেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা শতভাগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অথচ এ দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও জ্বালানির মতো বেশ কিছু খাতে এফডিআই বাড়ানোর অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) মডেলও বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে।
দুর্নীতি বন্ধে সব ধরনের সেবা পেপারলেস বা কাগজবিহীন করার পরামর্শ দেন ইউএসএআইডির মিশনপ্রধান। তিনি বলেন, পেপারলেস সেবা নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি ব্যাপক হারে কমে আসবে। তবে পেপারলেস সোসাইটি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর নিজের দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও দুর্নীতি আছে। যদিও তা পরিমাণে কম। তাঁর মতে, পৃথিবীর সব দেশেই কিছু দুর্নীতি হয়ে থাকে।

ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে বেসরকারি খাতকে আরও সহযোগিতা করতে চান তারা। এ ক্ষেত্রে প্রাণ ডেইরির উদাহরণ দেন তিনি। তাদের অর্থ সহায়তায় প্রাণ ডেইরির দুধ উৎপাদন বেড়েছে। বেসরকারি খাতে সহায়তার সুযোগের কথায় অ্যাচিলম্যান বলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় বছরে ২০ কোটি ডলারের বাজেট রয়েছে তাদের। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের মানবিক সহায়তায় বছরে ১৪ কোটি ডলার ব্যয় করে থাকে ইউএসএআইডি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসায় ইউএসএআইডির মিশনপ্রধান বলেন, উন্নয়নের গতিধারায় উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদ এড়াতে এ দেশের কোনো সমস্যা হবে না। বক্তৃতা শেষে উপস্থিত সুধীদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। আগামী পাঁচ বছর ব্যবসায়ীদের করণীয় কী– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতি কমানো এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের সঙ্গে সংলাপ আরও বাড়াতে হবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ দেশে কী ধরনের সহায়তা কার্যক্রম করছে ইউএসএআইডি, তা প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি গবেষণা সংস্থা সিপিডির এক জরিপ প্রতিবেদনেও ব্যবসা-বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে দুর্নীতিই প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ সেবাপ্রাপ্তি কিংবা সরকারের সঙ্গে যে কোনো চুক্তি– সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতির শিকার হন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২৩: নির্বাহী মতামত জরিপের ফলাফল’ নামে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

samakal