‘কোচ, আমি কি খুব জোরে খেলে ফেলছি?’ কথাটা বলে জিজ্ঞাসু চোখে নেটের অন্য প্রান্তে থাকা প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর দিকে চাইলেন লিটন দাস। ডমিঙ্গোও লিটনকে আশ্বস্ত করলেন, ‘না, ঠিক আছে। তুমি স্বাভাবিকভাবেই খেলছ।’
নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর বিপিএলের বিরতিতে এক মাস ছুটিতে ছিলেন ডমিঙ্গো। লিটন ব্যস্ত ছিলেন বিপিএলের কুড়ি ওভারের ক্রিকেট নিয়ে।
আফগানিস্তান সিরিজের প্রস্তুতির প্রথম দিনটা তাই আড়মোড়া দিতেই দিতেই কেটে যাওয়ার কথা দক্ষিণ আফ্রিকান কোচের। কিন্তু আজ দুপুরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের নেটে ছাত্র লিটনকে দেখেই নেমে পড়লেন তিনি।
জাতীয় দলের স্পিনারদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের সময় লিটনের মাথার অবস্থানটা পছন্দ হচ্ছিল না প্রধান কোচের। বলের ওপর না এসে লিটন শট খেলছিলেন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকে। মাথার অবস্থা ঠিক না থাকায় লিটনকে খেলতে হচ্ছিল শুধু হাতের জোরে। তাই অনেক জোরে মারার চেষ্টা করেও বল দূরে পাঠাতে পারছিলেন না তিনি।
লিটনকেও এ নিয়ে বেশ কয়েকবার হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেল। কিন্তু সমাধানটা তিনি ধরতে পারছিলেন না। দূর থেকে ডমিঙ্গো বিষয়টি লক্ষ্য করেই এগিয়ে যান। নিজেই ব্যাটিংয়ের ভঙ্গি করে বুঝিয়ে দেন ভুলটা কোথায়।
নাসুম আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহদের সঙ্গে আজ জাতীয় দলের নেটে ছিলেন দুই লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম। আফগানিস্তান দলের লেগ স্পিনারদের বিপক্ষে খেলার আগে লেগ স্পিন খেলাটা অভ্যাস করতে টিম ম্যানেজমেন্ট এ দুজনকে দলের সঙ্গে রেখেছেন। এ ছাড়া হাত ঘুরিয়েছেন আফিফ হোসেন ও ইয়াসির আলীও। কাউকেই যেন ঠিক স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারছিলেন না লিটন।
দুই নেট মিলিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট ব্যাটিং করার পর ডমিঙ্গোর ডাকে লিটন গেলেন জহুর আহমেদের প্রেসবক্স প্রান্তে। সেখানে লিটনের সঙ্গে আরও এক ঘণ্টার বেশি সময় ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেন ডমিঙ্গো। ডানহাতি এ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের মাথার অবস্থান ঠিক করার জন্য বারবার একটা কথাই বলছিলেন ডমিঙ্গো, ‘চেষ্টা করো এক বাউন্সে বল ড্রাইভ করতে। দেখবে, তখন তোমার মাথায় অবস্থান ঠিক থাকবে।’
কিছুক্ষণ অনুশীলনের পর কোচের মুখ থেকে শোনা যাচ্ছিল, ‘দারুণ, লিটন। এটাই চাচ্ছিলাম।’ ভারসাম্য ঠিক হতে না হতেই লিটনের ব্যাট থেকেও বল যাচ্ছিল গুলির গতিতে।
নিজের ব্যাটিংয়ের পরিবর্তনটা বুঝতে পারছিলেন লিটন নিজেও। অনুশীলনের শেষের দিকে ড্রাইভ থেকে বেরিয়ে কাট, পুল, ব্যাক ফুট পাঞ্চগুলোও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঝালিয়ে নেন তিনি। ডমিঙ্গোকেও ছাত্রকে কিছু দিতে পেরে যেন গর্বিত মনে হচ্ছিল।
নেট ছাড়ার আগে লিটনকে ডেকে ডমিঙ্গো বলছিলেন, ‘ড্রিলের সুবিধা তো দেখলেই। মাঝেমধ্যে নিজের ব্যাটিং কৌশল থেকে দূরে সরে যাওয়াটা স্বাভাবিক, এটা সবারই হয়। ড্রিলের মাধ্যমে সেটা ফিরিয়ে আনতে হয়।’
ডমিঙ্গো-লিটনের এমন কথোপকথন চলেছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আঁধার না নামা পর্যন্ত। নেট ছেড়ে ড্রেসিংরুমের পথেও চলছিল দুজনের ব্যাটিং-আলাপন।