দলে ফেরার বিতর্কে বিরক্ত তামিম

দলে ফেরার বিতর্কে বিরক্ত তামিম

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, বিপিএলের মধ্যেই তামিম ইকবালের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত জানাবেন। এজন্য তামিমের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসকে। সম্প্রতি পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে তামিমকে নিয়ে বোর্ডের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে পাপন জানান, স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন সিরাজ ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তামিমে সঙ্গে কথা বলতে। এ দুই পরিচালক সম্প্রতি তামিমের সঙ্গে মিটিং করে মতামত জেনেছেন বলে বাঁহাতি এ ওপেনারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।

জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক দুই পরিচালককে জানিয়েছেন, তিনি আর জাতীয় দলে খেলবেন না। বিসিবি সভাপতি পাপনকেও কয়েক মাস আগে নিজের এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। কিন্তু গত কয়েকদিন মিডিয়ায় বিষয়গুলো ভুলভাবে এসেছে বলে মনে করেন তামিম। বিষয়গুলো নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করছে বলে মনে হচ্ছে বাঁহাতি এ ওপেনারের।

মঙ্গলবার এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে জানান, মিডিয়ায় ভুল বার্তা গেছে। বিষয়গুলোকে বিরক্তির কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি। গত কয়েকদিন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তামিম ২০২৪ সালে জাতীয় দলে খেলবেন না। বিসিবির দুই পরিচালককে নিজের এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন বলে খবর।

এ নিয়ে তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ রকম কোনো কিছু বলিনি। মিডিয়ায় ভুলভাবে এসেছে। প্রয়োজনে বিসিবির দুই পরিচালকের কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।’

গত বছর আগস্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজের প্রথম ম্যাচ শেষে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অবসর ভাঙেন। কোমরের চোট পরিচর্যা করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে খেলেন বিশ্বকাপের আগে। ব্যাটিং ভালো করলেও বিশ্বকাপ দলে যাওয়া হয়নি তাঁর। তখন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান টিভি সাক্ষাৎকারে সমালোচনা করেন তামিমের। সেই থেকে জাতীয় দলে খেলেন না তামিম। ভবিষ্যতেও খেলার সম্ভাবনা নেই বলে বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি।

জাতীয় দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে তামিমের দূরত্বের কারণে বিষয়গুলো জটিল হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টরা। চন্ডিকার পরামর্শেই বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাঁহাতি এ ওপেনারকে চার নম্বরে খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তারা। বিসিবি সভাপতির এ প্রস্তাব থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। তামিম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখালে বোর্ড সভাপতি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি বলে অভিযোগ। বিশ্বকাপ খেলতে না পেরে হতাশ ছিলেন তামিম। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এ নিয়ে কমবেশি কথাও বলেছেন ৩৫ বছর বয়সী এ ব্যাটার। যদিও বিশ্বকাপ-পরবর্তী সময়ে বোর্ড সভাপতির সঙ্গে দেখা করে নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানান। কিন্তু পাপনের সময় চেয়ে নেওয়ায় মিডিয়ায় নিজের সিদ্ধান্ত প্রকাশ করতে পারেননি। বোর্ডের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতেও পারছেন না। এই বিলম্বের কারণে মিডিয়ায় ভুল বার্তা যাচ্ছে বলে মনে করেন তামিমের সংশ্লিষ্টরা।

তামিম নিজের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে না পারার পেছনে বিসিবি কর্মকর্তাদের হাত থাকতে পারে বলে দাবি একটি মহলের। তবে আইসিসির সিইসি মিটিং শেষ করে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং সিইও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী দেশে ফিরলে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে বোর্ড। কারণ, তামিমের বার্তা বিসিবি সভাপতির কাছে পৌঁছে দেবেন এনায়েত হোসেন সিরাজ। আসলে তামিম নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো সুযোগ দেখেন না। কারণ, তাঁর সঙ্গে জাতীয় দল সংশ্লিষ্ট কেউই যোগাযোগ করেননি। বিশেষ করে প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে নিজে থেকে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেননি। বিসিবি থেকেও কোচকে বলা হয়নি যোগাযোগ করতে। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর কাছ থেকেও ফোন পাননি বাঁহাতি এ ওপেনার। ফলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে তামিম নিজের সিদ্ধান্তে অটল আছেন বলে জানান। তাঁর সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে, তিনি তিনবার বোর্ডকে নিজের সিদ্ধান্তের কথা বলেছেন। আর তাঁর সিদ্ধান্ত হলো, জাতীয় দলে আর খেলবেন না।

samakal