দক্ষিণ-পূর্বের বিপদ

 

মাসুম খলিলী :

কোনো জনপদের রাজনৈতিক উত্থান পতন যখন ভূরাজনৈতিক সঙ্কটের ঘনঘটা তৈরি করে তখন একের পর এক অঘটন দেখা যায়। তেমনি অঘটন ঘটছে বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বের মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্ত-ঘেঁষা অঞ্চলসমূহে। সেখানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে ওই দেশের সেনাবাহিনীর যুদ্ধ এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী। সরকারি বাহিনীর পলায়নপর সদস্যরা মূল ভূখণ্ডে ফিরতে না পেরে ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পালিয়ে আসছে।

এতদিন এই যুদ্ধকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলা হলেও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সে দেশের একের পর এক সীমান্তরক্ষী বা সেনাসদস্যের অনুপ্রবেশের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে বাংলাদেশে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার তুমব্রু ঘুমধুম সীমান্তের তিনটি স্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপির সদস্যদেরকে দ্রুতই বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাঠাতে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

নিয়ন্ত্রণ শিথিল হচ্ছে জান্তার
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সে দেশের সেনাবাহিনীর যুদ্ধ চলছে কয়েক মাস থেকে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার দখলে থাকা অনেক শহর ও এলাকা বিদ্রোহীরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলেও খবর আসছে। নির্বাসিত মিয়ানমার নাগরিকদের সংবাদমাধ্যম ‘ইরাবতী’ পত্রিকায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্ত-সংলগ্ন রাখাইন রাজ্যে দেশটির আরেকটি ব্যাটালিয়ন দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ শহর রামরি আরাকান আর্মির যোদ্ধারা ঢোকার পর সেখানে জান্তা বাহিনীর অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সৈনিকদের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

আরাকান আর্মি ১৩ নভেম্বর রাখাইনে ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু করার পর সিতওয়ে-র নিকটবর্তী পাউকতাও শহর এবং চিন প্রদেশের পালেতাওয়া শহরসহ ১৬০টি অবস্থান থেকে মিয়ানমার বাহিনীকে উৎখাত করেছে। এই ধারাবাহিকতায় গত জানুয়ারির শেষ দিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন ও আরাকান রাজ্যের যুদ্ধ-পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

মিয়ানমারের এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীনের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার কথা বলছে বাংলাদেশ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিয়ানমারে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার আঁচ বাংলাদেশের সীমান্তে এসে পড়ছে। যুদ্ধটা তাদের অভ্যন্তরীণ। কিন্তু সীমান্তে গোলাগুলির আওয়াজ আমাদের এখানে যখন চলে আসে, স্বাভাবিক কারণে ভয়ভীতিও আসতে পারে। এজন্য আমরা চীনের হস্তক্ষেপ চেয়েছি।’

চীন কী চাইছে
মিয়ানমারের রাখাইন, চিন, শান ও ওয়া স্টেট অঞ্চলটি চীনের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই অঞ্চলের সাথে একদিকে রয়েছে চীনের বিশাল স্থলসীমান্ত। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের সাথে সংযুক্ত অর্থনৈতিক করিডোর ও জ্বালানি পাইপলাইন এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে চীনের ইউয়ান প্রদেশের সাথে যুক্ত হয়েছে। এ কারণে চীন সবসময় তার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কৌশলে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার পাশাপাশি এই অঞ্চলের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখত।

এই অঞ্চলের প্রধান তিন জাতিতাত্ত্বিক প্রতিরোধ গোষ্ঠীর সমন্বয়ে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গঠন করার পেছনে চীনের ভূরাজনৈতিক লক্ষ্যের সম্পৃক্ততা রয়েছে। জুন ২০১৯ এ গঠিত হয় আরাকান আর্মি (এএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ও ত্যায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (এনটিএলএ) সমন্বিত এই জোট। এর তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী প্রাথমিকভাবে অভ্যুত্থান সম্পর্কে নীরব ছিল কিন্তু ২০২১ সালের মার্চ মাসে জোটের অস্তিত্ব পুনর্নিশ্চিত করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে গ্রুপটি মূলত রাখাইন রাজ্য এবং উত্তর শান রাজ্যে লড়াই করেছিল। ২৭ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে, জোট উত্তর শান রাজ্যে জান্তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যুদ্ধের নতুন সূচনা করে।

ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের তিন সংগঠনের প্রতিটির নেতৃত্ব ও কমান্ড কাউন্সিলের সাথে চীনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। জান্তাবিরোধী লড়াইয়ের সাম্প্রতিক অগ্রাভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে এই জোট। চীনা সীমান্তের এই অঞ্চলের মধ্যে ওয়া স্টেট আগে থেকেই চীনপন্থী প্রতিরোধ গ্রুপগুলোর নিয়ন্ত্রণে। সেখানে বর্মী সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণই কার্যত নেই। শান বা রাখাইন স্টেটের কয়েকটি শহরাঞ্চল ছাড়া বাকিটা ছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে রাখাইনের বৃহত্তর অংশ ছাড়াও চিন স্টেটের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মি। রাখাইনের একটি ক্ষুদ্র এলাকা রয়েছে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) নিয়ন্ত্রণে।

রাখাইন চিন শান অঞ্চলে সামরিক জান্তার উপস্থিতি বড়ভাবে চাপের মুখে পড়ার পেছনে তিনটি বিষয় সক্রিয় ছিল। প্রথমত, তিনটি প্রতিরোধ সংগঠনের সমন্বয়ে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গঠন এবং এর সাথে সরকারের বিদ্যমান যুদ্ধবিরতির সমঝোতা অকার্যকর হয়ে পড়া। এর ফলে একদিকে তিন প্রতিরোধ সংগঠনের সাথে সমঝোতা ও সমন্বয় তৈরি হয়, অন্যদিকে জান্তাবিরোধী অভিযানের ক্ষেত্র ছড়িয়ে পড়ে।
দ্বিতীয়ত, সংখ্যাগুরু বামার অঞ্চলে জান্তাবিরোধী প্রতিরোধ ফ্রন্ট পিডিএফ ও এনইউজি সরকারের সাথে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সমঝোতা। এনইউজির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ সমর্থন থাকলেও ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের প্রতি ছিল চীনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন। জান্তাবিরোধী লড়াইয়ে দুই পক্ষের এই সমঝোতা যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

তৃতীয়ত, ঐতিহাসিক কাল থেকে বার্মার সামরিক শাসকরা এককভাবে চীনা সহযোগিতা ও সমর্থননির্ভর ছিল। পশ্চিমা অবরোধের মধ্যেও চীনা সমর্থনে বর্মী সরকার অর্থনৈতিক সচলতা বজায় রেখেছিল। বর্তমান জান্তা সরকার এই সম্পর্ককে বহুমুখী নির্ভরতার দিকে নিয়ে যায়। চীনের পাশাপাশি ভারত ও রাশিয়ার সাথে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক নির্মাণ করে নেইপিডো। এমনকি প্রতিরক্ষা সামগ্রীর একটি বড় অংশ ভারত ও রাশিয়া থেকে সংগ্রহ করে। এর বাইরে কালাদান বহুমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে রাখাইন-চীন অঞ্চলে দুই বৈরী শক্তির মধ্যে ভারতকে চীনের সমান্তরাল এক্সেস দেয় জান্তা সরকার। চীন এ বিষয়টি পুরোপুরি মেনে নিয়েছে বলে মনে হয়নি। এ কারণে বেইজিং সামরিক জান্তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন না করেই বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দেয়া শুরু করে।

আরেকটি বিষয় চীনা স্বার্থকে বড়ভাবে বিপন্ন করে। এটি হলো চীনা আর্থিক কাঠামোতে বর্মী হ্যাকারদের আক্রমণ। বার্মাভিত্তিক হ্যাকার গ্রুপ চীনা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে বর্মী সরকারের কার্যকর সহযোগিতা পায়নি বলে মনে করে বেইজিং।

ত্রিধাবিভক্ত হবে মিয়ানমার?
মিয়ানমার খণ্ড বিখণ্ড হয়ে পড়ার আশঙ্কাটি ব্যক্ত করেছিলেন দেশটির সামরিক বাহিনী মনোনীত প্রেসিডেন্ট মিন্ট শোয়ে। ক্রমবর্ধমান অন্তর্ঘাতে বিপর্যস্ত দেশের পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি ঠেকানো না গেলে দেশ খণ্ড বিখণ্ড হওয়া রোধ করা যাবে না। বর্মী প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। এরপর নানা ঘটনায় দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কিছু শীর্ষ জেনারেলকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যেও অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে বলে গণমাধ্যমে নানা রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, সামগ্রিক বিশৃঙ্খলা থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রকাঠামোকে বাঁচানোর জন্য বর্তমান সামরিক জান্তার সামনে সমঝোতার বিকল্প নেই। সরকারে নতুন মুখ এলে বিরোধীদের সাথে আলোচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে। এনইউজি বা জাতীয় ঐক্য সরকার শিথিল ফেডারেল কাঠামোর আওতায় সব নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও অঞ্চলকে সমন্বিত রাখার কথা বলছে। এটি হলে আঞ্চলিক সরকারগুলো সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে, আর রাষ্ট্র হিসাবে মিয়ানমার টিকে থাকবে। এটি কেবল তখনই সম্ভব হতে পারে যদি সামরিক সরকার সব দলের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন দেয় এবং নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়।

পশ্চিমা দেশগুলো এটি প্রত্যাশা করলেও চীনের চাওয়াটি হবে গুরুত্বপূর্ণ। বেইজিং সম্ভবত মিয়ানমারের বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সমঝোতাকে স্বাগত জানাতে পারে। তবে দেশটিতে তার ব্যাপকভিত্তিক যে স্বার্থ রয়েছে সেটিকে ক্ষুণ্ন করে, বিশেষত অর্থনৈতিক করিডোর ও জ্বালানি সংযোগ বিঘ্নিত করা ছাড়া একটি সমঝোতার উদ্যোগ মেনে নিতে পারে।

বিকল্প দৃশ্যপট কী হবে?
রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে কোনো সমাধানসূত্র বের না হলে কী হতে পারে তা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। জান্তা প্রেসিডেন্টের আশঙ্কা অনুসারে দেশটি বিখণ্ড হলে তিনটি অঞ্চল সৃষ্টি হতে পারে। সে অঞ্চলগুলোর প্রতিটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। জান্তার নিয়ন্ত্রণে এখন ৩০ শতাংশের মতো অঞ্চল রয়েছে। সেখানে মূল মিয়ানমার থাকতে পারে যার মধ্যে ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়-এর বড় অংশ থাকতে পারে। অন্যদিকে চীন ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন চিন শান ও ওয়া অঞ্চল নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হতে পারে। তৃতীয় রাষ্ট্রটি হতে পারে থাই সীমান্তবর্তী কারেন অঞ্চল ও এর আশপাশ নিয়ে।

এ ধরনের বিভাজনে জান্তার নিয়ন্ত্রণে মূল মিয়ানমার থাকলে এই সরকারের সাথে চীন, ভারত, রাশিয়ার সমান্তরাল সম্পর্ক থাকতে পারে। আর রাখাইন চিন শান ওয়া রাষ্ট্র থাকবে চীনা প্রভাব বলয়ে। কারেন রাষ্ট্রে থাইল্যান্ড ও পশ্চিমা প্রভাব বেশি থাকতে পারে। মূল মিয়ানমারে এনইউজি সরকার গঠন করলে সেখানে পশ্চিমা প্রভাব বেশি থাকতে পারে।

বাংলাদেশের বিপদ কোথায়?
নিরাপত্তা ইস্যুগুলোকে অনেক দেশেই সংবেদনশীল বিবেচনা করে তা নিয়ে উন্মুক্ত পর্যালোচনা হয় না। বাংলাদেশও সেসব দেশের অন্তর্ভুক্ত। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে এমন কিছু ঘটনা ঘটে চলেছে যেগুলো রাষ্ট্রের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।

এই অঞ্চল থেকে উদ্ভূত এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সঙ্কট হলো রোহিঙ্গা সমস্যা। ১৯৭৭ সাল থেকে এই সঙ্কটের সূত্রপাত হলেও এ সমস্যা এখনকার মতো বহুমাত্রিক ছিল না। এর আগে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বাংলাদেশ কূটনৈতিক চাপের পাশাপাশি বার্মার জন্য এর সমাধানে সাড়া না দিলে সে দেশের নিরাপত্তা সঙ্কট সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি করতে পেরেছিল। ফলে দেশটির সরকার শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ২০১৭ সালে নতুন পর্যায়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরু হবার পর কূটনৈতিকভাবে এর সমাধানের বাইরে আর কোনো টুলস সৃষ্টিতে মনোযোগ দেয়া হয়নি। অধিকন্তু বাংলাদেশ দুই প্রধান কৌশলগত মিত্র হিসাবে ভারত ও চীনকে গ্রহণ করলেও এই ইস্যুতে দেশ দুটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মিয়ানমারের অবস্থানকে সমর্থন করেছে।

জাতিতাত্ত্বিকভাবে রোহিঙ্গারা বাঙালি জাতিসত্তার কাছাকাছি হলেও রোহিঙ্গা প্রতিরোধ শক্তিকে সহায়তাদানের পরিবর্তে সরকারের আরাকান আর্মির মতো বাংলাদেশের পাহাড়ি জাতিসত্তার সাথে সম্পর্কিত গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার কথা জানা যায়। এর ফলে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের কোকি চিন, মারমা ও চাকমাদের সাথে আরাকান আর্মি সম্পর্ক গড়ার সুযোগ পেয়েছে।

ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব চীনের। এর মধ্যে বাংলাদেশের কোকি চিনরা একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বড় অংশ রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভারত ও মিয়ানমারের মিজো কোকি চিনারা নিজেদের ‘জো’ জনগোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত করে জো জনগণের অঞ্চল হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের মিজোরাম মনিপুর চিন শান অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছে।
ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সাথে জো জনগোষ্ঠীর কোনো সমীকরণ তৈরি হলে সেটি এই অঞ্চলের তিন দেশের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। বিপর্যস্ত মিয়ানমার সরকারের এ নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ সীমিত। আঞ্চলিক শক্তিধর দেশ হিসাবে ভারতের সক্ষমতার ব্যাপ্তি অনেক বড়। বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে কতটা কী প্রস্তুতি নিচ্ছে সেটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

যে জো জনগোষ্ঠী এই অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার স্বপ্ন দেখছে তাদের একটি অংশ নিজেদের হারানো ১০ ইহুদি গোত্রের বংশধারা মনে করেন। তাদের মধ্যে অনেকে ইসরাইলের নাগরিকত্ব নিয়ে পশ্চিমতীরে বসবাস করছে। এই বিষয়টিও নিরাপত্তা সঙ্কটে নতুন এক মাত্রা যুক্ত করতে পারে। রাজনীতির সঙ্কটে ভিন্ন মতের মানুষেরা নির্যাতনের শিকার হয়। নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্কট এলে সেটি দেশের পুরো জনগোষ্ঠীকে আক্রান্ত করে। সাম্প্রতিক ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনে আমরা সেটি গভীরভাবে অবলোকন করতে পারি।

nayadiganta