তৃণমূলকে উজ্জীবিত করতে নানা উদ্যোগ বিএনপি’র

নির্বাচনের পর ঘুরে দাঁড়াতে অনেকটা কৌশলে এগুচ্ছে বিএনপি। হতাশাগ্রস্ত দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। রমজানের আগে থেকেই এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।  কারামুক্ত নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা। অসুস্থ নেতাদেরও দলের পক্ষে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। গুম-খুনের শিকার নেতাদের পরিবারে পাঠানো হচ্ছে ফলমূল, আর্থিক অনুদান সহ নানা ঈদ উপহার। এবার কেন্দ্রীয়ভাবে বড় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেনি দলটি। তবে জেলা-উপজেলা ও থানা পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা হচ্ছে ইফতার মাহফিল। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে হচ্ছে ইফতার মাহফিল। জেলা পর্যায়ের  ইফতার মাহফিলগুলোতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য রাখছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এদিকে কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে ইস্যুভিত্তিক নানা কর্মসূচিও পালন করছে দলটি। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাদেরও দলে সক্রিয় করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৫ বছর নিষ্ক্রিয় থাকা দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদকে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সোমবার নয়াপল্টনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশসহ তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। গুলশান ও নয়াপল্টন কার্যালয়ে একাধিক বৈঠকও করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ওদিকে গুম, খুন ও পঙ্গুত্বের শিকার দলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে “আমরা বিএনপি পরিবার” নামে সেল গঠন করা হয়েছে। সেলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ শুরু করেছেন।

এদিকে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটির হাইকমান্ড। ইতিমধ্যে মেয়াদ পূর্তির আগেই ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাবি শাখা ছাত্রদলেও ঘোষণা করা হয়েছে নতুন নেতৃত্ব। এ ছাড়া বিএনপি’র ঢাকার দুই মহানগর, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, শ্রমিক দলসহ বাকি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের তোড়জোড় চলছে। ওদিকে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখা নেতাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। গত এক মাসে অন্তত ৫ জন নেতাকে দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমকে ঘিরে গুলশান ও নয়াপল্টন কার্যালয়েও বাড়ছে কর্মচাঞ্চল্য। বাড়ছে নেতাকর্মীদের আনাগোনাও।

এদিকে ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর বিএনপি’র ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের মুক্তির জন্য দলের আইনি সেল কাজ করছে। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তি পেয়েছেন।  যেসব নেতা মামলার পরোয়ানা নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন তাদেরকে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে দলের হাইকমান্ড থেকে। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় হতে গত কয়েকদিনে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন আবদুস সালাম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণসহ এক ডজন নেতা। এ ছাড়া সাবেক তিন ছাত্রনেতা আজিজুল বারী হেলাল, রাজীব আহসান ও আকরামুল হাসান নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রমজানব্যাপী এই কার্যক্রমগুলো চলবে। রমজানের পর  যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে সরকারবিরোধী নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। তবে আপাতত বড় কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। দ্রব্যমূল্যসহ ইস্যুভিত্তিক নানা কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। রমজানের পর উপজেলা নির্বাচন শুরু হলেও তাতে দলীয়ভাবে অংশ নেবে না বিএনপি। দলের কেউ প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

দলের দপ্তর থেকে জানা গেছে, তৃণমূল নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করতে দলের হাইকমান্ড ৮২টি সাংগঠনিক জেলার ইফতার মাহফিলে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রতিদিন তিনি চার থেকে পাঁচটি জেলায় একত্রে সংযুক্ত হবেন। এ ছাড়া উপজেলা ও থানা পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে পাঁচ শতাধিক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হবে।

গতকাল কেরানীগঞ্জে  ঢাকা জেলা বিএনপি’র ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু। শুক্রবার হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র ইফতার মাহফিলে অংশ নেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। একইদিন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র ইফতার মাহফিলে যোগ দেন  বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার খুলনা জেলা বিএনপি’র ইফতার মাহফিলে যোগ দেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এর আগে সোমবার ও মঙ্গলবার কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা বিএনপি’র ইফতার মাহফিলে অংশ নেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এসব ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।  এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে।

বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মানবজমিনকে বলেন, সারা দেশে আমাদের টিম যাচ্ছে ভিকটিম পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেয়ার জন্য। গুম-খুনের শিকার নেতাদের পরিবারগুলোকে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সারা দেশে আঞ্চলিক ও স্থানীয়ভাবে ইফতার মাহফিল করা হচ্ছে। এ ছাড়া কারাগারে থাকা নেতাদের মুক্তির জন্য আমাদের আইনি সেল কাজ করছে। ইতিমধ্যে অনেকেই মুক্তি পেয়েছেন। অনেকে জামিনও পেয়েছেন। তবে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল ফেরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগের কারণে ধীরে ধীরে নেতাকর্মীদের আস্থা ফিরছে। তবে স্বৈরাচার সরকারের জুলুম-নির্যাতনের ফলে যে ধাক্কা খেয়েছে সেটা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে।

বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা হতাশ নয়। সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে আমি-ডামি মার্কা নির্বাচন করেছে প্রতিবেশী দেশের সহযোগিতায়। এতে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এই ক্ষোভ ধীরে ধীরে বিক্ষোভে পরিণত হচ্ছে। তবে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আন্দোলনে কারানির্যাতিত নেতাদের বাসায় বাসায় যাচ্ছি। রমজান জুড়ে ইফতার মাহফিলের পাশাপাশি মতবিনিময় সভা, আলোচনা সভা ও কর্মিসভা করছি।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান মানবজমিনকে বলেন, সরকারের মিথ্যা মামলা ও জুলুম-নির্যাতনের কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল আরও কঠোরতর হয়েছে। এখন আমাদের দৃষ্টি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে।

manabzamin