তৃণমূলকে আবারও সক্রিয় করার উদ্যোগ বিএনপির

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপির পর আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। রাজপথে নামতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। একেবারে তৃণমূল থেকে নেতাকর্মীকে সংগঠিত করে ধীরে ধীরে কেন্দ্রের দিকে আসতে চাচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা। লক্ষ্য অর্জনে নানা হিসাব-নিকাশ কষে ধীরগতিতে এগোচ্ছেন তারা। এখনই বড় কোনো কর্মসূচিতে না গেলেও মাঠ গোছাতে চালাচ্ছেন নানা তৎপরতা। দলের নেতাকর্মীকে চাঙ্গা করতে এবং ফের তাদের রাজপথে নামাতে কাজ করছেন দলটির হাইকমান্ড।

দলীয় সূত্র জানায়, এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে দলের চার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসবক দল ও কৃষক দলকে মাঠে নামানো হয়েছে। তারা বিভিন্ন জেলা ও মহানগর এমনকি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সফর করে নেতাকর্মীকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেবেন। সেখানে তৃণমূলের কথা শুনবেন এবং দেবেন দিকনির্দেশনাও। একই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্য  সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা নেতিবাচক দিক তুলে ধরা হবে। তৃণমূল সফরে এসব বিষয় সামনে এনে সরকারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হবে। এ ছাড়া বিগত আন্দোলনে গুম, খুন, পঙ্গু কিংবা গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীর পরিবারের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন নেতারা। ওই চার সংগঠন ছাড়াও বিএনপির মিডিয়া সেলকে দেশের বিভিন্ন জেলা সফরে পাঠানো হয়েছে। তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এরই মধ্যে পাবনা জেলা থেকে তাদের এই সফর শুরু করা হয়েছে। এরকম আরও বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনকে বিভিন্নভাবে সক্রিয় করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপি নেতারা জানান, নির্বাচনের আগে সারাদেশে বিভাগীয় সভা-সমাবেশের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চাঙ্গা এবং জনসম্পৃক্ততা ঘটাতে পেরেছিলেন, তাতে অনেকটাই ছেদ ঘটে ৭ জানুয়ারির পর। সারাদেশে মামলা-হামলা আর গ্রেপ্তারে দলের নেতাকর্মীরা খুব খারাপ একটা সময় পার করছেন। নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্যাতনে নেতাকর্মীরা ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছেন। কারাগারে গেছেন। অনেকে আহত-নিহত হয়েছেন।

তারা আরও বলেন, এখন অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। এর পরও নেতাকর্মীরা আগের মতো সক্রিয় হতে পারছেন না। নেতাকর্মীর মধ্যে আগের সেই মনোবল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নানা কারণে তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন, অনেকেই হতাশ। সেখান থেকে দলকে আবার আগের জায়গায় নিয়ে যেতে এবং ফের আন্দোলনের জন্য নিজেদের তৈরি করতে আবারও জনমত তৈরির কর্মসূচিতে যেতে হবে। জনগণকে মাঠে নামাতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সুশীল আর বুদ্ধিজীবীদের সক্রিয় করতে হবে। এ লক্ষ্যে আবারও একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করতে চাচ্ছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
দলের বেশ কয়েকজন নেতা সমকালকে জানান, তৃণমূল নেতাকর্মীকে আবারও কীভাবে  রাজপথে ফিরিয়ে আনা যায় এবং সক্রিয় করা যায়– সেটাকে টার্গেট করে কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন তারা। এ জন্য প্রতিটি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীকে জেলা সফর করার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। ওই সফরে তৃণমূলের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়া আর কষ্টের কথা শুনবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে, সেসব বিষয়ে বলে দেওয়া হয়েছে বিএনপির কেন্দ্র থেকে। এ বিষয়ে গত রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা গেছে, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনায় এরই মধ্যে ছাত্রদল নেতাদের উপস্থিতিতে সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মহানগর ও জেলা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা, ফরিদপুর মহানগর ও জেলা, রাজবাড়ী ও মাদারীপুরে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দুটি টিম পৃথকভাবে গত ১৭ মে থেকে কাজ শুরু করেছে। সফরকালে তারা বিগত আন্দোলনে আহত-নিহত নেতাকর্মীর পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়াও এসব ইউনিটের নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।

সংগঠনকে সুসংগঠিত, শক্তিশালী ও গতিশীল করতে জেলা সফরে যাচ্ছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতারাও। গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ৮২ সাংগঠনিক জেলায় পর্যায়ক্রমে সফর করবে প্রতিনিধি দল। এর জন্য ৩৫ টিমে বিভক্ত করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া সারাদেশে কর্মিসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ও শ্রমিক দল। এ জন্য বিভাগীয় টিমও গঠন করেছে সংগঠনটি। কর্মিসভা সফলে সব জেলা ও মহানগরে কেন্দ্রীয় নেতাদের দলনেতা করে এই টিম গঠন করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় গতকাল বিকেলে সিরাজগঞ্জ, আজ সকালে জয়পুরহাট এবং বগুড়ায় কৃষক দলের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা হবে।

সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সমকালকে বলেন, ‘তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ সবার সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের জেলা-উপজেলা সফরের উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীর মনোবল চাঙ্গা হবে।’

কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, তাদের জেলা সফর কর্মসূচিতে তৃণমূলকে সংগঠিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তাদের আরও বেশি প্রস্তুত করা হচ্ছে।

samakal