তুলা আমদানিতে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ও  চীনের পতাকা
বাংলাদেশ ও চীনের পতাকা

তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রধান কাঁচামাল তুলা আমদানিতে চলতি ২০২৪–২৫ বাণিজ্য বছরে (আগস্ট–জুলাই) চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ—এমন পূর্বাভাস দিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। শেষ পর্যন্ত সেটি হলে আবারও বিশ্বে শীর্ষ তুলা আমদানিকারক দেশ হবে বাংলাদেশ। করোনার আগে ও পরে একাধিকবার বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ তুলা আমদানিকারক দেশ হয়েছিল।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত ইউএসডিএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত আগস্টে শুরু হওয়া দেশটির ২০২৪–২৫ বাণিজ্য বছর শেষে বাংলাদেশের তুলা আমদানি বেড়ে ৮০ লাখ বেলে দাঁড়াতে পারে। যদিও গত অক্টোবরে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, চলতি বাণিজ্য বছরে বাংলাদেশের তুলা আমদানি হতে পারে ৭৮ লাখ বেল। এখন সেটি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। মূলত তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়তে থাকায় দেশে তুলা আমদানির প্রবণতা বেড়েছে। গত ২০২৩–২৪ বাণিজ্য বছরে ৭৫ লাখ ৭৫ হাজার বেল তুলা আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত, এক বেল সমান ৪৮০ পাউন্ড বা ২১৮ কিলোগ্রাম (কেজি)।

মার্কিন সংস্থা থেকে তুলা আমদানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস পাওয়া গেলেও দেশের বস্ত্রকল মালিকেরা বলছেন, গ্যাস–সংকটে দেশের অধিকাংশ বস্ত্রকলই পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। গত বছর প্রণোদনাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারতীয় সুতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারছে না দেশীয় সুতা উৎপাদনকারীরা। সে জন্য ভারত থেকে সুতা আমদানি বাড়ছে।

ইউএসডিএর গত অক্টোবরের প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চলতি বাণিজ্য বছরে ৪ কোটি ২৪ লাখ বেল তুলা আমদানি করতে পারে। তার ৬৫ শতাংশই আমদানি করবে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। চীন ৮০ লাখ, ভিয়েতনাম ৭১ লাখ, বাংলাদেশ ৭৮ লাখ ও পাকিস্তান ৪৮ লাখ বেল তুলা আমদানি করবে বলে ওই পূর্বাভাসে বলা হয়।

অবশ্য চলতি ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, আগের পূর্বাভাসের তুলনায় চীনের তুলা আমদানি সাত লাখ বেল পর্যন্ত কমতে পারে। তবে ভিয়েতনাম তিন লাখ, বাংলাদেশ দুই লাখ এবং পাকিস্তান দুই লাখ বেল তুলা আমদানি বেশি করবে। এতে করে চীনের তুলা আমদানি দাঁড়াতে পারে ৭৩ লাখ বেলে। ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের তুলা আমদানি হবে যথাক্রমে ৭৪ লাখ ও ৫০ লাখ বেল।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর পরিচালক মোহা. খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ইউএসডিএর পূর্বাভাস তাত্ত্বিকভাবে ঠিক আছে, তবে বাস্তবতা ভিন্ন। আমাদের কারখানার সক্ষমতা অনুযায়ী এই হিসাবটি করা হয়েছে। বর্তমানে গ্যাস–সংকটের কারণে অধিকাংশ কারখানার উৎপাদন সক্ষমতার ৪০–৫০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে না। ফলে শেষ পর্যন্ত এত তুলা আসবে না। যেটুকু কম আসবে, তার বড় অংশই সুতা আকারে ভারত থেকে আসবে।

নিজের কারখানার উদাহরণ দিয়ে মোহা. খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমার দুটি স্পিনিং মিলে সব সময় তিন মাসের তুলা মজুত থাকে। যেহেতু উৎপাদন সক্ষমতার ৫০–৫৫ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে, ফলে গত চার মাস কোনো তুলা আমদানি করিনি।’

ইউএসডিএ বলছে, প্রধান রপ্তানি খাতের চাহিদা পূরণে ২০২১–২২ বাণিজ্য বছরে বাংলাদেশ ৮৪ লাখ বেল তুলা আমদানি করেছিল। সেবার চীনের আমদানি ছিল ১ কোটি ২৭ লাখ বেল। পরের বছর থেকে চীনের আমদানি ব্যাপকভাবে কমে যায়। ২০২৩–২৪ বাণিজ্য বছরে চীন ১ কোটি ৪৯ লাখ বেল তুলা আমদানি করে ঘুরে দাঁড়ায়। তবে চলতি বছরে আবার তাদের তুলা আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা গত বছর ১৮ লাখ ৮৯ হাজার টন তুলা আমদানি করে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি। এতে ব্যয় হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া সুতা আমদানি হয় ১২ লাখ টন। এতে ব্যয় হয়েছে ৪৫ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা।

বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, দেশে ৫১৯টি স্পিনিং মিল রয়েছে। তার মধ্যে কিছু মিল বন্ধ রয়েছে। এসব স্পিনিং মিল নিট কাপড়ের ৮৫-৯০ শতাংশ এবং ওভেন কাপড়ের প্রায় ৪০ শতাংশ সুতা সরবরাহ করে থাকে।

বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, সুতা উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে গ্যাস–সংকটের কারণে বস্ত্রকলগুলো অর্ধেক চলে, অর্ধেক চলে না। কিছু বন্ধও হয়েছে। এদিকে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে আগামী তিন–চার মাস ভালো ক্রয়াদেশ আছে; কিন্তু গ্যাস–সংকটের কারণে তাঁদের প্রয়োজনীয় সুতা সরবরাহ করতে পারছে না দেশি বস্ত্রকলগুলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here