তিস্তা প্রকল্প স্পর্শকাতর- চীনা রাষ্ট্রদূত

logo

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১৪ অক্টোবর ২০২২, শুক্রবার

তিস্তা প্রকল্প ঘিরে স্পর্শকাতরতা রয়েছে উল্লেখ করে ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, এ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার  মানুষের প্রয়োজনও এটি। সে কারণে এ প্রকল্পকে ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত। গতকাল রাজধানীতে  এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ। সম্মেলনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা (চীন ও বাংলাদেশ) পরস্পরের পাশে ছিলাম এবং আছি। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় চীন। এ ছাড়া চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নিয়েছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশসহ ১৪৯টি দেশ বিআরআইতে যুক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে অবকাঠামোগত বড় প্রকল্প যেমন পায়রাবন্দর, কর্ণফুলী টানেলের মতো প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে চীন। এর মধ্যদিয়ে নিশ্চয়ই এদেশের জনগণ লাভবান হবে। তিনি বলেন, উইঘুর ও চীনা ঋণ ফাঁদ নিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমে প্রায়ই ভুল তথ্য প্রকাশিত হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে আরও গঠনমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পরামর্শ দেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, আমি রংপুরে শুধু তিস্তার জন্য যাইনি। সেখানে চীনা প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে গিয়েছিলাম।

এর আগে একই ভাবে আমি চট্টগ্রাম ও সিলেটে গিয়েছি। এক বছর আগে তিস্তা প্রকল্পের সমীক্ষার জন্য চীন অফিসিয়াল প্রস্তাব পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ প্রকল্প বেইজিং গভীরভাবে মূল্যায়ন করছে। আমি খোলামেলা ভাবে বলতে চাই, এ প্রকল্প ঘিরে স্পর্শকাতরতা আছে এটা আমরা লক্ষ্য করেছি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে উদ্বিগ্ন যে, বাংলাদেশ যদি শেষদিকে এসে এই প্রকল্পে তার অবস্থান পরিবর্তন করে, কেউ এসে যদি বলে এটা চীনের আরেকটি ঋণের ফাঁদ হবে- বাংলাদেশ যদি শেষে ভূ-রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বলে বসে, তাহলে আমাদের জন্য বিব্রতকর হবে! সম্পূরক প্রশ্নে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন মধ্যস্থতা করছে। ইতিমধ্যেই ত্রিপক্ষীয় তিনটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের অগ্রগতি পুরোপুরি প্রকাশ করা এখনই ঠিক হবে না।  সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে চীন শক্ত ভূমিকা রাখলে আমরা অবশ্যই খুশি হবো। এ বিষয়ে আমরা তাদের তাগিদ দেব। তবে কোনো দেশ একটি বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করলে, এতে দুই দেশের বন্ধুত্বে কোনো প্রভাব পড়ে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, চীনা ঋণের ফাঁদ নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। তবে এই ঋণ নেয়ার বিষয়টি নির্ভর করে আমাদের চয়েজের ওপর। তিনি আরও বলেন, চীনা শিক্ষার মান নিয়েও কথা হয়।

কেননা, চাকরির ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে পশ্চিমা দেশের ডিগ্রিকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। সম্মেলনে চীনের ওপর একটি জরিপের তথ্য ও ফলাফল প্রকাশ করা হয়।  এ বিষয়ে তথ্য ও ফলাফল তুলে ধরে সুপারিশে ঢাকা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করার চীনা নীতিতে বাংলাদেশ সবসময় মূল্য দেয় ও সন্তোষ প্রকাশ করে। আঞ্চলিক সহযোগিতার ফ্রেমওয়ার্কে বাংলাদেশকে স্বতন্ত্র ভাবে চীনের দেখা উচিত বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ও এই সংকট নিরসনে চীনের গঠনমূলক ভূমিকা নেয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি। এতে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন, রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, অধ্যাপক এম এম আকাশ ও রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস।