তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো অসুবিধা নেই

তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো অসুবিধা নেইকলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে আয়োজিত সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি-সংগৃহীত

তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো অসুবিধা নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ। শুক্রবার দিল্লি সফর শেষে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে আয়োজিত এক সান্ধ্য কালীন শুভেচ্ছা ও সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে দিল্লি শহরে বাংলাদেশের প্রাপ্তির বিষয়ে এ কথা জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোন অসুবিধা নেই। এখানে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের আমরা সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আশা করছি নিশ্চয়ই ভারতের নির্বাচনের পর এ নিয়ে একটা সমাধানে আমরা পৌঁছাতে পারব এবং সেভাবেই আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন যে ২০২৬ সালে গঙ্গার পানি নবীকরণ করতে হবে সেটি নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি।

এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে কথা বলবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে হাসান মাহমুদ বলেন, এটা ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদেরকে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিজনেস করতে হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখন কিভাবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করবে সেটা কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের খুব আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে এবং উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যে সম্পর্ক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমরা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সংকট কিভাবে এই অঞ্চলে প্রভাব পড়ছে, আমাদের দেশেও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড সদস্য অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ভারতেও ঘটেছে। এই ইস্যু সমাধানে কিভাবে একযোগে কাজ করা যায়, একই সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কিভাবে ফেরত পাঠানো যায় সে ব্যাপারেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা একাধিক ভোগ্য পণ্যের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল। পিঁয়াজ রসুন ডাল সহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। কিন্তু মাঝেমধ্যে ভারতের আভ্যন্তরীণ প্রয়োজনের চাহিদার কারণে অন্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটে। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গোয়েলের সঙ্গে আলোচনা করেছি সে ক্ষেত্রে এ সমস্ত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটি কোটা নির্ধারণ করা যায়। আগামী মাসের রমজানের আগে পেঁয়াজ এবং চিনি যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করতে পারি সেই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত থেকে আমরা ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি করি আর রপ্তানি করি দুই বিলিয়ন ডলারের কিছুটা বেশি। এই বাণিজ্য ভারসাম্য যাতে কমানো যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সংগেও একান্ত বৈঠক করেছেন মন্ত্রী। বৈঠকে প্রতিবেশী মিয়ানমারের অস্থিরতা এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমারের শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারতের সাহায্য সবসময় আমরা চেয়েছি তাদেরকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সবসময় ভারতের সহযোগিতা কামনা করেছি এবারও বিষয়টি সেভাবেই আলোচনা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই’র বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে ছিটমহল সমস্যা ছিল প্রায় ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আমরা সেটিকে সমাধান করতে পেরেছি সে ক্ষেত্রে টাঙ্গাইলের শাড়ির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

এদিকে মন্ত্রীর ভারত সফরের দিনেই পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল সামনে এসেছে। দেশটিতে নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মনোভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক সেটি তাদের জনগণের বিষয়। জনগণের ভোটে যিনি নির্বাচিত হবেন বা সরকার গঠন করবেন আমরা তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মেই বিজনেস করব। আমরা পাকিস্তানের গণতন্ত্রকেই স্বাগত জানাই।

samakal