তিন বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার দেবে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক

তিন বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার দেবে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক.

বাংলাদেশের জ্বালানি অবকাঠামো উন্নয়ন ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আগামী তিন বছরে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৪০০-৫০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেবে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি)। বিভিন্ন খাতের জন্য এ অর্থ দেবে জেদ্দাভিত্তিক এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে একথা জানিয়েছে আইডিবির একটি প্রতিনিধি দল। সংস্থাটির রিজিওনাল হাব ম্যানেজার মুহাম্মদ নাসিস সুলাইমান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

বৈঠক শেষে নাসিস সুলাইমান সাংবাদিকদের বলেন, মেম্বার কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজির (এমসিপিএস) আওতায় ২০২৪ থেকে ২০২৬ পর্যন্ত তিন বছরে বাংলাদেশকে এ সহায়তা দেওয়া হবে। জ্বালানি তেল কেনার জন্য আইএসডিবি গ্রুপের বাণিজ্য অর্থায়নকারী শাখা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) মাধ্যমে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার সীমা বাড়ানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে সুলাইমান বলেন, সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে সার্বিক আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সহায়তার বিষয়গুলো ঠিক করার জন্য আগামী কয়েক বছরের জন্য আইএসডিবির এমসিপিএসকে বিশদভাবে তৈরি করতে হবে। তারা অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের অপেক্ষায় আছেন। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কিছু সমস্যা সমাধানেও সহায়তা বাড়ানো হবে।
আইএসডিবি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখবে উল্লেখ করে সুলাইমান বলেন, ‘আমরা আশা করি, আইএসডিবির কৌশল এবং সরকারের অগ্রাধিকার বিবেচনা করে অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারের সঙ্গেও কাজ করতে সক্ষম হব।’
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেহেতু আইএসডিবি বাংলাদেশের একটি বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী। তারা স্বাস্থ্য, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ইত্যাদি খাতে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। দেশে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ সড়ক পুনর্নির্মাণে সহায়তা করার জন্য সরকার তাদের অনুরোধ করেছে। ইতোমধ্যে সিলেটে এ বিষয়ে একটি জরিপ করেছে তারা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএসডিবি দেশের বিভিন্ন খাতে এ সংস্থা সহযোগিতা করছে। টুইন টাওয়ারের মতো কিছু যে হচ্ছে, সেখানেও তাদের সহায়তা থাকছে। আগামীতেও তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের এ সহযোগিতা বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ বর্তমানে আমাদের প্রচুর অর্থের দরকার রয়েছে।

জ্বালানি তেল কেনায় সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়ে কিনা– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি বলা হয়েছে। আইএসডিবি অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারের সঙ্গে পরামর্শ করে বিদ্যমান সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় বের করবে। ডিসেম্বরে আইএসডিবি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে, সেখানেই বিষয়গুলো চূড়ান্ত হবে। এর আগে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত আইটিএফসি ঋণ নিয়ে সাধারণ তেল আমদানির পর ছয় মাসের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হয়। বছরে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ টন। মোট চাহিদার ৯০ শতাংশই আমদানি করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ টন অপরিশোধিত। অপরিশোধিত জ্বালানির পুরোটাই আইটিএফসির ঋণে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা হয়। আর পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয় প্রায় ৩৯ লাখ টন। পরিশোধিত তেলের মধ্যে আছে– ডিজেল, জেট ফুয়েল, অকটেন ও ফার্নেস ওয়েল।
এদিকে গত এপ্রিলে ২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ঋণ দিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করে আইএসডিবি। দেশের পল্লী ও শহরতলিতে বসবাসরত নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জন্য পরিকল্পিত, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব আবাসন নিশ্চিত করতে চলমান একটি প্রকল্পের জন্য এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে।
আইএসডিবির অর্থায়নে ১৯৯৭ সালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে একটি ২০ তলা বাণিজ্যিক ভবন এবং একটি চার তলা শপিং কমপ্লেক্স নির্মিত হয়। এবার হবে আইডিবি ভবন-২। এটিও রাজধানীর আগারগাঁওয়েই হবে। এর জন্যও সংস্থাটি ডলারে যে ঋণ দেবে, তা পৌনে ২০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। এই ঋণের বিপরীতে কোনো সুদ নেবে না সংস্থাটি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা যায়, মোট ৩৬১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ তলা টুইন টাওয়ার নির্মাণ করা হবে।

samakal