তারল্য সংকটে থাকা বিভিন্ন ব্যাংককে গত বুধবার রেকর্ড ২৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে এক দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এত ধার দেওয়ার নজরি নেই। আগের দিন মঙ্গলবার যার পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ধারের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমানত সংগ্রহ প্রত্যাশিত না হওয়া, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়াসহ কিছু কারণে কোনো কোনো ব্যাংকের তারল্য প্রবাহ কমে গেছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে বাজার থেকে বড় অঙ্কের টাকা উঠে আসছে। চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় সাড়ে ৪৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে উঠে এসেছে ৪৯ হাজার কোটি টাকার মতো। আবার চলতি অর্থবছরের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ২৯ হাজার ৪৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এ দুই উপায়ে বাজার থেকে উঠে এসেছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় সাময়িক চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্য ব্যাংক থেকে ধারের চাহিদা বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন সরাসরি সরকারকে ঋণ দিচ্ছে না। সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে টাকা উঠে আসছে। আবার এখন সরকারকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। এরই মধ্যে নীতি সুদহার (রেপো) বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধারের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এর পরও কোনো ব্যাংক যদি সব শর্ত পূরণ করে টাকার জন্য আসে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক না করতে পারে না। এ অবস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান মুদ্রানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সমকালকে বলেন, বিল ও বন্ডের বিপরীতে ব্যাংক থেকে সরকারকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। আবার ডলার বিক্রির বিপরীত টাকা উঠে আসছে। এখন যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার না দেওয়া হয়, তাহলে সংকট বাড়বে। তাছাড়া একবারে সব দিক দিয়ে সংকোচন করা যায় না। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ধার দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার সাত দিন মেয়াদি রেপোর বিপরীতে ১৯টি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়েছে ৯ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। এক দিন মেয়াদি রেপোর বিপরীতে একটি ব্যাংক ১৫৪ কোটি টাকা নিয়েছে। শরিয়াহভিত্তিক সাতটি ব্যাংক ৬ থেকে ৭ শতাংশ সুদে ১৪ দিন মেয়াদি ধার করেছে ৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। ‘স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি’ হিসেবে একটি ব্যাংক ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে একদিনের জন্য নিয়েছে ১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। আর একদিন মেয়াদি তারল্য সুবিধার আওতায় ১৩টি ব্যাংকে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে নিয়েছে ৮ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানান, অনেকদিন ধরে দেশের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও তা কমানোর কার্যকর উদ্যোগ ছিল না। একদিকে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশে আটকে রাখা হয়। আবার গত অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার যে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল– এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি দেয় ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ঋণ দেওয়া মানে নতুন টাকা ছাপানোর মতো। এ প্রবণতা মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেয়। যে কারণে বেশ আগে থেকে এভাবে ঋণ সরবরাহ না করার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। এতদিন এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিলেও আইএমএফের ঋণের শর্তের কারণে গত জুলাই থেকে সুদহারের সীমা তুলে নতুন ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ৪ অক্টোবর রেপোর সুদহার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সূত্র : সমকাল