১৫ জুলাই ২০২৩, ০৭:০০ পিএম
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, লেভেল প্লেয়িং ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগই হচ্ছে, সংবিধান থেকে এক তরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাদ দেওয়া।
ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি।
দুপুরে জামায়াতের প্রতিনিধি দল বের হওয়ার পর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্থানীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করে এবি পার্টির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
বিকেলে বৈঠক শেষে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, তারা জানতে চেয়েছেন– সামনে যে বাংলাদেশের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেই নির্বাচনের ব্যাপারে কী কী সমস্যা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সে নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হতে পারে। আমরা তাদের বলেছি– বর্তমানে যে রাজনৈতিক সংকটের মূল কারণ হচ্ছে ফ্রি ও ফেয়ার ইলেকশনের পরিবেশ তৈরি না হওয়া।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগটাই হচ্ছে, সংবিধান থেকে এক তরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দেওয়া। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সব দলের সম্মতিতে তাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে সংবিধানে সংযোজন করা হয়েছিল। সেটি বাদ দেওয়ার ফলেই এই রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা তাদের বলেছি– নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হতে হলে একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় বা কেয়ারটেকার সরকারের সিস্টেম লাগবে। সেটি যদি না হয়, তাহলে বিগত ১১টি সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে আটটি দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মতোই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি সাধারণ নির্বাচন তুলনামূলক অনেক বেশি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আগামী দিনে রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে যদি দেশকে রক্ষা করতে হয়, তাহলে এমন একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মতোই নির্বাচনকালীন সরকার অধীনেই নির্বাচন দরকার। সেটি আমরা উপস্থাপন করেছি।
নির্বাচন নিয়ে অবিশ্বাসের জায়গাগুলোও বৈঠকে তুলে ধরেছে এবি পার্টি। সে বিষয়ে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, নির্বাচন আয়োজনের মূল কাজ নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মাঠ প্রশাসন ও জুডিশিয়াল সার্ভিস পর্যন্ত দলীয়করণ এবং বিভিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে দলীয়করণ করা হয়েছে। এসব জায়গায় সংস্কার করতে হবে। না হলে শুধু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যদি নির্বাচনের আয়োজন করা হয়, তাহলে সে নির্বাচন কখনো গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ হবে না। এগুলো স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছি।
অ্যাডভোকেট তাজুল বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের নতুন পলিসি নিয়ে নেমেছে। এখানে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানে বাংলাদেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্ব সঠিক সিদ্ধান্ত যদি নিতে না পারে, তাহলে বাংলাদেশ ৫০ বা ১০০ বছরের জন্য বিপদে পড়তে পারে, তার সার্বভৌমত্ব হারাতে পারে, ব্রিটিশ আমলের ন্যায় স্বাধীনতা হরণ হতে পারে। সেজন্য আমাদের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের বাস্তবতাকে বিবেচনা করে নিতে হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে– আমরা মুক্তবিশ্ব, সমাজতান্ত্রিক নাকি মানবাধিকার হরণকারী উত্তর কোরিয়ার মতো বিশ্বের সঙ্গে থাকব। আমরা আসলে মুক্তবিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে চাই। আমরা আশা করব, সব রাজনৈতিক দল সেই বিজ্ঞতার পরিচয় দেবে। মুক্তবিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে আমাদের দেশ যেন উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে দাঁড়াতে পারে।
তরুণ প্রজন্ম কী ধরনের বাংলাদেশ চায় সেটাও তুলে ধরেছে এবি পার্টি– জানান তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইইউর পক্ষ থেকে গত ৩ জুলাই এক আনুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে এবি পার্টিকে মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এবি পার্টি প্রতিনিধি দল আজ তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করতে ইইউ দপ্তরে আসে। বৈঠকে তাজুল ইসলাম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও ব্যারিস্টার যুবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া এবং সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি।
এর আগে আজ সকাল থেকে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইইউ প্রতিনিধি দল।