- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে মেরে আহত করার তিন সপ্তাহ পরও দেখা যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে তদন্তই শেষ করতে পারেনি। অভিযোগকারী চিকিৎসক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন তারই একদল সহকর্মীর বিরুদ্ধে।
এমনকি থানায় একটি মামলাও করেছেন, যেখানে তিনি অভিযোগে লিখেছেন, তিনি যে আবাসিক হলটিতে থাকতেন সেখানকার বাসিন্দা আরো অন্তত আটজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক তাকে হত্যার উদ্দেশে লাঠি ও রড নিয়ে হামলা চালিয়েছিল তার ওপর। তারা তাকে মারধর করে রক্তাক্ত করে, যে জন্য তাকে হাসপাতালে চিকিৎসাও নিতে হয়।
বাংলাদেশে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ নতুন নয়। ২০১৯ সালের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটে আবরার ফাহাদ নামে এক শিক্ষার্থী টানা নির্যাতনের পর নিহত হলে সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের জন্য আবাসিক হল খোলা রাখা হয়েছে। এসব হলে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনমতো অবস্থান করছেন।
ক্লাস না হলেও অনেকের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে এবং ওই সব পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে দেয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষ।
মামলায় যা বলা হয়েছে :
অভিযোগকারী শিক্ষানবিশ ডাক্তার গত ১৭ জানুয়ারি ঢাকার চকবাজার মডেল থানায় মামলাটি করেন, যেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, গত ১৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে ডেকে নিয়ে ফজলে রাব্বি হলের গণরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানেই তাকে মেরে আহত করা হয়। একপর্যায়ে তার চিৎকারে আশপাশে থেকে কয়েকজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক এসে তাকে উদ্ধার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা দেন।
চিকিৎসা শেষে তিনি থানায় মামলা করেন। এবং ঢাকা ত্যাগ করেন। যে আটজনের বিরুদ্ধে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে তারাও একই মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক বলে উল্লেখ করেন অভিযোগকারী।
শনিবার ঢাকার কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে অভিযোগকারী চিকিৎসক নিরাপত্তাহীনতার কারণে আর ঢাকায় আসতে ভয় পাচ্ছেন। এমনকি তিনি তার মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রেখেছেন। বিবিসির তরফ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে পুলিশ বলছে, এতদিন হয়ে গেলেও সাক্ষীদের অনীহার কারণে তদন্ত এগোচ্ছে না।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুদ হাওলাদার জানান, এই ঘটনায় আটজন শিক্ষানবিশ ডাক্তারসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
তদন্তের জন্য গত বৃহস্পতিবার চারজন প্রত্যক্ষদর্শীকে সাক্ষ্য দিতে থানায় ডাকা হয়েছিল, কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে শেষ মুহূর্তে তারা আর থানায় আসেননি।
তদন্ত কমিটি :
এ ঘটনার পরপরই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিলেও সেটি এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন দিতে পারেনি।
কমিটির সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তারা ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দেবে বলে জানাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
কিন্তু এতদিন হয়ে গেলেও ওই চিকিৎসকের শিক্ষানবিশি করার ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন কিংবা তিনি এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কেন এমন প্রশ্নে জেনারেল হক বলছেন, তার সাথে কর্তৃপক্ষের কয়েক দফা কথা হয়েছে, তিনি কখনো কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানাননি।
সূত্র : বিবিসি