কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, দেখা দিয়েছে যানজট।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রগতি সরণি সড়ক অবরোধ করে ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘কোটা না মেধা মেধা মেধা’, ‘লাঠিসোঁটা, টিয়ার গ্যাস জবাব দেবে বাংলাদেশ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
মিরপুর ১০ নম্বরে শিক্ষার্থীদের অবরোধ
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। সেখানে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিউবিটির (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি) ও বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পর থেকে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন।
পুলিশ বলছে, দুপুর ১২টার পর থেকে কয়েকশ শিক্ষার্থী গোল চত্বরে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন। অবরোধের কারণে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
ঢাবি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের হিড়িক
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে ‘নৃশংস’ উল্লেখ করে ছাত্রলীগের পদ থেকে তারা পদত্যাগ করছেন। গত সোমবার রাত থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-নেত্রীরা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পদ থেকে পদত্যাগকারীরা উল্লেখযোগ্যরা হলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম হৃদয়, একই অনুষদের বিষয়ক উপসম্পাদক জেবা সায়ীমা, সার্জেন্ট জহরুল হক হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ওয়াসিক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব, শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা, বিজয় একাত্তর হল শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপসম্পাদক শাহ সাকিব সাদমান প্রান্ত, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের অর্থ সম্পাদক জুয়েনা আলম মুন এবং একই হলের আইন সম্পাদক সিরাজাম মনিরা তিশা।
ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, যেই ছাত্র সংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়, নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা করে, তারা সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ নয়। এই জন্য তারা ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা অনুচিত বলে মনে করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সহসভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করা শিপন মাহমুদ ফেসবুকে লেখেন, আমি চলমান ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান করছি। ন্যায়ের পক্ষে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শোকজ খাওয়া এবং মুচলেকার মুখে পড়া ছাত্র আমি। আমি আজীবন নজরুল। প্রতিবাদ আমার রক্তে। আমি আজন্ম প্রতিবাদী পুরুষ। আমি মো. শিপন মিয়া, সহ-সভাপতি, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। চলমান যৌক্তিক ছাত্র আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বিজয় একাত্তর হল-এর সহ-সভাপতির পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। অন্যায় আর শিপন এক লাইনে থাকে না।
আরেক পদত্যাগকারী জুয়েনা আলম মুন বলেন, ছাত্রলীগকে ন্যায়ের কাণ্ডারি ভেবে ছাত্রলীগ করতাম। কিন্তু এখন এই সংগঠনের সাথে নিজের সম্পৃক্ততা ছিল এটাও মনে করলে আমার রক্তাক্ত বন্ধুবান্ধবী, সিনিয়র, জুনিয়রদের চেহারা মনে পড়বে। তাই স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে পদত্যাগ করছি।
আরেক নেতা শাহ সাকিব সাদমান প্রান্ত ফেসবুকে লেখেন, আজকের পর থেকে শুরু করে ভবিষ্যতে বাকী জীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নাই। পুলিশ ভেরিফিকেশন, তদবির, কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে অন্য যেকোনো ধরনের অসহযোগিতা ও সকল ধরনের কনসিকোয়েন্স মাথায় রেখে, কারো প্ররোচনায় না, বরং বিবেকের তাড়নায়, ও সজ্ঞানে আমি বিজয় একাত্তর হলের ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করলাম।
কুয়েত মৈত্রী হল থেকে পদত্যাগ করা জুয়েনা আলম মুন ফেসবুকে লেখেন, আমি জুয়েনা আলম মুন, অর্থ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রলীগকে ন্যায়ের কাণ্ডারি ভেবে ছাত্রলীগ করতাম। কিন্তু এখন এই সংগঠনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা ছিল এটা মনে করলেও আমার রক্তাক্ত বন্ধু-বান্ধবী, সিনিয়র, জুনিয়রদের চেহারা মনে পড়বে। তাই স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে পদত্যাগ করছি। আমার সঙ্গে কারো ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই। পদের অব্যাহতির ব্যাপারটা কেউ পারসোনালি নেবেন না। যারা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য তারা সব সময়ই ভালোবাসা পাবেন।
পরিচয় মিলল শিক্ষার্থীদের দিকে অস্ত্র তাক যুবকের
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র তাক করা যুবকের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম হাসান মোল্লা। তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাউছারের ভাগ্নে (বোনের ছেলে)।
নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করা হাসান মোল্লা ছাত্রলীগের সোহাগ-জাকির কমিটির সময় কেন্দ্রীয় সংসদের সহসম্পাদক ছিলেন। তিনি ঢাকা কলেজের ২০০৭-৮ শিক্ষাবর্ষ ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।
গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরই মধ্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করা এক যুবকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
হাসান মোল্লার বাড়ি গোপালগঞ্জ। তিনি বর্তমানে ঠিকাদারি করেন। পিডব্লিউসহ নানা জায়গায় ঠিকাদারি করে বেশ টাকা পয়সা কামিয়েছেন। এ ছাড়া হাসান মোল্লার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রও ছবিটি দেখে নিশ্চিত করেছেন , তিনি হাসান মোল্লা।
এদিকে, মোল্লা আবু কাউছারও সংবাদমাধ্যমের কাছে ছবির যুবকের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হাসান মোল্লা আমার ভাগিনা।
এ বিষয়ে কথা বলতে বাংলা আউটলুক বেশ কয়েকটি নাম্বার সংগ্রহ করে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু নাম্বারগুলো বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এই বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা : এবার মাঠে নামছে ছাত্রদল
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বুধবার (১৭ জুলাই) সারাদেশে সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) নয়াপল্টনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা দেন ছাত্রদল নেতারা।
তারা বলেন, সাংগঠনিকভাবে নয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আজ থেকে মাঠে থাকার কথা জানিয়েছে ছাত্রদল।
কোটা আন্দোলন যৌক্তিক সমাধানের দাবি জানিয়ে ছাত্রদল নেতারা অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ্বাদ্যালয়ের প্রশাসনের সহায়তায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, কোটা সংস্কারের দাবি করা দেশপ্রেমিক ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ওপর গত ১৫ জুলাই সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নারকীয় হামলা চালায়। ইতোমধ্যে হামলা ও হামলাকারীদের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও আপনাদের কল্যাণে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহের কল্যাণেও সারাদেশের মানুষ এ বিষয়ে অবগত হয়েছেন।
তিনি বলেন, বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলসহ মল চত্বর, ভিসি চত্বর এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, ছাত্রলীগের এই নির্বিচার হামলা থেকে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে কেউই রক্ষা পায়নি। বিশেষ করে, আমাদের শিক্ষার্থী বোনদের উপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বর্বরতম হামলা চালিয়েছে। সারাদেশে এসব হামলায় অন্তত এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে শতাধিক নারী শিক্ষার্থী রয়েছে। কয়েকজনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক; অনেকেই এই মুহূর্তে বিভিন্ন হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন এই অবৈধ সরকারের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখার গত পনেরো বছরে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। রাষ্ট্রের সকল অন্যায়, অত্যাচারের পক্ষে এই সংগঠনটি লাঠিয়ালের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ছাত্রলীগের এহেন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ বিঘ্নিত হবার পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারই সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হচ্ছে গত ১৫ই জুলাই, ২০২৪। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে আজ থেকে কোটা প্রথা বাতিলের এই দাবিতে সবসময় মাঠে থেকে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। একইসাথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আন্দোলনরত সকল শিক্ষার্থীকে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার মূল উৎস তথা অবৈধ ফ্যাসিবাদী এই সরকার হটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা তথা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যয়বিচারভিত্তিক একটি সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
পুলিশের গুলিতে জাবি অধ্যাপক আহত
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছিল। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দুই অধ্যাপকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী।
সোমবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক লুৎফুল-ই এলাহী গুরুতর আহত হন। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত হন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আওলাদ হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাতভর সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা উপাচার্য অধ্যাপক মো. নুরুল আলমের বাসভবনে আশ্রয় নিলে তাদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। প্রথমে পুলিশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দিলে পুলিশ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন।
আন্দোলনে হামলা কুবি ছাত্রলীগ নেতাদের গণহারে পদত্যাগ
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কোটা আন্দোলন দমন করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের হামলায় ইতিমধ্যেই অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর নিন্দা জানিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গণহারে পদত্যাগ করছেন।
গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল, শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছেন।
শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হলের আইন বিষয়ক সম্পাদক বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি ছিল আমার পছন্দের জায়গা, ভালোবাসার স্থান। আজকের পর থেকে ছাত্রলীগের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। কেউ আমাকে ডাকবেন না। দত্ত হল কারও বাপের না।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যে সংগঠনের কেউ মারা গেলে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে—এমন সংগঠনে আমার নাম না থাকুক।’
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘আমি লজ্জিত যে আমি এমন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম।’
২০২১-২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানজিনা আক্তার বলেন, ‘আমিসহ নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের ১৬তম ব্যাচের সকল ছাত্রীলীগকর্মীরা ছাত্রলীগ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। আজ থেকে এই সংগঠনের কোনো প্রোগ্রামে আমরা যাব না।’
তিনি বলেন, ‘একজন ছাত্র হয়ে আরেকজন ছাত্রের শরীরে এমন নির্মমভাবে যারা আঘাত করতে পারে সেই দল থেকে ইস্তফা দিলাম।’
Bangla Outlook