ঢাকার গণতন্ত্রে দিল্লির অস্থিরতা

  • আবুল কালাম মানিক
  •  ২৩ মে ২০২৩, ২০:০৪

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিকাশ এবং নাগরিক ও মানবাধিকার সুরক্ষা নয়াদিল্লির জন্য ক্রমে বহুমাত্রিক উদ্বেগের কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত বিগত দু’টি একতরফা ও প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভারতের আন্তরিক সমর্থন লাভ করলেও তা দেশে গণতন্ত্রের পরিসর ব্যাপকভাবে সঙ্কুচিত করেছে। প্রহসনের নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা ঘরে-বাইরে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। ফলে দেশ শাসনে দলটির বৈধ অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। এমতাবস্থায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন ভারতের সুশীল সমাজের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ আতঙ্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সাম্প্রতিক ঘোষণা। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে।’

বেশ কিছু দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি বিশ্ব মানের অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছে। এতে সুশীলদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পারদ আরো উপরে উঠে গেছে। এ আতঙ্ক নিরসনে সরকারের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের আশ্বাসও কাজ করছে না। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ভারতীয়দের নিরন্তর আশার বাণী শুনিয়ে গেলেও তাদের প্রকাশ্য ঘোষণায় আস্থা ফিরে পাচ্ছে না নয়াদিল্লি। নিকট অতীতে তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ভারতকে পাশে পেলে আমরা শক্তি পাই। আমরা ভারতকে বলেছি, শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করার দরকার তাই করতে হবে।’ অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে অজানা আতঙ্ক ততই গ্রাস করছে উভয়পক্ষকে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিরোধী দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন মোটেও সুনজরে দেখছে না ভারতীয় সুশীলরা।

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের ঘোষণায় নয়াদিল্লির প্রচণ্ড মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সুজাতা সিং মডেলের আরেকটি হস্তক্ষেপ ভারতীয় কূটনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও সুশীলদের একান্ত কাম্য হলেও বর্তমান বাস্তবতা এই যে, কোনোভাবে অত্যাসন্ন নয় এমন উপলব্ধি এদের রয়েছে। অনেকের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের ভূরাজনৈতিক প্রত্যাশা বড় ধরনের হোঁচট খেতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাওয়া-পাওয়া, আবেগ ও অনুভূতি উপেক্ষা করে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাথে ‘ঘোষিত’ ঐতিহাসিক সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত আপদ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। ভারতীয় বুদ্ধিজীবীরা এখন বলতে শুরু করেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে বিশেষ সম্পর্ক বজায় রেখে আগত দিনগুলোতে একতরফা স্বার্থ বজায় রাখা খুব কঠিন হবে। এখন অপেক্ষাকৃত স্পষ্ট ভাষায় বলা হচ্ছে, ‘এ অঞ্চলের পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে শুধু শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করে ভারত বাংলাদেশে তার স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে না।’ এ উদ্বেগ ও হতাশার কথা সম্প্রতি প্রায়ই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তাদের কণ্ঠে।

সম্প্রতি আনন্দবাজার ও হিন্দুস্তান টাইমসসহ ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও নিবন্ধে শেখ হাসিনা সরকারের প্রত্যাশা তুলে ধরে বলা হচ্ছে, ‘পশ্চিমা চাপে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ।’ দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, শেখ হাসিনার সরকার বিগত ১৫ বছরে ভারতকে যা দিয়েছে তা নজিরবিহীন। এর বিনিময়ে ভারতের উচিৎ হবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে আমেরিকা ও ইউরোপের চাপ মোকাবেলায় ঢাকাকে সাহায্য করা। তা ছাড়া, অবিনাশ পালিওয়াল ও শ্রীরাধা দত্তের মতো গবেষক এবং রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক তাদের নিবন্ধে বলেছেন, ভারত সবসময় আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলেছে। তবে আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার সময়কালের পর ভারত নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পর্যালোচনায় শ্রীরাধা দত্ত এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, সময় গড়ানোর সাথে সাথে আওয়ামী লীগের অবস্থান সুসংহত হয়েছে আর বিএনপি নিমজ্জিত হয়েছে পতনের মুখে। তবে তিনি বিরাজমান বাস্তবতার সমর্থনে বলেছেন, এ বছর আরেকটি একতরফা নির্বাচনের বৈধতা আদায় খুব কঠিন হবে শেখ হাসিনার জন্য। একই সাথে বিএনপিকে কিছু সৎ উপদেশও দিয়েছেন। শ্রীরাধা বলেছেন, বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য খুব দুর্বল একটি দল। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দলটির কিছু আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে টিকে থাকা দরকার।

ভারতীয় এই বিশ্লেষক বাংলাদেশে আরেকটি একতরফা ও অবৈধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেই থেমে যাননি, তিনি অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন, ভারতের সমর্থনপুষ্ট ধারাবাহিক একতরফা-অবৈধ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিজের অবস্থান বেশ সুসংহত করে ফেলেছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে টিকে থাকতে হলে আওয়ামী লীগের সাথে আপস করতে হবে। দলটিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সরকারি দলের অনুকম্পায় সামান্য কিছু আসন নিয়ে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে।

ইতোপূর্বে শ্রীরাধা দত্তের কথারই হুবহু প্রতিফলন আমার লক্ষ করেছি বাংলাদেশে ভারতের সর্বশেষ হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর বক্তব্যে। দোরাইস্বামী ঢাকায় তার দায়িত্ব পালনকালে বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের সম্পর্ক হলো ঐতিহাসিক। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের সাথে এক বৈঠকে দোরাইস্বামী ওই মন্তব্য করেছিলেন। ভারতের ক‚টনীতিকরা সবসময়ই আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের বিকল্প হিসেবে গণ্য করে থাকেন। দোরাইস্বামীও তার ব্যতিক্রম কিছু নন। ভারত একটি রাষ্ট্র আর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের প্রায় ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের একটি। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি সমর্থন করে না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, ভিনদেশী একটি রাজনৈতিক দলের সাথে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক হয় কিভাবে? তবে ভারত বাংলাদেশের স্বার্থের চেয়ে আওয়ামী লীগের স্বার্থ সুরক্ষায় অধিক আগ্রহী।

‘দ্রুত সঙ্কটের দিকে ধাবিত হচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধে অবিনাশ পালিওয়াল মৃতপ্রায় বিএনপির জেগে ওঠায় অনেকটা হতাশাই ব্যক্ত করে ফেলেছেন। সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখার বিপদ সম্পর্কেও নয়াদিল্লি প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ঢাকায় যে সরকার যত বেশি ভারতবিরোধী তার স্থায়িত্ব হবে তত কম।’ তিনি হুমকির সুরে বলেছেন, পশ্চিমারা তারেক রহমানকে ক্ষমতায় আনলেও সরকারের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে পারবে না। অবিনাশ ক্ষমতাসীন সরকারকে নয়াদিল্লির এজেন্ডাও বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকতে হলে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেয়া চলবে না। পাকিস্তানি উগ্রবাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। চীনের প্রভাব সীমিত করতে হবে। বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করে চীন ফায়দা হাসিল করতে পারে এই আশঙ্কার কথাও ব্যক্ত করা হচ্ছে অবিরত। সঙ্কট নিরসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে আলোচনায় বসার প্রস্তাবও দেয়া হচ্ছে ভারতীয় বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে। তাদের পর্যবেক্ষণ ও স্ববিরোধী যুক্তি থেকে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে ভারতের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তারা ইদানীং মাত্রাতিরিক্ত বেসামাল কথাবার্তা বলছে। তাদের সম্মিলিত উপলব্ধি এটিই যে, বাংলাদেশে সত্যিকারের নির্বাচন ব্যবস্থা কিংবা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে ভারতের সর্বনাশ হবে।

ভারতীয় গণমাধ্যম অবশ্য ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকারের সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিপদ আঁচ করেছিল আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে। যার ইঙ্গিত পাওয়া যায় ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টেটসম্যানের সম্পদকীয়তে। এতে বলা হয়, ‘দুঃখজনক যে ভারতকে তার পূর্ব প্রান্তে এমন এক প্রতিবেশীর সাথে কারবার করতে হবে, যার ক্ষমতার ভিত্তি হলো গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতির প্রতি পরিহাস। এক দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে এই ধোঁকাবাজি পূর্ণ হলো। হ্যাঁ, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষিক্ত করার যথেষ্ট সংসদ সদস্য এখন সংসদে রয়েছেন। কিন্তু পূর্বনির্ধারিত ফলাফল দেশে ও বিদেশে এই সরকারের বৈধতার ঘাটতি ঘটাবেই। আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে সক্ষম একটি নতুন নির্বাচন করার পরামর্শ দেয়া যত সহজ, তা বাস্তবায়ন করা ততই কঠিন। মর্মান্তিক বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের রাজনীতি অতিমাত্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে।’

কিন্তু এটিই স্বতঃসিদ্ধ যে, ভারত সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েই বাংলাদেশের রাজনীতিকে অকার্যকর করে দিয়েছে। পরপর দু’টি প্রহসনের নির্বাচনে প্রণোদনা দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। ভারত একতরফা স্বার্থ উদ্ধারের স্থায়ী নীতি গ্রহণ করেছে। ফলে দিল্লি প্রশাসন উপরোক্ত সাবধানবাণী ও নির্মম বাস্তবতার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে শেখ হাসিনা সরকারকে একদলীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েমে নিঃশর্ত সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনকে সফল করতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতেও দ্বিধা করেনি। নির্বাচনের প্রাক্কালে বিনা নোটিশে ঢাকায় ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংয়ের ঝটিকা সফর ছিল বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যা ও ভোটাধিকার হরণের এক জঘন্য উদাহরণ।

বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের বর্জনের মুখে ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনটি পণ্ড হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে সুজাতা সিং ঢাকায় আসেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একান্ত বৈঠক করেন। সুজাতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাথেও বৈঠক করেছিলেন। বৈঠক শেষে এরশাদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সুজাতা তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য চাপ দিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এরশাদকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘তার দল নির্বাচনে যোগ না দিলে অথবা নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত না বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের অথবা জামায়াত-শিবিরের উত্থান হবে।’ অতীব বেদনার বিষয় এই, ভারত জামায়াত-শিবির উত্থানের জুজুর ভয় দেখিয়ে একতরফা নির্বাচন মাধ্যমে বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ কায়েমের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। নিজস্ব হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি নয়াদিল্লি। ওই সফরে সুজাতা সিং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে সুর মিলিয়ে সংবিধানের দোহাই দিয়েছিলেন। এতে প্রায় পণ্ড হয়ে যাওয়া একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনটি শেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠিত হয়।

বিস্ময়ের ব্যাপার এই, সুজাতাকে স্বাগত জানাতে আওয়ামী লীগ সরকার নিজেই প্রটোকল ভঙ্গ করেছিল। তাকে মন্ত্রীর মর্যাদায় স্বাগত জানানো হয়েছিল। ভিয়েনা সনদের তোয়াক্কা না করে সুজাতা সিং সংবাদমাধ্যমের সামনেও হাজির হয়েছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভারত সংবিধানের অধীন বেশির ভাগ দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ কামনা করে। ভারত বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা চায়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা কামনা করে।

বিশ্লেষক ও সুশীল সমাজের অনেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সুজাতা সিংয়ের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে হতবাক হয়েছিলেন। তাদের সবার অভিন্ন জিজ্ঞাসা ছিল, সুজাতা কেন বলেছিলেন ইসলামপন্থী বা জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় আসবে। তিনি কিভাবে জেনেছিলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে জামায়াত-শিবিরের উত্থান হবে। তিনি বেশির ভাগ দল বলতে কী বুঝিয়েছিলেন। সুজাতার বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়নি যে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণ জরুরি। তার সফর এটিই প্রমাণ করেছে, ভারত বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে মোটেও বিশ্বাসী নয়। নিজে একটি স্বীকৃত গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের চর্চাকে অসম্ভব করে তুলেছে।

আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই এমন বাংলাদেশ ভারত দেখতে চায় না। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের ভ‚মিকা খতিয়ে দেখলে ভারতের এই মনোভাব স্পষ্ট বোঝা যায়। যখনই আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত হয় ঠিক তখনই ভারত ছুটে আসে দলটিকে উদ্ধার করার জন্য।