ড. ইউনুস কী করেছেন- কী করেননি ?

BY Ashir Ahmed

প্রফেসর ইউনুস আর গ্রামীণ ব্যাঙ্ক মিলে নোবেল পান ২০০৬ সালে।  এরপর মাঝে মাঝে এই পুরস্কার সেই পুরস্কার এর খবর আসে বিদেশ থেকে। জেনিফার লোপেজ, শ্যারন-স্টোন, মেসির মত সেলিব্রিটিরা ড. ইউনুসের সাথে ছবি তুলে পোস্ট দেন। ভারতের লোকসভা, জাপানের কেবিনেট, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট, নেলসন মেন্ডেলা থেকে শুরু করে মাইক্রোসফটের বিলগেটস, গুগোল, ফেসবুক, খান একাডেমীর সিইও রা তার কথা শোনার জন্য উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন। কী আছে তার মধ্যে? কী কথা শুনতে চান?

অপরদিকে দেশের রাজনীতিবিদরা মাঝে মাঝে ড. ইউনুসকে নিয়ে নানা কথা বলেন। কোন ট্যু শব্দটি করেন না। দেশে এতো দুর্যোগ গেল। বাংলাদেশের মিডিয়ায়  তার অবস্থান বা বক্তব্য উচ্চারিত হলো না। কোথায় থাকেন তিনি?  দেশের জন্য কি করছেন? এই প্রশ্ন হাজার মানুষের।

গ্রামীণ কমিউনিকেশান্স এর সাথে আমাদের কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা যৌথ-গবেষণার  চুক্তি সাক্ষরিত হয় ২০০৭ সালে। সেই সুবাদে ড. ইউনুসের সাথে কাজ করা এবং তার ভিশন ও মিশন এর সাথে পরিচিত হই।  তার গাইড্যান্স পাবার সৌভাগ্য হয় ।

প্রথম ৩টি বছর গ্রামীণকে নিয়ে পড়াশুনা করেছি। আজো করছি। তার হাত ধরে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, গ্রামীণ শক্তি, গ্রামীণফোন সহ ৫০ টির বেশি প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে।  ৩০ বছরের কার্যক্রম পৌঁছেছে বাংলাদেশের ৮৫ হাজার গ্রামে, বিশ্বের ১৮০টি দেশে, ১০০ কোটি মানুষের কাছে।

বাংলাদেশে এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নেই, গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক নেই, অথবা গ্রামীণ শক্তির সোলার হোম সিস্টেম ছিলনা। বিশ্বের ১১৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. ইউনুসের “সামাজিক ব্যবসা” র কনসেপ্টের ওপরে গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। ৩ বছরে কতটুকু শেখা যায়? একটা শিখতে শিখতে আরেকটা কার্যক্রম শুরু হয়। শেখার কাজ আর শেষ হয়না।

যতটুকু শিখেছি তার থেকে কিছু তথ্য জানানোর চেষ্টা করবো এই লেখায়।

১. ড. ইউসুনস কোথায় থাকেন? কিসে এতো ব্যস্ত থাকেন?

ড. ইউনুস ঢাকাতেই থাকেন। দুই ঈদ পারতপক্ষে চট্টগ্রামে পরিবারের সাথে কাটান। বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোন দেশের পাসপোর্ট নেই । সুতরাং বিদেশে বসবাস করার প্রশ্ন ওঠেনা। নোবেল পাবার পর বিদেশ ভ্রমণ বাড়লে ও করোনাকাল পুরোটাই ঢাকায় কাটিয়েছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দুনিয়া ভারচুয়ালি চষে বেরিয়েছেন। সকালে আমেরিকার মিটিং, দুপুরে এশিয়ার, বিকালে ইউরোপের। একদিনেই তিন মহাদেশ কাভার করেছেন। টোকিও অলিম্পিকের সময়ে অলিম্পিক লরেল পুরস্কার ও ঢাকায় বসে নিয়েছেন।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান বিস্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর (২০১২-২০১৮), বর্তমানে মালয়েশিয়ার আল বুখারি বিশ্ববিদ্যালয়ের  চ্যান্সেলর এর দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকাতে বসেই।  ১১৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানে সোশাল বিজনেস গবেষণা কেন্দ্র আছে সেখানে বছরে একবার করে মিটিং করলে মিটিং সংখ্যা দাড়ায় ১১৬টি। দেশে ৩০টি কোম্পানির বছরে একবার করে বোর্ড মিটিং করলে সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০টি। তারপর আছে হাজার হাজার স্পিচ রিকোয়েস্ট। সৌজন্য সাক্ষাৎ। বই লেখা। শখের সামাজিক ব্যবসা নিয়ে গবেষণা আর সরাসরি কয়েকটি কোম্পানির দেখভাল করা। জাতিসঙ্ঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানের এডভাইজরি কমিটির দায়িত্ব পালন করা। এতেই বছর কেটে যায়।

২. নোবেল পুরস্কার পাবার আগে বা পরে দেশের জন্য কি করেছেন?

ক. বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সহ ৫০ টির বেশি কোম্পানি বানিয়েছেন ড. ইউনুস। কোন কোম্পানিতে তার নিজস্ব কোন শেয়ার নেই। সুতরাং কোন লভ্যাংশ ওনার পকেটে ঢোকে না। যখনই দেশের গরীবদের একটা সামাজিক সমস্যা দেখেছেন, সেটার সমাধানে একটা বিজনেস মডেল বানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মালিকানায় কক্ষনো নিজেকে জড়াননি। দেশে বিদেশে কোথাও নিজের নামে কোন জায়গাজমি, গাড়ি বাড়ি নেই।

খ. দেশের বাইরে গ্রামীণ অথবা ওনার নামে যত প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে সব গুলো তৈরি হয়েছে সেই দেশের অথবা অন্য দেশের ফান্ড থেকে। বাংলাদেশ থেকে একটি টাকা ও বাইরে যায়নি। যেমন গ্রামীণ আমেরিকা, গ্রামীণ চায়না, গ্রামীণ নিপ্পন, ইউনুস থাইল্যান্ড, ইউনুস জাপান এমন কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠান।

নোবেল পুরস্কার গ্রহণের বক্তৃতায় “সামাজিক ব্যবসা” র কথা উচ্চারণ করেন ড. ইউনুস। এ নিয়ে বই লিখেন ২০০৯ সালে। ৩০ বছরের অভিজ্ঞতার সারাংশ এসেছে সামাজিক ব্যবসার থিওরিতে। মানুষ প্রশ্ন করে। কেউ বলেন এসব ফিকশন, আকাশ কুসুম কল্পনা। এভাবে আবার ব্যবসা হয় নাকি?  উনি বলেন, আসেন করে দেখি। লেটস ট্রাই। সবাইকে ডেকে নিয়ে আসেন বাংলাদেশে।

ইন্টেলের সিইও প্রশ্ন তুললেন। তাকে ঢাকায় নিমন্ত্রণ করলেন। বানালেন গ্রামীণ-ইন্টেল সামাজিক ব্যবসা।

ফ্রান্সের ড্যানোন কোম্পানির সিইও প্রশ্ন তুললেন। তাকেও ঢাকায় নিয়ে এলেন। বানালেন গ্রামীণ-ড্যানোন । অপুষ্টিতে ভোগা বাচ্চাদের জন্য তৈরি হল শক্তি দই। বগুড়ায় তৈরি হল ফ্যাক্টরি। ফ্রান্সের ফুটবলার জিদান ঢাকায় এসে উদ্বোধন করেন ২০০৭ সালে। এই দই অন্য রকম। বাচ্চাদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে ভরপুর। এজন্য নাম দেয়া হয়েছে শক্তি দই। গ্রামে বিক্রি হয় অল্প দামে, যাতে গরীব পরিবারের ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে থাকে। আর শহরে বিক্রি করেন বেশি দামে। অর্থনীতির ভাষায় একে বলে ক্রস-সাবসিডাইযেশন। লাভ লোকসানে কাটাকাটি। কোম্পানি প্রফিট ম্যাক্সিমাইযেশনে যাচ্ছে না। সামাজিক ইমপ্যাক্ট কতটুকু তৈরি হল, কতজন শিশুকে অপুষ্টি থেকে মুক্ত করা গেল সেটাই লক্ষ্য। ৩ লক্ষ শিশুরা উপকৃত হলো। তৈরি হলো ৩৫০টি জব।

এলেন ফ্রান্সের ভিওলিয়া। বানালেন গ্রামীণ-ভিওলিয়া । বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। সবজায়গায় পানি আছে কিন্তু বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। এক টাকায় এক কলসি বিশুদ্ধ পানি দেবেন। প্ল্যান্ট তৈরি হল দাউদকান্দির গোয়ালমারিতে। মেঘনা নদীর পানি বিশুদ্ধ করে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেয়া শুরু করলেন। অনেকটা গ্যাস স্টেশন স্টাইলে। পাড়ায় পাড়ায় পানি স্টেশন। প্লাস্টিক বোতলে ভরে পানি বিক্রি করলে দাম বাড়বে। পরিবেশ নষ্ট হবে। সে জন্যই কলসি প্রকল্প। হাজার বছর ধরে যে গ্রামীণ ঐতিহ্য তৈরি হয়েছে সেই ঐতিহ্য ও বজায় রইলো। ৫টি গ্রামের ১ লক্ষ লোক এই পানি সাপ্লাই এর আওতায় এলো।

জাপানের সাথে যেসব প্রকল্প তৈরি হল :

গ্রামীণ ইউনিক্লো :

গ্রামের মা-বোনেরা স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে যে বস্তুটি ব্যবহার করেন তা মোটেই স্বাস্থ্য সম্মত নয়। অনেক রোগবালাই তৈরি হয়। উদ্দেশ্য ছিল অল্প দামে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করবেন। তবে শুরু করলেন অন্যান্য পোশাক দিয়ে যাতে ব্রান্ডিং টা তৈরি হয়। তাহসান ছিলেন তার ব্র্যান্ড এম্বেসেডর। দুর্ভাগ্য যে, এ বছর গ্রামীণ ইউনিক্লো বাংলাদেশ থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে গেছে।

গ্রামীণ ইউগ্লেনা :

গ্রামের কৃষকদের কে ট্রেনিং দিয়ে মুগডাল তৈরি করে জাপানের মার্কেটে বিক্রি করবেন। বাংলাদেশে ৬ হাজার ৫০০ কৃষকদের ট্রেনিং দেয়া হল। লোকাল মার্কেটে যা দাম তার চেয়ে  ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দরে কেনা হয়  কৃষকদের কাছ থেকে। জাপানে রফতানি শুরু করেন ২০১২ সাল থেকে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৪৯ মেট্রিক টন রফতানি হয়েছে। জাপান এই মুগডাল থেকে স্প্রাউট বানিয়ে বিক্রি করেন জাপানের সুপার মার্কেটে। উইন উইন ব্যবসা।

গ্রামীণ অটোমেকানিক স্কুল :

একটা ভোকেশনাল স্কুল বলতে পারেন। গাড়ি মেরামত করা শেখানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে জাপানের নিসসান, টয়োটা কোম্পানি গুলোতে সরাসরি চাকুরী নিয়ে যায়।

বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারদের কথা আমরা সবাই জানি। এই বেকারদের মধ্যে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মহিলা সদস্যদের সন্তানরা ও আছেন। মূলত ওনাদের কথা মাথায় রেখে তৈরি হল কয়েকটি কার্যক্রম-

গ্রামীণ ক্যালেডনিয়ান কলেজ অব নার্সিং :

সাধারণত একজন ডাক্তারের সাথে ৩ জন নার্স থাকেন। বাংলাদেশে ৩ জন ডাক্তারের জন্য আছেন ১ জন নার্স। তৈরি হল এই নার্সিং কলেজ। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ক্যালেডনিয়ান বিস্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথ উদ্যোগে। ২০১০ সাল থেকে যাত্রা শুরু। গত ৬টি ব্যাচে ৭৪০ জন নার্স পাশ করে বেরিয়েছে। শুধুই কি সংখ্যা?  প্রতি বছর দেশের সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১০ জনের মধ্যে গড়ে ৫টি পজিশনই এই কলেজের। গতবছর ২০২২ সালের র‍্যাঙ্কিং এ বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নার্সিং কলেজ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পাশ করে সাথে সাথেই চাকুরী। বৃত্তি নিয়ে মাস্টার্স, পিএইচডি করতে যাচ্ছেন ইউকে, ইউএসএ, জাপান সহ কয়েকটি দেশে। দেশে ফিরে  ফ্যাকাল্টি হিসাবে জয়েন করবে-এটাই প্রত্যাশা।

গ্রামীণ কল্যাণ :

গ্রামের অলিগলিতে স্বাস্থ্য সেবা দেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্র বানিয়েছেন ১৪৫ টি। বছরে ৭৬ লক্ষ লোক নেন এই স্বাস্থ্য সেবা। গরীবদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা সম্ভবত এই প্রতিষ্ঠানটিই প্রথম চালু করে। ৭৩ হাজার পরিবার আছেন এই বীমার আওতায়। পৃথিবীতে প্রতি বছর ১০ কোটি পরিবার নিঃস্ব হয় কেবল মাত্র চিকিৎসা ব্যয় বহন করার কারণে। বাংলাদেশ তার ব্যাতিক্রম নয়। কল্যাণ শুরু করছেন ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা।

গ্রামীণ হেলথকেয়ার সার্ভিস :

বাংলাদেশের গ্রাম গুলোতে চক্ষু সমস্যার শেষ নাই। সামান্য একটা ক্যাটার‍্যাক্ট অপারশনে ঢাকার হাসপাতাল গুলোতে ২০-২৫ হাজার টাকা গুনতে হয়। গ্রামের গরীব চাচা-চাচি, নানা-নানীরা কি করবেন? বগুড়া, বরিশাল, সাতক্ষিরা সহ ১২ টি জায়গায় তৈরি করেছেন ১২ টি চক্ষু হাসপাতাল। সবাইকে ঢাকা আসতে হবে কেন? যেখানে সমস্যা সেখানেই সমাধান। এ যাবত ২৫ লক্ষ রোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১ লক্ষ ক্যাটারাক্ট রোগী। ৬ লক্ষ গরীব রোগী পেয়েছেন বিনা মূল্যে চিকিৎসা।

গ্রামীণ ব্যাঙ্ক :

গরীবদের জন্য গরীবদের দ্বারা পরিচালিত গরীবদের মালিকানার ব্যাঙ্ক। গরীব সদস্যদের  মালিকানা ৭৫%। সরকারের মালিকানা ২৫%। সেই অনুপাতে ১২ জন বোর্ড মেম্বারদের মধ্যে এখনো ৯ জন মহিলা সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব করেন আর ৩জন আসেন সরকারি মহল থেকে। মোট সদস্য সংখ্যা এখন ১০ মিলিয়ন। ২০০৬ সালে ছিল ৬ মিলিয়ন। এখনো বেড়েই চলেছে। এটার দুরকম মানে হতে পারে। দেশে গরীবের সংখ্যা বেড়েছে। অথবা কাস্টমার সেটিস্ফেকশন বেড়েছে। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক বিনা সুদে ও ঋণ দেন। সেটা হলো ছাত্রদের জন্য, ভিক্ষুকদের জন্য।  আজ অবধি ২১,৩৮৩ জন ভিক্ষুক স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়েছেন। শিক্ষা ঋণ নিয়ে উচ্চশিক্ষা পেয়েছেন লক্ষাধিক ছাত্র ছাত্রী।

গ্রামীণ ট্রাষ্ট  :

“চাকুরী খুঁজবো না চাকুরী দেব” কনসেপ্টে শুরু করলেন নবীণ  উদ্যোক্তা তৈরি প্রকল্প। সিলিকন ভ্যালিতে যেভাবে উদ্যোক্তা তৈরি হয় অনেকটা একই সিস্টেম। শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে ডিজাইন ল্যাব এর মাধ্যমে। তরুণ উদ্যোক্তারা আইডিয়া নিয়ে আসবেন। পিচ করবেন। প্রায় সাথে সাথেই ইনভেস্টমেন্ট সিদ্ধান্ত। সিলিকন ভ্যালির  সাথে তফাত হল-

সিলিকন ভ্যালি:  বিজনেস শুরু করতে লাগে কয়েক মিলিয়ন ডলার। অনেক রিস্ক। সাকসেস রেট ১০%। আইপিও তে যাওয়া মানে লটারি পেয়ে যাওয়া। লাভ যা হবে তা ভাগাভাগি হবে ইনভেস্টরদের  মধ্যে।

নবীণ উদ্যোক্তা:  শুরু হয় হাজার খানেক ডলার দিয়ে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। সাকসেস রেট ৯৬%। লাভের ১০০% উদ্যোক্তার নিজস্ব। সুদের কোন ব্যাপার নেই। ইনভেস্টর কেবলমাত্র যেটাকা ইনভেস্ট করেছেন তা ধাপে ধাপে নেবেন। পৃথিবীতে এমন ও ইনভেস্টর আছেন যারা টাকা বানানোর জন্য ইনভেস্ট করেন না। টাকাটা কাজে লেগেছে , মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে এটা দেখেই তৃপ্তি পান। ইনভেস্টমেন্টের টাকাটা ফেরত এলে সেই টাকা দিয়ে আরেকটা সামাজিক সমস্যা সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

বর্তমানে বাংলাদেশের ৫৪টি জেলায় ২২৮ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরির প্রকল্প এগিয়ে চলছে। হাজার হাজার তরুণরা প্রতিদিন আইডিয়া নিয়ে আসছেন।  শুধু বাংলাদেশেই নবীণ উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে দেড় লক্ষ। অর্ধেক তার নারী সংখ্যা আর বাকি অর্ধেক নর। হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে মিলিয়নে পৌছবে। বিনিয়োগ হয়েছে  দেড় হাজার কোটি টাকা। গড়ে উদ্যোক্তা প্রতি ১ লক্ষ টাকা। এই গতিতে এগুতে থাকলে উদ্যোক্তা তৈরিতে একটা একক প্রতিষ্ঠানের জন্য হয়তো আরো একটা বিশ্ব রেকর্ড হবে। আরো একটা বিশ্বমানের পুরস্কার আসবে। হয়তো বা আরো একটা নোবেল।

৪০ শতাংম মানুষ প্রকাশ্যে খুশি হবে। ৪০ শতাংশ চুপ করে থাকবে। ১০ শতাংশ কৌতূহলী হয়ে বিজনেস মডেল অথবা ফিলসফিটা  নিয়ে পড়াশুনা করবে। বাকি ৫ শতাংশ খুঁত খুঁজবেন, আর ৫ শতাংশ ট্রল করবেন। আপনি কোন দলে পড়বেন-সেটা খুঁজে দেখার দায়িত্ব আপনার।

উপরে যা তথ্য দেয়া হল – তা শুধু আমার জানার গণ্ডির ভেতরে। যারা বলেন, বাংলাদেশের জন্য কিছুই করেন নি, তাদের জন্য বলছি- ভাই চশমা পাল্টান। একটু ইন্টারনেট সার্চ করুন। বাংলাদেশে একজন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেখান যিনি এতো গুলো ইমপ্যাক্ট তৈরি করেছেন। এতো গুলো বিদেশি ব্র্যান্ড কোম্পানিকে জয়েন্ট ভেঞ্চারে বাংলাদেশে এনেছেন। এত এত মানব সম্পদ তৈরি করেছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা কোন কিছুই নিজের কোন আর্থিক লাভের জন্য করেন নি। পরিশ্রম করে ব্যবসায় সফল হবার মধ্যে একধরণের সুখ। আর অন্য একজনকে সফল বানিয়ে দেয়ার মধ্যে লুকিয়ে থাকে আরেক কিসিমের সুখ। সেই সুখ আরো মহান। সুপার হ্যাপিনেস।

( ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)