ডোনাল্ড লু বিএনপির কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ নন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কাছে ডোনাল্ড লুর চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘কুকি- চিনের’ আচরণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সরকার এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা সফর সম্পর্কে আজ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন।
ডোনাল্ড লুর এ সফর নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ এক সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন, ‘বাইরে থেকে এসে কেউ বিএনপিকে মদদ দেবে, চাঙা করবে, এমন পরিস্থিতি নেই। যারা দাপট দেখাবে, তাদের ক্ষমতা মধ্যপ্রাচ্যেই সংকুচিত হয়ে আছে।’
আজ বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিং করেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান। সেই ব্রিফিংয়ে ডোনাল্ড লুর সফর ও বিএনপিকে ঘিরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্যের ব্যাপারে সাংবাদিকেরা নজরুল ইসলাম খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তখন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওনার আশা-নিরাশায় আমাদের কিছু যায়–আসে না। ডোনাল্ড লুর ব্যাপারটা এতখানি গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে আমরা বলতাম; আমরা কিন্তু তা বলি নাই। আপনি তুলেছেন এ প্রশ্ন। আমাদের কাছে এটা (ডোনাল্ড লু) এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ কুকি–চিনের আচরণ, যেটা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার প্র্যাকটিক্যালি ব্যর্থ হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, ফেসবুকে পেজ খুলে বছর দুয়েক আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। সাম্প্রতিক সময়ে এই গোষ্ঠীর ব্যাংকসহ সশস্ত্র তৎপরতা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ডোনাল্ড লু তো অনেক দূরের মানুষ। আমরা শঙ্কিত আমার নিজের দেশের অবস্থা নিয়ে। আমরা শঙ্কিত আমাদের দেশের যে ব্যাংক লুটেরা, তাদের মুক্ত করার জন্য সরকারের যে অপচেষ্টা, সেটা নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষ তার সমস্যার সমাধান বরাবরই নিজেরা করেছে। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ—এসব আমরাই করেছি। যারা মানুষের ন্যায্য আন্দোলনে সমর্থন করতে চায়, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। আর কেউ বিরোধিতা করলে আমরা তার নিন্দা জানাই।’
বিএনপি পরপর সমাবেশ করে চাঙা হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এটাকে আবার বিএনপির সহিংসতার ইঙ্গিত করেছেন। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপি কখনো সহিংস আন্দোলনে বিশ্বাস করে না বা আমাদের জোটগুলোর কেউ এ ধরনের আন্দোলনে বিশ্বাস করি না।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘সহিংসতা করে সরকার তার দায় আমাদের ওপর চাপিয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে, এটা সবাই জানে। তারা যে অপরাধগুলো করে, সে অপরাধগুলোর দায় বিরোধীদের ওপর চাপায়। আগামীতে হয়তো সে রকম কোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে, সেটা আগেই বলার চেষ্টা করছে। এতে আমরা ভীত নই।’
এর আগে নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের বৈঠক হয়। বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান উপস্থিত ছিলেন।
এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে জোটের নেতারা বৈঠকে অংশ নেন। পরে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা।
বৈঠক সম্পর্কে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, জনগণের বিভিন্ন সমস্যা, রাষ্ট্রীয় সংকট নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে এ বিষয়গুলোতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা কীভাবে আগামী দিনে অগ্রসর হতে পারি। আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করার চিন্তা করছি।’
prothom alo