ডাকসু নির্বাচন নিয়ে দোলাচল

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে দোলাচলকোলাজ

যোবায়ের আহমদ

 প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:৫২ | আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৭:১০

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরালো হয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাকসু) নির্বাচনের  রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (ডাকসু) নিয়ে প্রশাসন ধীরে চলো নীতিতে রয়েছে। ছাত্রদল চাচ্ছে, ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের পর নির্বাচন হোক। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাম সংগঠনগুলো এবং ছাত্রশিবিরসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে।

অনেকে বলছেন, নির্বাচন করা নিয়ে প্রশাসন দোলাচলে রয়েছে। নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে দুটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিগুলো সুপারিশ পেশ করলে একটু সময় নিয়ে গঠনতন্ত্র সংস্কারের পর নির্বাচনের কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে ছাত্রদল সময় বেঁধে দিতে চায় না, তারা চায় সংস্কারের পর নির্বাচন হোক। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকে তৎপর শিক্ষার্থীদের একটি অংশ গত বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য তিন কার্যদিবস সময় বেঁধে দিয়েছে। এর সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ। আলটিমেটাম দেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী শনিবার সন্ধ্যায় সমকালকে জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে ডাকসুর রোডম্যাপের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে আমরণ অনশনে বসতে পারেন তারা।

এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তারা ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে চান। তবে সম্প্রতি প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় নির্বাচন সাত-আট মাস পেছানোর পক্ষে মত দিয়েছেন কয়েকজন। প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, উপাচার্য নির্বাচনের নির্দেশনা দিলে কাজ শুরু হবে। এর পর রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে এবং সে অনুযায়ী বাকি কাজ এগোবে। তবে এখন পর্যন্ত উপাচার্য কোনো নির্দেশনা দেননি।

সরকারি পর্যায় থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তার পর নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। এর পর আবার কিছু দিন এটা নিয়ে কোনো কাজ হয়নি। গত বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেট সভাকে কেন্দ্র করে ডাকসু নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ছাত্রদলের মধ্যে বিতর্ক হয়। পরের দিন ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন/পরিমার্জন কমিটির প্রথম সভা বসে। এতে ছাত্র সংগঠন এবং শিক্ষার্থীদের মতামত চাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সমকালকে জানিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইকরামুল হক। তিনি বলেন, আগামী ৮ জানুয়ারির মধ্যে আমরা সবার মতামত নেব। কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে আমাদের রিপোর্ট জমা দিতে।

ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপাচার্য পদাধিকারবলে সভাপতি এবং তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাঁর সম্মতি ছাড়া ডাকসুর নির্বাহী সভায় এজেন্ডাও তোলা যায় না। এ ছাড়া উপাচার্য মনোনীত একজন শিক্ষক কোষাধ্যক্ষ হিসেবে থাকেন। এগুলোসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি রয়েছে শিক্ষার্থী এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর।
মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমান বলেন, কোনো অজুহাত কিংবা পেশিশক্তি ব্যবহার করে ডাকসু নির্বাচন আটকে রাখার ষড়যন্ত্র শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। তারা অতিদ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ চান।

সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ২৮ বছর পর। নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র থাকে হলগুলোতে। অভিযোগ রয়েছে, হলের নিয়ন্ত্রণ থাকায় সেবার ভিপি ছাড়া বাকি পদগুলোতে কারচুপি করে জিতেছিল ছাত্রলীগ। গত ১৭ জুলাই ছাত্রলীগকে হলছাড়া করেছেন শিক্ষার্থীরা। এখন হলে কোনো সংগঠনেরই আধিপত্য নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও হলে শক্তিশালী নয়। তবে অনেক স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী হলে কাজ করে যাচ্ছেন নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে।

একাধিক সমন্বয়ক জানান, হলগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তবে ছাত্রদলের অবস্থা শোচনীয়। তাই তারা কালক্ষেপণ করতে চায়। জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম আছে, কর্মচারীদের আছে কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলার মতো প্ল্যাটফর্ম নেই। মেয়েদের আবাসন সংকট আছে। আবার ক্যাম্পাস থেকে দূরের হলগুলো থেকে যাতায়াতের সমস্যা হয়। এগুলো নিয়ে কথা বলার মতো কেউ নেই। তাই শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি, ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা। তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট সময় এবং কাঠামোর মধ্যে সংস্কার শেষে নির্বাচন হোক। এতে যেন দেরি না হয়। নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের বলেন, সংস্কার আমরাও চাই। তবে সংস্কার যেন দ্রুত হয়। এতে কালক্ষেপণ যেন না হয়।

ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার কিংবা নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা কোনো আলটিমেটাম বা দিনক্ষণ ঠিক করে দিয়ে প্রশাসনের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করার পক্ষপাতি নই। আমরা চাই, ডাকসু গঠনতন্ত্রকে গণতান্ত্রিক ও কার্যকরী রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবার মতামত নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারে। তবে আমরা অতিরিক্ত দেরিও চাই না।’

শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের সমর্থন কেমন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সাবলীলভাবে মিশতে দেয়নি। এখন সে অবস্থা না থাকলেও বিভিন্ন পক্ষের গুজব এবং অপপ্রচার থেমে নেই। দিন যত যাচ্ছে ছাত্রদলের গ্রহণযোগ্যতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘আমরা দুটি কমিটি গঠন করেছি। গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি বৃহস্পতিবার সভা করেছে, তারা দিকনির্দেশনা দিলে আমরা সামনে এগোব। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিয়েও একটি কমিটি বৃহৎ পরিসরে কাজ করছে। অবশ্যই এর মধ্যে ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আশা করি নির্বাচন দ্রুত হবে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে প্রশাসন।’

samakal

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here