ডাকসু নিয়ে হঠাৎ নাটকীয়তা, উত্তেজনা

logo

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার

mzamin

facebook sharing button
whatsapp sharing button

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে হঠাৎ নাটকীয়তা তৈরি হয়েছে। হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিতের রায় দেয়ার খবরে ঢাবি ক্যাম্পাসে দেখা দেয় উত্তেজনা। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন হল থেকে বেরিয়ে এসে টিএসসিতে বিক্ষোভ করেন। তবে নির্বাচন স্থগিতের রায় দেয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে চেম্বার আদালত তা স্থগিত করে দেন। এ খবরে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হয়। এদিকে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। তারা বলেছেন, নির্বাচন যথাসময়েই হবে। ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার সক্ষমতা কারও নেই’। অন্যদিকে শিবির প্যানেলের জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদের দাবি, ‘নির্বাচন বানচাল করতে চাওয়া ষড়যন্ত্রকারীদের ভোটে লাল কার্ড দেখাবেন শিক্ষার্থীরা’। স্বতন্ত্র প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেছেন, ঢাকসু নির্বাচন ৯ তারিখেই হতে হবে।

ডাকসু নির্বাচনে বাধা নেই
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বামজোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম একটি রিট দায়ের করেছিলেন। গতকাল সেই রিটের শুনানি শেষে ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০শে অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি এস কে তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আধাঘণ্টা পর ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। সোমবার বিকালে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এ আদেশ দেন। আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট  মোহাম্মদ শিশির মনির। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। পরে শিশির মনির  বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। এর ফলে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে কোনো বাধা নেই।

ঢাবিতে হঠাৎ উত্তেজনা
হাইকোর্টে ডাকসু নির্বাচন স্থগিতাদেশকে কেন্দ্র করে হঠাৎ উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে হলে হলে। প্রতিটি হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া, টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করছেন তারা। ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বেও মিছিল হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ১, ২, ৩, ৪ ডাকসু আমার অধিকার, হাইকোর্ট না ডাকসু, ডাকসু ডাকসু ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আমাদের প্যানেল ঘোষণা করেছি। ইতিমধ্যে তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে পুরো বাংলাদেশে পৌঁছে গেছে। আজকে যখন আমি প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলাম, ঠিক ওই মুহূর্তে জানতে পারলাম ডাকসু নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। এই অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই- ডাকসু নির্বাচন যথাসময়েই হবে। সেটাকে বাধাগ্রস্ত করার সক্ষমতা কারোর নেই। হে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কমিশন, আপনারা এমন একটা নির্বাচনের আয়োজন করতে গেছেন যেখানে আপনারা নির্বাচন বন্ধের ফাঁকফোকর রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে আবিদ বলেন, ‘আপনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তামাশা করেন? আপনারা একই ক্রাইটেরিয়ায় অন্যদের প্রার্থিতা বাতিল করে তাকে রেখে যে ফাঁকফোকর রেখেছেন তারই ফায়দা নিয়ে বিভিন্ন অপশক্তি আজ ডাকসু নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই- আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে, হতেই হবে।’
ছাত্রশিবির সভাপতি ও জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদ বলেন, ‘আমার প্রার্থিতা নিয়ে রিট করা হয়েছে। রায় তো হবে এটা নিয়ে যে আমার প্রার্থিতা থাকবে নাকি থাকবে না। ডাকসু হবে নাকি হবে না এটা তো রায় হতে পারে না। আপনি যখন স্পেসিফিক রায়ে আসেন না, আপনি যখন ডাকসু স্থগিতের রায় দেন তখন বুঝতে হবে যিনি রিট করেছেন, যিনি মামলা লড়েছেন প্রত্যেকেই এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত ছিলেন।

শিবিরের প্যানেলের ইশতেহার

এদিকে ১২ মাসে ৩৬টি সংস্কারের টার্গেট নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। গতকাল ডাকসু ভবনের সামনে এ ইশতেহার পাঠ করেন- এজিএস পদপ্রার্থী মহিউদ্দিন খান। ইশতেহারে ৬টি বিষয়কে ‘হ্যাঁ’ বলে জোর দিয়েছে সংগঠনটি। এগুলোকে শিক্ষার্থীদের মূল অধিকার বলা হচ্ছে। এগুলো হলো,  নিরাপদ ক্যাম্পাস, আবাসন সংকট সমাধান, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা সুবিধা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, উন্নত পরিবহন ক্যারিয়ার গঠনে পর্যাপ্ত তথ্য ও সেবা। ৬টি বিষয়কে না বলেছে সংগঠনটি। এগুলোকে বিতাড়িত করতে চায় তারা। এগুলো হলো- কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি, নির্যাতন ও সহিংসতা, গণরুম-গেস্টরুম কালচার,  বৈষম্যমূলক নীতি ও আচরণ, মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ’লাঞ্চের পরে আসেন’ কালচার, ইসলামোফোবিয়া ও সাইবার বুলিং। এদিকে ৩৬ জুলাইকে স্মরণে রেখে ১২ মাসে, ৩৬টি সংস্কার করবে বলে জানায়- সংগঠনটি। এ সময় ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ও জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ৫০৯ জন প্রার্থীর মাঝে শীর্ষ পদসহ সভাপতির (ভিপি) জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৪৫ জন। সবশেষ প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ৩৯ হাজার ৬৩৯ জনের নাম রয়েছে। এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ১৯ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ২৫ জন মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক ১১ জন আন্তর্জাতিক সম্পাদক ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ১৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক ১১ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক ১৫ জন, সদস্য পদ ২১৭ জন এবারের ডাকসু নির্বাচনে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here