ডলার–সংকটে বাড়ছে ব্যবসার খরচ : এলসি খুলতে জটিলতা

গাজীপুরে ২০০৫ সালে টাইলসের কারখানা করে গ্রেটওয়াল সিরামিক। এই কারখানার উৎপাদনক্ষমতা দিনে ৫৫ হাজার বর্গমিটার। টাইলসের কারখানা ছাড়াও হবিগঞ্জে কোম্পানিটির চারু সিরামিক নামে স্যানিটারিওয়্যারেরও কারখানা রয়েছে। টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র বা এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। একেকটি ঋণপত্র খুলতেই তাদের দু-তিন সপ্তাহের বেশি লাগছে। ফলে মাঝেমধ্যেই কাঁচামাল–সংকটে পড়তে হচ্ছে কোম্পানিটিকে।

গ্রেটওয়াল সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শামসুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী ডলার ব্যাংকে পাওয়া যাচ্ছে না। যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তাতেও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকায় ডলার কিনতে হচ্ছে। ডলারের পাশাপাশি গ্যাস–সংকটও রয়েছে। তাই সক্ষমতার চেয়ে ২৫ শতাংশ কম উৎপাদন করতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কত দিনে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, সেটা কেউ ধারণা করতে পারছেন না। তাই ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গ্রহণেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

গ্রেটওয়াল সিরামিকসের মতো অনেক শিল্পকারখানা ডলার-সংকটে কাঁচামাল আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে। দুই সপ্তাহের কম সময়ে প্রায় কেউ-ই আমদানি ঋণপত্র খুলতে পারছে না। কখনো কখনো তিন সপ্তাহের বেশি সময় লাগছে। আবার ঋণপত্র খুলতে নির্ধারিত দামের চেয়ে ডলারপ্রতি পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। এতে একদিকে উৎপাদনে ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে কাঁচামাল–সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের অন্তত এক ডজন ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং বড় শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। ব্যাংক থেকে ডলার না পেয়ে অনেকেই এর সমাধান খুঁজছেন। সমস্যা সমাধানের একটা উপায় হিসেবে তাঁরা এখন রপ্তানিকারকদের কাছ থেকেও ডলার সংগ্রহে নেমেছেন। তাতে রপ্তানির চেয়ে অর্জিত ডলারের দামও অনানুষ্ঠানিকভাবে বেড়ে গেছে।

চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ১৮ শতাংশ।

■ ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ২২ শতাংশ।

দেড় বছর ধরে দেশে চলছে ডলারের সংকট। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মূলত এ সংকট দেখা দেয়। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলাস পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। রপ্তানিকারকেরা যেন বাজারে ডলারে ছেড়ে দেয়, সে জন্য বিধিবিধানেও বারবার পরিবর্তন
আনা হয়। সর্বশেষ ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকারদের দুটি সংগঠনকে (বাফেদা ও এবিবি) ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপরও সংকট কাটেনি। ব্যাংকব্যবস্থায় ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে। খোলাবাজারে দাম আরও বেশি।

চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ১৮ শতাংশ। আর ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ২২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ১ হাজার ৫২ কোটি ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে ১ হাজার ২৮৫ কোটি ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। অন্যদিকে গত দুই মাসে ১ হাজার ১৭৭ কোটি ডলারের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে ১ হাজার ৫১৪ কোটি ডলারের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছিল।

বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব ব্যাংকের ডলারের জোগান একরকম না। এ জন্য কোনো কোনো ব্যাংকের ঋণপত্র খুলতে দেরি হতে পারে। কেউ যাতে ডলারের দাম বেশি নিতে না পারে, সে জন্য বাফেদা থেকে আমরা দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছি। তবে সেই দাম সবাই মানছে কি না, তা তদারকির দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। বেশি দামে ডলার বিক্রি করায় কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বড় শিল্পে ডলার-সংকট

রাজধানীর কোনাপাড়ায় অবস্থিত শাহরিয়ার স্টিল মিলস আগে রড তৈরির জন্য একেকটি ঋণপত্রের বিপরীতে সর্বনিম্ন ২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টন কাঁচামাল আমদানি করত। এখন ডলার–সংকটের কারণে তাদের একেক ঋণপত্রের বিপরীতে ২০০ থেকে ৫০০ টন কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির আমদানি খরচ বাড়ছে।

শাহরিয়ার স্টিল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাসাদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়েও সব সময় চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। যে ব্যাংক যখন যে পরিমাণ ডলার দিতে পারছে, তা দিয়েই ঋণপত্র খুলছি। আগে কারখানায় তিন মাসের কাঁচামাল মজুত থাকত, এখন থাকছে মাত্র এক মাসের। সে জন্য সব সময়ই দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে।’

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইস্পাত ব্যবসায়ীদের চলতি মূলধন ঘাটতিতেও পড়তে হচ্ছে বলে জানালেন শেখ মাসাদুল আলম। তিনি বলেন, ‘ডলারের দামের কারণে আমাদের চলতি মূলধন ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এদিকে চাহিদা কমে যাওয়ায় রডের দামও কমেছে। সব মিলিয়ে কঠিন এক পরিস্থিতিতে পড়েছি।’

এদিকে ডলার-সংকট মোকাবিলায় শিল্পোদ্যোক্তারা একেকজন একেক কৌশল অবলম্বন করছেন। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কেউ কেউ তাদের মূল প্রতিষ্ঠান থেকে ডলারে ঋণ নিয়ে সংকট মোকাবিলার কৌশল নিয়েছে। আবার কেউ কেউ ব্যাংকের সংখ্যা বাড়িয়ে ও ভেঙে ভেঙে ঋণপত্র খুলে জরুরি কাঁচামাল আমদানি করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি বহুজাতিক কোম্পানির জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমেই ঋণপত্র খুলে তাঁরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করে আসছিলেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডলার–সংকটের কারণে বিদেশি এসব ব্যাংকও তাদের চাহিদা অনুযায়ী ডলার সরবরাহ করতে পারছে না। এ কারণে তাঁরা বাধ্য হয়ে দেশীয় অনেক ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনে যুক্ত হয়েছেন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন হয়েছে, যখন যে ব্যাংকে ডলার পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই ছুটে যাচ্ছি।’

দেশের সিরামিক খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান আরএকে সিরামিকস ডলার–সংকটের কারণে কাঁচামাল আমদানি করছে ভাগ ভাগ করে। বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে আমরা একটি-দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারতাম। কিন্তু এখন সেটি সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঋণপত্র ভাগ করে, যখন যে ব্যাংকে ডলার পাচ্ছি, সেই ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আগে দেখা যেত ১০০ কোটি ডলারের ঋণপত্র একটি বা দুটি ব্যাংকে করা যেত। এখন ওই ১০০ কোটি ডলারের ঋণপত্র ১০ কোটি বা ২০ কোটি করে ভাগ করে পাঁচ বা দশটি ব্যাংকের মাধ্যমে করা হচ্ছে।

এদিকে দেশের ইস্পাত খাতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংকটের কারণে আমরা উৎপাদনক্ষমতা ৩০ শতাংশের মতো কমিয়ে দিয়েছি। এরপরও চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছি না। বাড়তি দামে ডলার কেনার কারণে উৎপাদন খরচ যেভাবে বাড়ছে, সেটা পণ্য বিক্রি করে পুনরুদ্ধার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

ভুগছেন ছোট উদ্যোক্তারাও

চুয়াডাঙ্গায় তিন দশক ধরে কৃষিযন্ত্রপাতি তৈরি করে জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং। শুরুর দিকে গরুর লাঙলের বাতিল ফলা দিয়ে নতুন ফলা, ধানমাড়াইয়ের যন্ত্র ইত্যাদি তৈরি করত প্রতিষ্ঠানটি। এখন কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী মৌসুমভিত্তিক প্রায় ৪০ ধরনের যন্ত্র তৈরি করে।

জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ওলি উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মাসেই ৩৪ হাজার ডলারের একটি ঋণপত্র খুলতে ১৪-১৫ দিন সময় লেগেছে। ডলারপ্রতি দাম দিয়েছি ১১৬ টাকা। ঋণপত্রের চাহিদা দেওয়ার দিনই ডলারের সম্ভাব্য দাম ধরে টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। এরপরও দেখা যাচ্ছে, যেদিন ঋণপত্র খোলা হবে, সেদিন দাম বাড়লে বাড়তি টাকা পরিশোধ করতে হয়।’

ওলি উল্লাহ আরও বলেন, ‘আগে ১০ শতাংশ বা তার কম মার্জিনে ঋণপত্র খুলতাম। এখন শতভাগ মার্জিন দিয়েও ঋণপত্র খুলতে পারছি না। কাঁচামাল আসতে দু–তিন মাস সময় লাগে। এই পুরো সময় ব্যাংকে টাকা ফেলে রাখতে হচ্ছে। এতে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের চলতি মূলধন আটকে যাচ্ছে।’

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মতো ট্রেডিং ব্যবসা করেন, এমন ব্যবসায়ীরাও ডলার–সংকটে বিপাকে পড়েন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ফল ব্যবসায়ীরাও।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ফল আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে গেলে ১৫-৩০ দিন সময় লাগে। শতভাগ মার্জিন দিয়ে ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে। ঋণপত্র খোলার পর ফল আমদানি হতে আরও দু-তিন মাস লেগে যায়। আমরা সিসি ঋণ নিয়ে ঋণপত্র খুলে থাকি। এ কারণে মাসে মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে দাম ১০-১৫ শতাংশ বেড়ে যায়।

রপ্তানিকারকের সঙ্গে দেনদরবার

ডলার–সংকটের কারণে বিদেশ থেকে সময়মতো কাঁচামাল আমদানি করতে না পেরে দেশের মধ্য থেকে বেশি দামে কাঁচামাল সংগ্রহ করে কারখানা সচল রাখতে হচ্ছে কাউকে কাউকে। এমনকি অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে এখন বাধ্য হয়ে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দাম নিয়ে দর–কষাকষি করে ডলার সংগ্রহ করতে হচ্ছে বলে জানান কোনো কোনো আমদানিকারক।

সিমেন্টশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিসিএমএর সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর কবির বলেন, বর্তমানে ব্যাংকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ডলারের অভাবে সময়মতো কাঁচামাল আমদানি করতে না পারার ঘটনাও ঘটছে। পাশাপাশি এলসি বা ঋণপত্রের দায় পরিশোধের ক্ষেত্রেও অনেক সময় বিলম্ব হচ্ছে। এ জন্য দিতে হচ্ছে বাড়তি সুদ। এতে নানাভাবে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

আলমগীর কবির বলেন, ‘আমাদের জানামতে, অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কোনো কোনো ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাড়তি দামে ডলার কিনে আমদানির ঋণপত্রের দায় শোধ করছে। সব মিলিয়ে সংকটটি এখন নানাভাবে ডালপালা মেলেছে।’

সমাধান কী

চলমান এ সংকটের বিষয়ে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশে ডলারের ঘাটতি আছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ অবস্থায় আমদানিকারক থেকে শুরু করে সবাইকে সংযমী হতে হবে। ডলারের সংকট দূর করতে নানামুখী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রবাসী ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর উদ্যোগের পাশাপাশি আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেই এ সংকট মোকাবিলা করতে হবে।

ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডলার–সংকটের সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। কারণ, যে পদ্ধতিতে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে, তা সময়োপযোগী নয়। যখন অনেক বেশি রিজার্ভ থাকে এবং তা দিয়ে মাসের পর মাস জোগান নিশ্চিত করা যায়, তখন ডলারের দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি সেই পর্যায়ে নেই।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি একের পর এক নির্দেশনা জারি করে হুকুমের মাধ্যমে ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। এক জায়গায় নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আরেক জায়গায় নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাটি কাজ করছে না। সরকার যেখানে ডিম–আলুর মতো পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে সেটি কার্যকর করতে পারছে না, সেখানে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত ডলারের বাজার কীভাবে দাম বেঁধে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তা বোধগম্য নয়।’

ডলারের চলমান সংকট মোকাবিলা করতে হলে এই মুদ্রার দাম পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ বাজারভিত্তিক ডলারের দাম কার্যকর শুরু করে। এরপর বিশ্বে নানা অর্থনৈতিক সংকট হলেও দেশে ডলারের বাজারের বড় ধরনের কোনো অস্থিরতা আমরা দেখিনি। তাই ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে আমরা দেখতে পারি সেটি সমস্যার সমাধানে কাজ করে কি না।’

প্রথম আলো