ট্রাম্পের উপদেষ্টার দাবি রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে ভারতের যোগসাজশ আছে

logo

মানবজমিন ডেস্ক

(২৭ মিনিট আগে) ২৮ আগস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

mzamin

facebook sharing button

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘মোদির যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক ভারতের ওপর কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। তার দাবি, মস্কোর সামরিক আগ্রাসনকে জিইয়ে রাখছে ভারতের রাশিয়ান জ্বালানি ক্রয়। নাভারো সতর্ক করে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করলে ভারত ২৫ শতাংশ শুল্ক ছাড় পেতে পারে। ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নাভারো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমি একে মোদির যুদ্ধ বলছি। কারণ শান্তির পথ আংশিকভাবে দিল্লির ওপর নির্ভর করে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।

এতে বলা হয়, বুধবার কার্যকর হওয়া ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের মূল লক্ষ্য ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা। নাভারোর দাবি, নয়াদিল্লির ছাড়কৃত মূল্যে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল ক্রয়ের অর্থ মস্কো ব্যবহার করছে তার ‘যুদ্ধযন্ত্র’ চালাতে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের অনুরোধে অস্ত্র ও অর্থ দিতে হচ্ছে, যা মার্কিন সম্পদের ওপর বাড়তি চাপ ফেলছে। তিনি আরও বলেন, ভারত যা করছে, তাতে আমেরিকার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভোক্তা, ব্যবসায়ী, শ্রমিক- সবাই। ভারতের উচ্চ শুল্ক আমাদের কর্মসংস্থান, কারখানা, আয় আর মজুরি কেড়ে নিচ্ছে। আর করদাতারাও ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ তাদের অর্থ দিয়েই আমাদের মোদির যুদ্ধ চালাতে হচ্ছে। নাভারো বলেন, ভারত চাইলে আগামীকাল থেকেই ২৫ শতাংশ ছাড় পেতে পারে- যদি তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে এবং সেই যুদ্ধযন্ত্রকে খাদ্য জোগানো বন্ধ করে।

ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক হচ্ছে এশিয়ার কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত সর্বোচ্চ প্রতিশোধমূলক শুল্ক। এটি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া পণ্যের প্রায় ৫৫ শতাংশকে প্রভাবিত করবে- যা ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। যদিও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্য যেমন ইলেকট্রনিকস ও ওষুধ আপাতত ছাড় পাচ্ছে। তবুও বস্ত্র ও গয়নার মতো শ্রমঘন শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নাভারো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যা আমাকে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত করছে, তা হলো ভারতীয়দের এই ঔদ্ধত্য। তারা বলে- ‘ওহ, আমাদের শুল্ক তো বেশি নয়। ওহ, এটা আমাদের সার্বভৌমত্ব, আমরা যেখান থেকে খুশি তেল কিনতে পারি।’ ভারত, তুমি তো বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র, তাহলে আচরণও সে রকম করো।

মাসের পর মাস আলোচনার পরও যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর এই শাস্তিমূলক শুল্ক চাপিয়েছে। যদিও ভারত ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে প্রথম থেকেই শুল্ক আলোচনায় বসেছিল, কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। নাভারো অভিযোগ করেন, ভারত রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সহায়তা করছে। তার ভাষায়, ছাড়কৃত মূল্যে রাশিয়া থেকে তেল কিনে ভারত আসলে সেই অর্থ দিচ্ছে, যা দিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনীয়দের হত্যা করার যুদ্ধযন্ত্র চালাচ্ছে। ভারত তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছে, রাশিয়ার তেল কেনা দরকার ছিল দেশীয় বাজার স্থিতিশীল রাখা ও জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে। নয়াদিল্লি যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে অন্যায্য বলেও দাবি করেছে। ভারতই একমাত্র বড় অর্থনীতি, যেটি ট্রাম্প ঘোষিত দ্বিতীয় শুল্ক-এর কবলে পড়েছে- যদিও চীনও রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের বড় ক্রেতা।

ইতিহাসে ভারত রাশিয়ার তেলের উল্লেখযোগ্য আমদানিকারক ছিল না। বরং মধ্যপ্রাচ্যের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। সাত জাতির জোট (জি৭) তখন রাশিয়ার তেলের ওপর ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের মূল্যসীমা আরোপ করে- যাতে ক্রেমলিনের আয়ের সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। কিন্তু বৈশ্বিক সরবরাহও বজায় থাকে। ভারত সেই ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে ছাড়কৃত দামে রাশিয়ান তেল কিনতে শুরু করে, যা মার্কিন কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here