টাইম ম্যাগাজিনে শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

বিশ্বের প্রভাবশালী টাইম ম্যাগাজিন চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনাম,‌ ‘শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’।

গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরে টাইম ম্যাগাজিন প্রধানমন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার নেয়। সেই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন বিস্ময়কর রাজনৈতিক নেতা যিনি গত এক দশকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুততম বর্ধমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাপক উত্থান ঘটিয়েছেন।

এতে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড। এর আগেও তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল মেয়াদে  প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দেশটির রাজনীতিতে এক সময়ের হস্তক্ষেপকারী সামরিক শক্তি এবং ইসলামপন্থীদের মোকাবিলা করে কৃতিত্বের সঙ্গে দীর্ঘ এই সময় তিনি সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।বিগত সময়ে শেখ হাসিনার ওপর ১৯ বার গুপ্তহত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

বৃটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার কিংবা ভারতের ইন্দিরা গান্ধীর চেয়ে বেশিবার নির্বাচনে জয়ী হওয়া শেখ হাসিনা আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আবারও জয়ী হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‌‘আমি আত্মবিশ্বাসী এ কারণে যে, আমার দেশের লোকজন আমার সঙ্গে আছে। তারা আমার প্রধান শক্তি।’

সমালোচকদের মতে; শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বাংলাদেশ কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে মোড় নিয়েছে। অন্যদিকে দেশটির দুইবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় গৃহবন্দী। তিনি গুরুতর অসুস্থ। আর বিএনপি নেতাকর্মীরাও অনেক মামলার আসামি। এসব ঘটনাকে অনেকেই হয়রানি হিসেবে অভিযোগ করেছেন। সমালোচকরা বলছেন, এ অবস্থায় আসন্ন জানুয়ারি মাসের নির্বাচন শেখ হাসিনার জয়কে ত্বরান্বিত করবে। সর্বশেষ গত দুটি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিন্দা জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সদস্যের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবদান সবচেয়ে বেশি। দেশটি নিয়মিতভাবে ইন্দো মার্কিন-প্যাসিফিক কমান্ডের সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দিয়ে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস। এমনকি বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির শীর্ষ দেশও অ্যামেরিকা।

ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসনের নিন্দা জানানো উন্নয়নশীল বিশ্বের কয়েকজন নেতাদের একজন শেখ হাসিনা যিনি নিজেকে পশ্চিমাদের জন্য দরকারি প্রমাণ করেছেন। প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন তিনি।

তবে ‘স্বৈরাচারের’ দিকে বাংলাদেশের মোড নেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ওয়াশিংটন। শেখ হাসিনাকে সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের দুটি আয়োজন গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আর গত মে মাসে নির্বাচনকে দুর্বল করতে ভূমিকা রাখতে পারে এমন বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বিধিনিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর জবাবে শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে গণতন্ত্রকে বিদায় দেওয়ার চেষ্টা করছে।’ তার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস জোর দিয়ে বলেছেন, ওয়াশিংটন বাংলাদেশে কোনো পক্ষকে সমর্থন করে না। এ ব্যাপারে তারা সতর্ক।

চীনের ক্রমবর্ধমান প্রতিটি প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র যখন মরিয়া ঠিক তখন বাংলাদেশের প্রতি আমেরিকার কঠোর নীতি অবলম্বন করছে। এ ব্যাপারে উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিদেশে তার গণতন্ত্র-প্রচার নীতির জন্য বাংলাদেশকে একটি পরীক্ষামূলক ক্ষেত্রে পরিণত করেছে বলে মনে হচ্ছে। এর বড় ঝুঁকি হলো- এ ধরনের সকল চাপের বিপরীত প্রতিক্রিয়া ঘটবে। সরকারকে ক্ষমতায় থাকার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্ররোচিত করবে।

সম্প্রতি প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সমর্থকরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার হয়েছে দলটির শতাধিক নেতাকর্মী। পুলিশের যানবাহন ও পাবলিক বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়। বিএনপি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আসন্ন নির্বাচনও বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। দলটির দাবি- নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তবে তাদের এ আহ্বানের নজির থাকলেও ক্ষমতাসীনদের বক্তব্য হলো- সংবিধান সংশোধনের পর এর সুযোগ নেই। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে যেখানে তিনি বলেছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগসহ সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করছে শাসক দল। যখনই আমরা আওয়াজ তুলি তারা তখনই আমাদের নিপীড়ন করে।

সমকাল