দিল্লির মতো বায়ুদূষণ নেই এখানে। তবে কাল থেকে এখানেও আকাশের মুখ ভারি। কিছু জায়গায় অসময়ের বৃষ্টি বরং অস্বস্তিতেই ফেলেছে পুনেকে। একটা গুমোট ভাব এই শহরে। অনেকটা বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমের মতোই!
সেদিন দিল্লিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই ম্যাচের পর (পড়তে হবে ম্যাথুজকে ওই টাইমড আউট করার পর) বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফদের মধ্যে একটা নীরব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ব্যাপারটি নিয়ে নাকি ড্রেসিংরুমে খোলামেলা কোনো আলোচনা হয়নি। কেউ সেই বিষয়টি সামনেও আনেননি। তবে নিজেদের মধ্যে নাকি ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করেছেন বিদেশি কোচিং স্টাফরা।
টুর্নামেন্ট চলাকালে অনুমতি ছাড়া সাক্ষাৎকার দেওয়াই আচরণবিধির লঙ্ঘন। তার ওপর দলের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তিনি। এ জন্য সাবেক এই প্রোটিয়া পেসারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিসিবির একটি সূত্র।
এমনিতেই টানা ছয় ম্যাচ হারার পর অমন একটি জয়, তাই ব্যাপারটি নিয়ে আর জল ঘোলা করতে চাচ্ছেন না হাথুরু। কেননা, ২০২৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বিসিবির সঙ্গে চুক্তি রয়েছে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। তাই কিছু বলে বিতর্কে যেতে চান না তিনি। কিন্তু দলের সাত বিদেশি কোচিং স্টাফের মধ্যে বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের আপাতত সেই ভয় নেই। এই নভেম্বরেই বিসিবির সঙ্গে তাঁর চুক্তি শেষ হচ্ছে। সেটা যে নবায়ন করা হবে না, সেই ইঙ্গিতও পেয়ে গেছেন তিনি।
সে কারণেই স্বদেশি ওয়েব পোর্টাল ক্রিকব্লগডটনেটে মন খুলে টাইমড আউট নিয়ে সাকিবের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তাই বলে পার পাচ্ছেন না প্রোটিয়া এ কোচ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক পরিচালক এ ব্যাপারে বলেন, ‘চলে যাবেন বলে তো কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙতে পারেন না। চুক্তির মধ্যে যতক্ষণ আছেন, ততক্ষণ তাঁকে আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। সেটি না মানলে ব্যবস্থা নেওয়াই নিয়ম।’
ডেনাল্ড বলেছেন, ওই ঘটনার পর ড্রেসিংরুমের সবাই এতটাই বিব্রত ছিল, কেউ কারও দিকে চোখ রেখে কথা বলতে পারছিলেন না। ‘আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল– কী হচ্ছে এসব। মনে হচ্ছিল, মাঠে গিয়ে বলি, অনেক হয়েছে, এবার থামো। আমরা এমন দল নই, এসবের সমর্থন করব। কিন্তু ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটে ঘটেছিল, আমার কিছুই করার ছিল না। তাছাড়া আমি প্রধান কোচও নই, মাঠে বার্তা পাঠানোর কোনো ক্ষমতা আমার ছিল না। আমি সাকিবের ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলাম, সে বলছিল, সে জয়ের জন্য সবকিছু করতে পারে। তবে আমি এই ব্যাপারটি সমর্থন করি না, এসব দেখাও আমার জন্য কঠিন ব্যাপার।’
দক্ষিণ আফ্রিকার ওই পোর্টালে ডোনাল্ড এটাও বলেন, সেই রাতে বিছানা গিয়েও ভুলতে পারেননি ঘটনাটি, ‘আমার মনে হয়েছিল, ওই সময় মাঠে দুই দলের মধ্যে রাগ চলে এসেছিল। ম্যাচের পর লঙ্কানরা হাত মেলায়নি। এই অসৌজন্যতাও আমি সমর্থন করি না। আপনি আমাকে পুরোনো দিনের মানুষ ভাবতে পারেন। তবে ক্রিকেটে এসব আমি কখনোই মানতে পারি না, ভাবতেও পারি না।’
ডেনাল্ড নিশ্চিতভাবেই সাক্ষাৎকারটি দেওয়ার আগে তাঁর কোচিং স্টাফদের সঙ্গেও মতামত শেয়ার করেছেন। একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে কোচদের মধ্যে। স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ নিশ্চয় বলবেন না তাঁকে শ্রীলঙ্কা থেকে পরিচিত কতজনের প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে কিংবা এড়িয়ে যেতে হয়েছে। ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমেট, ট্রেনার নিকোলাস লি, ভিডিও অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন কিংবা সহকারী কোচ নিকোলাস পোথাস– পুনেতে আসা বাংলাদেশি ক্যামেরার সামনে সবাই সাবধান, সতর্ক!
সমকাল