জুলাই যোদ্ধাদের সরাতে লাঠিচার্জ, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আগুন

logo

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার

mzamin

facebook sharing button

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসনের দাবিতে জাতীয় সংসদের গেটের সামনে অবস্থান নেন জুলাইযোদ্ধারা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এরপর সকালে সংসদ ভবনের প্রাচীর টপকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে তারা। সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুরে অনুষ্ঠানস্থলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ উপস্থিত হয়ে জুলাই যোদ্ধাদের দাবি পূরণে জুলাই সনদে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পরও জুলাইযোদ্ধারা সেখান থেকে না সরলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেয়। পরে তারা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অবস্থান নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। দুই ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিক্ষুব্ধদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পুলিশের লাঠিপেটা, টিয়ারশেল এবং সাউন্ড গ্রেনেডে অন্তত ৩৬ জন আহত হন। আন্দোলনরত জুলাই যোদ্ধাদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের সময় দেখা যায়, একজন জুলাইযোদ্ধা আতিকের শরীরে লাগানো একটি কৃত্রিম হাত খুলে পড়ে যায় রাস্তায়।

এসময় জুলাইযোদ্ধারা সংসদ ভবনের বাইরে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। সড়কে টায়ার ও কাঠ এবং অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে বানানো ছোট ছোট তাঁবু একসঙ্গে করে তারা আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশের লাঠিপেটায় আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়। বিকাল চারটায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জুলাই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ঘণ্টা তিনেক আগে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চ ঘিরে এ উত্তেজনা ঘটে।

সরজমিন দেখা যায়, সংসদ ভবন এলাকায় এবং অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে একে একে আসেন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছেন। বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংসদ ভবনের ১২ নম্বর গেট থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ মানিক মিয়া এভিনিউ জুড়ে মোতায়েন করা হয়। এসময় দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় বিপুল পরিমাণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটসহ দেশের অন্যসব বাহিনীর সদস্যদেরও এখানে মোতায়েন করা হয়েছে।

জুলাইযোদ্ধারা বলেন, জুলাই সনদে আমাদের গুরুত্ব দেয়া হয়নি। আমরা এত ত্যাগের মাধ্যমে দেশটাকে নতুন করে স্বাধীন করলাম অথচ আমাদের কোনো মূল্যায়নই নেই। আমাদের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করেই এই সনদ সই করতে হবে। আহত জুলাইযোদ্ধা জিহাদ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, সনদের ৫ ধারায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব হত্যাকাণ্ড লিখছে, কিন্তু সব হত্যাকাণ্ড বলতে কী বুঝিয়েছে, দুই পক্ষেরই তো আছে। আর শহীদ পরিবারদের সহায়তা ও নিরাপত্তা এখানে আহতদেরও যুক্ত করতে হবে। লাইনে ঘাটতি আছে। এসব জায়গায় পরিবর্তন চাই। তিনি বলেন, আমরা কমিশনকে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি। কিন্তু এখন পরিবর্তন সম্ভব না বলে তাদের জানানো হয়েছে। তাই তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছেও বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি সরকারের কাছে তুলে ধরে পরিবর্তন করার কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। তবে পরিবর্তন না হলে অবস্থান চালিয়ে যাবেন। তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠানস্থলে আমাদের এত জোরাজুরি করে ঢুকতে হবে কেন। আমাদের কী আমন্ত্রণ করা উচিত ছিল না? ড. ইউনূস কী আমাদের রক্তের ওপরে না? তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে আমন্ত্রণ করতে পারে, সে ১৫/২০ হাজার চেয়ার দিতে পারতো না?

আহত ৩৬ ‘জুলাইযোদ্ধা’ হাসপাতালে: সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনায় অন্তত ৩৬ জন ‘জুলাইযোদ্ধা’ আহত হওয়ার খবর পাওয়া  গেছে। তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন- আতিকুল গাজী (২২), মো. শরিফুল ইসলাম (২৫), মো. আশরাফুল আলম (২০), মো. সাইফুল ইসলাম (২৩), মো. আজিজুল হক (৫৬), মোছা. সিনথিয়া মিম (২২), লাইলী আক্তার (২২), তানভীরুল ইসলাম (২৬), ও হাবিব উল্লাহ (৩০),আরিফুল হক (৫৫), ওমর ফারুক (২৭), শাফি উল্লাহ (৩২), কামরুল (২৯), মোহাম্মদ রাকিব (২৫), লিটন (৩২), তানভীর (২২), কামরুল (৩২), মো. দুলাল (৩০), ইউনুছ (২৯), মোহাম্মদ মিজান (২৮), সগির উদ্দিন (২৮), আল-আমিন (৩৪), মোস্তাক বিল্লাহ (২৭), নুরুল হুদা (২৮), মো.  সোলেমান স্বপন (২৮), আদনান (২২), সাইফুল ইসলাম (২৩), এমরান হোসেন (১৮), হাবিবুর রহমান (২২), রফিক আহমেদ রুবেল (২৭),  গাজী অহিদুল হক (৩৪), আবুল খায়ের (২৮), রাকিব হাসান (১৭), নুরুল হুদা (২৫), আয়াস (২০), শাহাদাত হোসেন (৪০), আমিনুল হক (৪১) ও আমিনুল ইসলাম (২৭)। আহতদের মধ্যে জুলাই আন্দোলনে ডান হাত হারানো আতিকুল গাজী বলেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেয়ার প্রতিবাদে আমরা জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধারা আন্দোলন করে আসছিলাম। সরকার আমাদের দাবিতে সাড়া না দিয়ে আজ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান করতে গেলে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদে দাঁড়াই। তখন হঠাৎ পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক)  মো. ফারুক জানান, সংসদ ভবনের এলাকা থেকে ঢাকা মেডিকেলে জরুরি বিভাগে ৩৬ জন এসেছে তাদের হাতে মাথায়-পায়ে আঘাত রয়েছে, তাদেরকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, এখন পর্যন্ত কাউকে ভর্তি দেয়া হয়নি। কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি সবাইকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিএমপি’র প্রোটেকশন বিভাগের ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সকাল থেকে এত নিরাপত্তা তোড়জোড় ছিল না। কিন্তু দুপুরে নির্দেশনা আসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের। তাই অন্য সব বাহিনীর পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অনেক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)  তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ইবনে মিজান বলেন, আন্দোলনকারীদের হামলায় একজন উপ-কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ সাতজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে বাধ্য হয়, তবে সংঘর্ষের সময় কাউকে আটক করা হয়নি।

1 COMMENT

  1. There must be investigation of any and all such agitations, disruptions, etc. by any group, expecially such “newly-formed” or “previously unknown” groups first, regardless of their demands because we have to first establish if they are not somehow members/supporters/sympathizers of the AL party and SH just creating chaos. We know that there are enough such people still around (not all have left the country) to carry out the hidden agenda of SH/AL/India.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here