জিয়া, বিএনপি এবং বিষোদ্গার

জিয়া, বিএনপি এবং বিষোদ্গার – ফাইল ছবি

গতকাল ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ছিল জিয়া প্রতিষ্ঠিত বিএনপির ৪৩তম বার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অবশেষে জাতীয় ঐক্যের ডাক নিয়ে বিএনপির জন্ম। ইতোমধ্যে বিএনপিকে অতিক্রম করতে হয়েছে ঝড়-ঝঞ্ঝা এবং নির্যাতন-নিপীড়নের দীর্ঘ চার দশক। সন্দেহ নেই, ক্ষমতার সোপান থেকে এর জন্ম। তাও আবার একজন ‘সেনা-রাজনীতিকের’ নেতৃত্বে। সামরিক বাহিনীর রাজনীতি সম্পর্কে লালিত বিশ্বাস গণতন্ত্র বৈরী। কিন্তু সমসাময়িক ইতিহাসের ‘নিপাতনে সিদ্ধ’ ঘটনা এই যে, একজন সামরিক ব্যক্তিত্ব, আগের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিত্যক্ত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনলেন। সে সময়ে দেশ-জাতি-রাষ্ট্র নিপতিত ছিল নেতৃত্বের গভীর শূন্যতায়।

বন্দুকের নলে রাজনৈতিক ক্ষমতার সন্ধান না করে তিনি জনগণের দিকে মুখ ফিরিয়েছিলেন। একজন সেনানায়ক যখন সেনাবাহিনীর নির্ভরতা কাটিয়ে যেতে চান জনতার কাছে, সেনাবাহিনী তা মেনে নেয় না। আবার সুশীলসমাজ তাকে গ্রহণ করে না, তার ঠিকানা সেনা ছাউনি বলে। এই দ্বৈধতা তার জীবন অবসানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। (বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন : পলিটিক্যাল স্টাডি অব জিয়া রিজিম, ডিলেমাস অব এ মিলিটারি রুলার, আফসার ব্রাদার্স, ১৯৯৬)। জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে একজন অখ্যাত মেজর ছিলেন নিঃসন্দেহে। কিন্তু তিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন ‘স্বাধীনতার ঘোষণায়’। বঙ্গবন্ধু তথা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জেড ফোর্সের প্রধান তথা সেক্টর কমান্ডার হিসেবে বরিত করেন ‘বীর উত্তম’ খেতাবে। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে বিপর্যস্ত সেনাবাহিনীকে সর্বনাশের প্রান্তসীমা থেকে উদ্ধার করেন তিনি। ক্ষমতা আরোহণের কোনো প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত না হয়ে ‘কনসেনশাস’ বা সর্বসম্মত ব্যক্তিত্ব হিসেবে ক্ষমতার পাদপৃষ্ঠে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনি জাতিকে জাগ্রত করেন। কর্মোদ্দীপনা ও কর্মচাঞ্চল্যে উদ্বেলিত হয় জাতি।

দেশী-বিদেশী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে স্বাধীনতার শত্রুরা হত্যা করে তাকে। বিরোধীদের ধারণা ছিল, তার এই অকস্মাত মৃত্যু নিভিয়ে দেবে সবকিছু। কিন্তু ‘অবাক পৃথিবী অবাক’ এক জিয়া লোকান্তরে লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে। জীবিত জিয়ার চেয়ে মৃত জিয়া দেখা দিলো অবশ্যম্ভাবী রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে। ‘সারা বাংলার ধানের শীষে, জিয়া আছে মিলেমিশে’। জিয়ার আদর্শ ও কর্মসূচি নিযুত কোটি মানুষ এতটাই ভালোবাসল যে, সেই অখ্যাত মেজর বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হলেন। বিরোধী শক্তির কাছে নগণ্য ও জঘন্য মনে হলেও এটাই রাজনৈতিক সত্য যে, জনতার সমর্থনধন্য জিয়া বাংলাদেশে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ান। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে শহীদ জিয়ার প্রতিভ‚ বিএনপি নির্বাচনী রায়ে রাষ্ট্রের ধারক-বাহক হয়ে দাঁড়ায়। জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রশ্নেও প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় শহীদ জিয়ার রক্তের ও আদর্শের উত্তরাধিকারীরা যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, মেধা ও মননে অতি উজ্জ্বলতার স্বাক্ষর রাখেন।

আগেই বলা হয়েছে, জাতীয় ঐক্যের আদর্শ নিয়ে বিএনপির সৃষ্টি। জিয়াউর রহমান বিএনপির আদর্শ, উদ্দেশ্য নির্ধারণে জনগণের চিরায়ত বিশ্বাস, জীবনবোধ এবং মধ্যপন্থার নীতি গ্রহণ করেন। মাটি ও মানুষের নাড়ির টান অনুভব করে ইসলামী মূল্যবোধকে বিএনপির আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। চমৎকার কুশলতার সাথে তিনি মোল্লাতন্ত্র ও নাস্তিকতন্ত্রকে অস্বীকার করেন। ১৯ দফার কর্মসূচির মাধ্যমে একটি প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করেন। জিয়াউর রহমানের শাহাদতের কিছুদিনের মধ্যেই একটি কায়েমি স্বার্থবাদী চক্র সামরিক বাহিনীর যোগসাজশে শহীদ জিয়ার আদর্শকে পরিত্যাগ করার প্রয়াস পায়। প্রায় দীর্ঘ ১০ বছর সামরিক স্বৈরাচারের নির্যাতন ও নিপীড়নকে অগ্রাহ্য করে বিএনপি সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়। বেগম খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের প্রতিভ‚ হিসেবে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তার ত্যাগ, তিতিক্ষা ও দৃঢ়তা ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে তাকে প্রতিষ্ঠা দেয়।

সেনাছাউনি থেকে উত্থিত একটি রাজনৈতিক দল প্রকৃতপক্ষেই জনগণের দল হয়ে দাঁড়ায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান স্বীকার করেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি একটি জনগণের দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও স্বীকৃতি অর্জন করে। ক্ষমতালোভীদের সমস্ত হিসাব-নিকেশকে মিথ্যা প্রমাণ করে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বিএনপি ১৯৯১ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এই দলটি সফলতার সাথে দেশ পরিচালনা করে। ১৯৯৬ সালে প্রতারণা ও প্রচারণার ফলে বিরোধী শক্তি জয়লাভ করে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠায় ক্ষমতায় ফিরে আসে। ক্ষমতার অদল-বদল দৃষ্টে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশে একটি দ্বিদলীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন হতে যাচ্ছে। ২০০৬ সালের সম্ভাব্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। রাজপথে লগি-বৈঠার হত্যাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিএনপির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তথা নীতি নির্ধারণী মহলে কতিপয় ভুলের কারণে বিরোধী শক্তি আন্দোলন-আস্ফালনের আশকারা পায়।

একজন বিচারপতির বয়সসীমা বৃদ্ধি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ও রাষ্ট্রপতি নির্ধারণে নীতিগত ভুলগুলো বিরোধী শক্তিকে চক্রান্তের সুযোগ করে দেয়। বিশেষত সেনাবাহিনী প্রধান নির্ধারণে পেশাদারিত্বের পরিবর্তে কৃত্রিম আনুগত্য সমস্যা সৃষ্টি করে। গোটা জাতিকে এসব ভুলের মাশুল দিতে হয়। সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কট সেনাবাহিনীর জন্য হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বৈধ সুযোগ নিয়ে অবৈধ সেনাসমর্থিত সরকার কায়েম করা হয়। কতিপয় উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তার আত্মরক্ষার তাগিদে এবং ষড়যন্ত্রের ফলে জাতীয়তাবাদী শক্তি ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজয় বরণ করে। অবৈধ সরকারের বৈধতা এবং নিষ্কৃতির শর্তে বিএনপিবিরোধী শক্তি ক্ষমতা লাভ করে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে সৃষ্ট গণজোয়ার বিএনপিকে ক্ষমতায় পৌঁছতে যাচ্ছে- এই সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য আবারো ষড়যন্ত্র করা হয়। গোটা জাতি পাতানো নির্বাচন বয়কট করলেও সরকার নির্লজ্জভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে বিনা নির্বাচনে জয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে তামাশায় পরিণত করে।

সংবিধান তথা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলে শিগগিরই আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও তা রক্ষা করা হয়নি। ২০১৮ সালে ডক্টর কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সংলাপের পর গোটা জাতির সামনে দেয়া নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করা হয়নি। বরং পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় ‘নিশীথ নির্বাচন’ করে গোটা বিশ্বে হাস্যরসের সৃষ্টি করে। বিএনপি তার শক্তি, সামর্থ্য ও কৌশল দিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করেও নির্বাচন যেমন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়, তেমনি একটি গণআন্দোলন পরিচালনায়ও ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতার দায়ভার বিএনপির নয়, বরং সেই শক্তি মদমত্ততার যার ফলে মানুষের অধিকার ও ত্যাগ-তিতিক্ষা রক্তের ভাষায় মোকাবেলা করা হয়।

ক্ষমতাসীন সরকারের এই শক্তি প্রয়োগের রাজনীতির ফলে সারা দেশে একটি ভয়ঙ্কর ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। জেল-জুলুম, হামলা-মামলা আর গুম-হত্যা নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভয়ঙ্কর অবস্থায় নাগরিক সাধারণ একটি বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থায় থাকলেও তাকে বাস্তব রূপ দেয়ার চেষ্টা দৃশ্যমান হচ্ছে না। দীর্ঘ করোনাকালীন সময়ে প্রকারান্তরে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর জন্য আশীর্বাদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী ২০২৩ সালে একটি নির্বাচন হতে হবে। গ্রহণযোগ্য অথবা অগ্রহণযোগ্য হোক- নির্বাচন একটা হতেই হবে। অবস্থাদৃষ্টে লোকেরা বলাবলি করছে ‘ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়’। গত নির্বাচনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো যে নির্মম অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তাতে কারো পক্ষেই আগামী নির্বাচনে শামিল হওয়া বাস্তবসম্মত হবে না। অতীতে যে ছল-বল-কল প্রয়োগ করা হয়েছে তা কার্যকারিতার দিক দিয়ে ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। তাই শাসকদল নতুন করে রামদায় শাণ দিচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, অতি সাম্প্রতিককালে শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য ‘নির্মম কিন্তু নিরর্থক নয়’। সমস্ত রাজনৈতিক বিবেচনায় বিএনপি হচ্ছে শাসকদলের একমাত্র ভীতির কারণ। গত এক যুগ ধরে বিএনপিকে মেরে কেটে তুলোধোনা করে একরকম অকার্যকর করে তুলেছে। গ্রাম-গঞ্জে দলীয় প্রতীক ছড়িয়ে দিয়ে রাজনৈতিক নোংরামি সর্বত্র বিস্তার ঘটিয়েছে। প্রধান বিরোধী দলসহ কোনো রাজনৈতিক দলেরই মুরোদ নেই যে, গ্রামের সেই অবাধ নৈরাজ্যকে প্রতিহত করে। এরপরও হয়তো সরকারের শঙ্কা যে, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি একটা বড় গণ-আন্দোলনের সৃষ্টি করতে পারে। দৃশ্যমানভাবে সরকারের নেতারা মাইক্রোস্কোপ দিয়েও বিএনপির প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখতে পাচ্ছেন না। তবে তাদের নিত্যদিনের উচ্চারণ যখন বিএনপিকে নিয়ে, তখন সহজেই অনুমেয়, তারা বিএনপি ফোবিয়ায় ভুগছে।

বাংলাদেশের এই করোনাকালে মাঠে-ঘাটে-হাটে, বাসে অথবা ট্রেনে, গ্রামের জটলায় অথবা পাড়ার টি-স্টলে, আপনি যদি কান পেতে মানুষের কথা শোনেন, তাহলে তাদের মনের কথা জানতে পারবেন। সেখানে বিএনপির পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়। তাদের বুকে ডাক্তারি যন্ত্র বসালে বিএনপির ধুকধুক শুনতে পাবেন। সবাই বলে যদি তারা একটু সুযোগ পায়, যদি তারা নিজের ভোটটি নিজে দিতে পারে তাহলে দুনিয়া ওলটপালট হয়ে যাবে। এ তো মানুষ বলে, সে খবর কি সরকারপক্ষ রাখে না? তারা ভাবছে, জিয়াউর রহমানের দল বিএনপিকে নিষিদ্ধ করে দিলে তারা খোলা মাঠে গোল দিতে পারবে। একজন আওয়ামী নেতা বিএনপিকে নিষিদ্ধের দাবি তুলছেন। তাদের সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা- জিয়াউর রহমানের মাজার সরিয়ে দিতে পারলে জনগণের মাঝ থেকে তার আবেদন নষ্ট করা যাবে। তাকে পাকিস্তানের চর প্রমাণ করতে পারলে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে। বিএনপিকে এখন স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিও বলা হচ্ছে। আগে এটি জামায়াতে ইসলামীর ‘নিজস্ব সম্পত্তি’ ছিল। করোনা উপদ্রব শেষ হয়ে গেলে, ইউনিভার্সিটি খুললে বিপদ আছে, সরকারি দলের ওবায়দুল কাদের সে বেফাঁস কথাটি ইদানীং ফাঁস করে দিয়েছেন।

সে দিন শহীদ মিনার থেকে ছাত্রদল একটি বড় মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাচ্ছিল। ছাত্রলীগের নেতারা সেখানে হামলা চালিয়েছে। অথচ সংবাদমাধ্যমে তা একেবারেই অস্বীকার করেছেন। মজার বিষয়, তাদের একজন বলেছে, তবে, স্বাধীনতাবিরোধীদের তৎপরতা রোধে সাধারণ ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই হামলা পরিচালনা করে থাকতে পারে! লক্ষ করার বিষয়- ছাত্রদলও এখন ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ পদকে ভ‚ষিত হতে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে শাসকদলের মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার পালা।

একটি দল বা গোষ্ঠীকে যদি অন্যায়, অত্যাচার ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে শেষ করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়, তার চেয়ে বড় ভুল আর কিছু নেই। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ড তার একটি প্রমাণ। রক্তপাতের মধ্য দিয়ে, জাতির স্থপতির মর্যাদাপূর্ণ লাশ মর্যাদাহীনভাবে দাফন করে অথবা টুঙ্গিপাড়ার অজোপাড়াগাঁয়ে তার মহান দেহটি সরিয়ে দিয়ে তার আদর্শ মুছে ফেলা গেছে? তাহলে জিয়াউর রহমানের কবর জাতীয় সংসদ চত্বর থেকে সরিয়ে দিয়ে অথবা জিয়াউর রহমানের দল বিএনপিকে নিষিদ্ধ করে কি তার আদর্শ মুছে ফেলা যাবে? কখনো নয়। তাহলে আওয়ামী লীগের মতো একটি প্রাজ্ঞ ও পরিণত দল এ ভুল কেন করতে যাবে? তারা যদি এ ভুল করে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে তাদের ঘাড়ে। সুতরাং বিবেক জাগ্রত হোক। মানবিক আচরণ করুক সব পক্ষ। এই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]