মহেন্দ্র কুমার জালান একজন ভারতীয় শত কোটিপতি। তাঁর খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ছিল। দুগ্ধ খামার ছিল। বাণিজ্যিক আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ছিল। এই ধরনের অনেক ব্যবসা ছিল তাঁর। ২০১৯ সালে সরকারি সংস্থাগুলো তাঁর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অপরাধের অভিযোগে তদন্ত শুরু করলে তিনি তাঁর অর্থকড়ি অন্য খাতে সরিয়ে ফেলতে শুরু করেন।
সদ্য প্রকাশিত একটি রেকর্ড থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) জালানের কোম্পানিগুলো গোপনে লাখ লাখ ডলার চাঁদা দিয়েছিল। নতুন রেকর্ডে দেখা গেছে, জালানের বিরুদ্ধে যখন কেন্দ্রীয় তদন্ত হচ্ছিল, সে সময়টাতে বিজেপিকে তিনি চার কোটি ২০ লাখ ডলার উপহার দিয়েছিলেন।
জালানের এই ঘটনা ভারতের রাজনীতিতে চাঁদা দেওয়া-নেওয়া সংক্রান্ত ভূরি ভূরি ঘটনার একটি।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি ব্যাংককে ‘নির্বাচনী বন্ড’-এর ক্রেতা এবং প্রাপকদের নাম প্রকাশ করতে বাধ্য করার পর জনসাধারণের মধ্যে এখন ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।
২০১৭ সালের অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে ভারতে মোদি সরকার ২০১৮ থেকে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল। এর ফলে কোনো ব্যক্তি বা করপোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দিতে চাইলে, বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দিতে হবে। এক হাজার, দশ হাজার, এক লাখ, দশ লাখ এবং এক কোটি টাকা মূল্যের বন্ড পাওয়া যাবে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু কে, কত টাকা দিচ্ছেন, তা বোঝা যাবে না।
এই বন্ডের ফলে করপোরেট সংস্থার পাশাপাশি বিদেশিরাও টাকা দিতে পারতেন রাজনৈতিক দলগুলোকে। যার বিনিময়ে ব্যক্তি বা সংস্থা ১০০ শতাংশ কর ছাড় পেত। এই ব্যবস্থায় কোম্পানিগুলো নিজেদের পরিচয় গোপন করে রাজনৈতিক প্রচারণায় সীমাহীন পরিমাণে চাঁদা দিতে পারত। গত ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট এই বন্ড প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছেন। একইসঙ্গে আগের তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন।
ফলস্বরূপ যে তথ্য উপাত্ত সামনে এসেছে, তা ভারতীয় রাজনীতি-যন্ত্রের একটি বিরল চিত্র দেখিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে ভারতীয় কোম্পানিগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে দুই শ কোটি ডলার চাঁদা দিয়েছে। আর এই অর্থের অর্ধেকই গেছে ক্ষমতাসীন বিজেপির থলিতে।
জাতীয় নির্বাচন শুরু হওয়ার মাত্র সপ্তাহ কয়েক আগে ফাঁস হওয়া এই তথ্য জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন হতে যাচ্ছে ভারতে। এই নির্বাচনের খরচ দেড় হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এই খরচ ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খরচকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে কোম্পানি যত বড় সরকারি কাজ পেয়েছিল, সে কোম্পানি তত বড় অঙ্কের চাঁদা দিয়েছে। (এটি অবশ্য সারা বিশ্বে চর্চিত একটি প্রথা) তবে এ ক্ষেত্রে আরও আকর্ষণীয় একটি প্যাটার্ন ছিল। সেটি হলো: একেবারের ওপরের সারিতে থাকা প্রথম ৩০টি করপোরেট দাতা প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধেকই নির্বাচনী বন্ড কেনার সময় সরকারি তদন্তের মুখে পড়েছিল।
এ বিষয়ে ভারতের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা যে অনিষ্পন্ন উপসংহার টেনেছেন, তা উদ্বেগজনক। তাঁরা এই সরকারি তদন্তের বিষয়টি দেখে মনে করছেন, হয় ভারতীয় শত কোটিপতি ব্যবসায়ীরা তাঁদের সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নিয়মিত ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন; না হয় বিজেপি-নিয়ন্ত্রিত সরকার চাঁদাবাজি করার জন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে তাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে।
নয়াদিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ-এ কর্মরত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ নীলাঞ্জন সরকার বলেছেন, ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো কয়েক দশক ধরে তাদের ‘ক্ষমতা খাটানো ও বলপ্রয়োগের জন্য বহুল পরিচিত’। তিনি বলেছেন, ‘গত ১০ বছরে সরকারের দমন পীড়নের মাত্রা কমেনি; পরিবর্তন বলতে যা কিছু হয়েছে, তা হলো আর্থিক তদন্তের মাধ্যমে দমন বেড়েছে এবং হয়রানির হাতিয়ারগুলো শক্তিশালী হয়েছে।’
নীলাঞ্জন বলেছেন, ‘এ ক্ষেত্রে যদিও “ফেল কড়ি মাখ তেল”-এর বিষয়টি প্রমাণিত নাও হতে পারে, তবে নতুন উপাত্ত দেখে মনে হবে, সরকারের নজরদারি সংস্থাগুলোর দিক থেকে আসা আইনি পদক্ষেপ ঠেকাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হয়েছে।’
যেহেতু বিজেপি বন্ড চালু করেছে এবং এই বন্ডের সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করেছে তারা, সেহেতু এই তথ্য প্রকাশের পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের ‘স্বাস্থ্য’ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আগামী এপ্রিলে শুরু হতে যাওয়া নির্বাচনে (যার মাধ্যমে মোদি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে) স্বচ্ছভাবে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়েও সংশয়ের অবকাশ তৈরি হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নির্বাচনী হাওয়া উত্তপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোদি সরকার বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া সবচেয়ে বড় বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির প্রচুর অর্থ জমা আছে—এমন বেশ কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে।
সর্বশেষ নির্বাচনী বন্ডের তথ্য সামনে আসার পর এখন মোদির সমালোচকেরা বলছেন, এই তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল তহবিল সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নেমে অন্যায্য সুবিধা নিয়ে থাকে।
দিল্লি এবং পাঞ্জাব রাজ্যে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির নেতা ও দিল্লি সরকারের মন্ত্রী অতিশী রাজনৈতিক দলের প্রচারণা তহবিলে এই চাঁদাদানকে ব্যবসায়ীদের ‘টাকশালের রক্ষাকবচ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অতিশী বলেছেন, ‘আশির দশকে বলিউডের ছবিতে দেখা যেত, বোম্বের ডন ব্যবসায়ীদের কাছে রাস্তার মাস্তানদের পাঠিয়ে বলত, “টাকা দিন, কেউ আপনার গায়ে কোনো আঁচড় কাটতে পারবে না। ” ’ তিনি মনে করেন, মোদি সরকারও সেই ডনের ভূমিকায় চলে গেছে।
অতিশী বলেছেন, ‘কোনো ক্ষমতাসীন দল যাতে নির্বাচনে জেতার জন্য তার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করতে না পারে, সেই দিক লক্ষ্য করে নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে ডিজাইন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কাঠামোটিকে টুকরা টুকরা করে ফেলা হয়েছে।’
গত ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট দেড় শ কোটি ডলারের নির্বাচনী বন্ড কেনা হয়েছে। এর মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৭২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বন্ড। অর্থাৎ বিজেপির পরে থাকা মোট ৭টি দল যা পেয়েছে, তার চেয়ে বিজেপির আয় হয়েছে বেশি। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সামগ্রিক আর্থিক সুবিধা আরও বিস্তৃত বলে ধারণা করা যায়। কারণ নির্বাচনী বন্ডগুলো নির্বাচনী প্রচারাভিযানের অর্থায়নের একটি ভগ্নাংশ মাত্র। এর বড় অংশের জোগান নগদ আকারে আসে।
মোদির পরিচ্ছন্ন ও ব্যবসাবান্ধব ভাবমূর্তির ওপর নির্ভরশীল বিজেপি নির্বাচনী বন্ড ইস্যুতে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ নিয়ে তারা প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছে। একটি প্রচার সমাবেশে মোদি বলেছেন, তিনি দুর্নীতির মূলোৎপাটন প্রশ্নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাঁর তদন্তকারী সংস্থাগুলো যে কোনো ধরনের গোপন উদ্দেশ্য ছাড়াই মামলাগুলো তদন্ত করছে।
বিজেপির মুখপাত্র শাজিয়া ইলমি ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‘বিরোধীদের যদি মনে হয় আমরা আমরা কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছি, তাহলে তাদের উচিত সংবাদমাধ্যমের সামনে কান্নাকাটি না করে আদালতে যাওয়া।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের সবচেয়ে বড় দল। তাই কেন মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখে, সেটি স্পষ্ট।’
এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, ২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতায় আসার অনেক আগে থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছিল।
নির্বাচনে যাতে নগদ টাকার খেলা চলতে না পারে সে জন্য ২০১৭ সালে মোদির অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নির্বাচনী বন্ড চালুর প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সে বছর অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) নামের একটি নাগরিক সংগঠন, কমন কজ ইন্ডিয়া নামের আরেকটি সংগঠন এবং কমিউনিস্ট পার্টি এক জোট হয়ে এই প্রস্তাবকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করে। তাদের বক্তব্য ছিল, এই সব বেনামি বন্ড প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক স্বচ্ছতাকে বাড়াবে না, বরং কমাবে। এই জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট তাদের পক্ষ নিয়ে নির্বাচনী বন্ডের লেনদেনের বিবরণ প্রকাশের নির্দেশ দেন।
এডিআর-এর হয়ে কাজ করছেন জগদীপ ছোকার নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কীভাবে অর্থ এবং সুবিধার লেনদেন হয়েছে তার একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। ভারতের এক দল রাজনৈতিক গবেষক ও সাংবাদিক সম্প্রতি একটি দীর্ঘ তালিকা উন্মোচন করেছেন। সেখানে তাঁরা শুধু বিজেপিকে নয় বরং বিজেপির অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে সন্দেহজনক চাঁদা দেওয়া জ্বালানি টাইকুন, টেলিকম সংস্থা, ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এবং একজন ‘লটারি রাজা’র নাম ও তাদের লেনদেনের বিবরণ প্রকাশ করেছেন।
শরৎ চন্দ্র রেড্ডি নামের একজন ওষুধ ও প্রসাধন সামগ্রী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ২০২২ সালে সিবিআই তদন্ত করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি মদের লাইসেন্সের বিনিময়ে আম আদমি পার্টিকে ঘুষ দিয়েছিলেন। রেকর্ড বলছে, রেড্ডিকে হাজতে নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে তিনি বিজেপির তহবিলে উপহার দিতে ৬৬ লাখ ডলারের বন্ড কিনেছিলেন। পরে রেড্ডিকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এই রেড্ডিই আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে মোদি সরকারের করা মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছিলেন এবং তাঁর সাক্ষ্যের কারণেই আম আদমির বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের পথ তৈরি হয়।
আম আদমির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রচারণা শুরু করতে যাবেন, ঠিক এমন সময়ে (গত সপ্তাহে) তাঁকে জেলে ভরে দেওয়া হয়েছে। রেড্ডির কোম্পানি অরবিন্দ ফার্মার মুখপাত্র দীপ্তি ক্ষত্রীকে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে আমরা অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও যাঁরা মোটা টাকা চাঁদা দিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে কিউইক সাপ্লাই চেইন। এটি মুম্বাইয়ের একটি অস্পষ্ট পরিচয়ের প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কর্মকর্তাদের এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন কোম্পানি রিলায়েন্স-এর অফিশিয়াল ইমেইল ঠিকানায় যোগাযোগ রাখতে দেখা গেছে। রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে, কিউইক তার ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে সামান্য লাভের কথা জানালেও ওই সময়টাতেই বিজেপিকে তারা চাঁদা দিয়েছে ৫ কোটি ডলার। রিলায়েন্সের একজন মুখপাত্র বলেছেন, কিউইক ‘রিলায়েন্সের কোনো অঙ্গ সংগঠনেরও সহযোগী নয়’। তবে বিজেপিকে চাঁদা দেওয়া কিউইকের সঙ্গে রিলায়েন্সের সামগ্রিক সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর তিনি সে প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি।
রাজনৈতিক দলগুলোকে বন্ড উপহার দেওয়ার নামে চাঁদা দেওয়ার অনুশীলন কতটা ব্যাপক হয়ে উঠেছে তা বোঝার জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থের নির্বাচনী বন্ড কেনা ব্যক্তির দিকে তাকালে বোঝা যাবে। এই ব্যক্তির নাম মার্টিন সান্তিয়াগো। তিনি একজন জুয়া খেলা ও লটারি ব্যবসায়ী। তাঁকে সারা ভারতে সবাই ‘লটারি কিং’ নামে চেনে। প্রথম জীবনে দিনমজুরি করা এই ব্যক্তি পরে তামিলনাড়ু রাজ্যে জুয়া খেলার মোগল হয়ে ওঠেন। তিনি শুধু বিজেপিকে নয়, বরং বিজেপির ছোট প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোকেও বন্ডের মাধ্যমে চাঁদা দিয়েছেন।
সান্তিয়াগো একাধিক রাজ্যে ঘুষ দেওয়া, জালিয়াতি করা এবং জমি বাজেয়াপ্ত করার অভিযোগের মুখে পড়েছেন। এই ব্যক্তি পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস পার্টিকে ৬ কোটি ডলার, তাঁর নিজের রাজ্যের দ্রাবিড় মুনেত্র কাজগম পার্টিকে ৬ কোটি ডলার এবং মোদির দলকে মাত্র ১ কোটি ২০ লাখ ডলারের বন্ড উপহার দিয়েছেন। মার্টিনের করপোরেট সেক্রেটারিকে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
সব শেষে আসি জালানের কথায়। তিনি একটি মধ্যম মানের ইস্পাত ব্যবসাকে একটি বিস্তৃত নানামুখী ব্যবসায় পরিণত করেছেন। পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় দুগ্ধ কোম্পানি তাঁর মালিকানাধীন গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত।
এই ব্যবসায়ী কলকাতায় তাঁর বনসাই গাছ ও ক্যাকটাসে ভরা ৪৭০০ বর্গফুটের ছাদ বাগানওয়ালা ১১ তলা সুরম্য পেন্টহাউস এবং স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে দহরম মহরম সম্পর্কের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে সরকারি তদন্ত শুরু হওয়ার পর ২০১৯ সালে তিনি নির্বাচনী চাঁদা দানে উদার হয়ে যান এবং সেই বছরের জাতীয় নির্বাচনে বিজেপির নির্বাচনী বন্ডের তিনি একজন বড় দাতা হয়েছিলেন।
জালানের কেভেনটার গ্রুপের মুখপাত্র সুপর্ণা মুকাদুম মন্তব্য চেয়ে ইমেলের জবাব দেননি।
prothom alo