স্থান :

‘জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা কখনো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি’ জানিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, ‘দেশের প্রয়োজনে, জাতির স্বার্থে বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন। মৃত্যুর ভয়কে পরওয়া করেনি। ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছে তবুও কারো সাথে আপোস করে রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি।
সোমবার (১৪) জুলাই রাতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে শ্রমিক অঙ্গনে আহত পুঙ্গত্ববরণকারী জুলাই যোদ্ধাদের সাথে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘আগে আওয়ামী লীগ মনে করেছিলো এই দেশ তাদের বাপ-দাদার। তারা কথায় কথায় মানুষকে দেশ ছাড়তে হুমকি দিয়ে তারাই বাংলা ছেড়ে তাদের আপন ঠিকানা ইন্ডিয়ায় চলে গেছে। আওয়ামী লীগ চলে যাওয়ার পর এখন আরেকদল আওয়ামী লীগের মতোই বাংলাদেশকে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করছে। এরা এখন বাংলা ছাড়তে মিছিল করছে। যারা দেশ ছাড়তে ভয় দেখায়, তারাই দেশ ছাড়া! বিদেশে বসে হুঙ্কার ঝাড়ে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কেউ যদি আওয়ামী লীগের বস্তা পঁচা রাজনীতি নতুন করে চর্চা করতে থাকে তাদেরকেও আওয়ামী লীগের পরিণতি বরণ করতে হবে। সজীব ওয়াজেদ জয় আড়াই লাখ কর্মী বেতন দিয়ে নিয়োগ করে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে দমাতে পারেনি। এখন আবার কেউ কেউ সাইবার ফোর্সে লাখ-লাখ কর্মী নিয়োগ দিচ্ছি শুধু জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে। কোনো অপপ্রচারেই লাভ হবে না। জনগণ বুঝে এবং জানে কারা দেশপ্রেমিক এবং জনগণের পক্ষে আর কারা জনগণের বিপক্ষে। এর জবাব জনগণ যথাসময়ে দিবে।’
তিনি উপস্থিত জুলাই যোদ্ধাদের আগামী ১৯ জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দিয়ে সাত দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে অধিকার আদায় করতে আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘আরেকটি যুদ্ধের জন্য আল্লাহ জুলাই যোদ্ধাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। সেই চূড়ান্ত যুদ্ধ হচ্ছে আল্লাহ জমিনে আল্লার দ্বীন কায়েম করা। জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর জমিনে দ্বীন কায়েমের মাধ্যমে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে করে বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যেই রাষ্ট্রে মানুষ, মানুষকে পাথর দিয়ে থেঁতলে থেঁতলে হত্যা করবে না, লাশ পুড়িয়ে দিবে না, লাশের উপর নৃত্য করবে না। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক আদর্শ নাগরিক হিসেবে স্বাধীন ও নিরাপদে বসবাস করবে। কোথাও কোন নৈরাজ্য থাকবে না। নারীর প্রতি সহিংসতা থাকবে না। সব ধর্মের মানুষ সমানভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের নিশ্চয়তা পাবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পরও সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, খুন, ধর্ষণ বন্ধ হয়নি। এসব অপকর্ম কারা করছে জাতি জানে। জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস, চাঁদাবাজে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর কারণে একটি দল আজ সরাসরি জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মিছিল করেছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের গায়ে লাগে কেন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের চামড়া তোলার চেষ্টা না করে নিজ দলের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করুন। নয়তো আওয়ামী লীগের মতো আপনাদের উপরও অভিশাপ নেমে আসবে।’
সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করে শিষ্টাচার বজায় রেখে রাজনীতি করতে তিনি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান।
শ্রমিক অঙ্গনে আহত পুঙ্গত্ববরণকারীদের উদ্দেশ্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘শ্রমিক জনগোষ্ঠী যখন নতুন বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে আসবে তখনই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সহজ হবে। এর প্রমান জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তাদের অবদান। শহীদ ও আহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শহীদ ও আহত হয়েছে শ্রমিক জনগোষ্ঠী। জামায়াতে ইসলামী সকল শহীদ পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে উপহার দিয়েছে এবং প্রত্যেক আহতদের চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। এছাড়াও জামায়াতে ইসলামী শহীদদের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য ১০ খন্ডে ১৫শ পৃষ্ঠার বই মোড়ক উন্মোচন করেছে। ১৮ কোটি মানুষের মুক্তির জন্য যারা জীবন দিয়েছে তাদের ইতিহাস কেউ ভুলতে পারবে না, মুছতে পারবে না।’ আগামীতে আহতদের নিয়েও বই প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি সোহেল রানা মিঠুর পরিচালনায় মহানগরীর হলরুমে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম, মহানগরীর সহ-সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে হাফিজুর রহমান, মাহবুবুর রহমান, ওমর ফারুক, জুবায়ের আল মাহমুদ, মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চঞ্চল, মহানগরীর কার্যনির্বাহী সদস্য যথাক্রমে ড. আজগর আলী, জয়নাল আবেদীন, মিজানুর রহমান, মো: ইউসুফ আলী, আব্দুর রহমান, আব্বাস উদ্দিন, শহীদ রফিকুল ইসলামের ভাই, আহত লাইলী আক্তার লিজা, আহত আল-আমিন, আহত সোহাগ প্রমুখ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি