জামায়াতের সঙ্গে অন্যদের ঐক্যে বাধা মতাদর্শিক দূরত্ব

ছবি: সংগৃহীতছবি: সংগৃহীতছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে ইসলামি দলগুলো। গত দুই মাসে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মাঠে শক্তির মহড়া দিচ্ছে তারা। শুধু তা-ই নয়, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে কীভাবে ঐক্য গড়ে তোলা যায়, তা নিয়েও সমমনাদের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন আলাপ-আলোচনা। ইসলামি শক্তির ঐক্য গড়ার চেষ্টায় অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর প্রতিষ্ঠা করা এই দলের সঙ্গে অন্যদের আকিদাগত মতপার্থক্য আছে। আর এটিই বৃহত্তর ঐক্যের পেছনে বড় বাধা বলে মনে করছে অন্য দলগুলো।

জানা গেছে, শেখ হাসিনার পতনের পর গত দুই মাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছে জামায়াত। এই দলগুলোর মধ্যে আছে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, জাকের পার্টি, লেবার পার্টি, খেলাফত মজলিস ও ফরায়েজী আন্দোলন। এ ছাড়া খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আব্দুল মাজেদ আতাহারী বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ও আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় ও সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতের আমির।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়াবিষয়ক সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের ইসলামি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে চায় জামায়াত। তবে আপাতত সংস্কার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে চায় তারা। সেই লক্ষ্যেই আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে যতই রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকুক, দেশের প্রয়োজনে, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা এক হয়ে ভূমিকা পালন করব। এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই আমাদের আলোচনা, মতবিনিময় হয়েছে।’

তবে নির্বাচনী ঐক্যের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘নির্বাচনের কোনো কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। আগে দেশের সংস্কার করতে হবে। নির্বাচনী ঐক্য নিয়ে আলোচনা আরও পরের ব্যাপার, যখন নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হবে তখন।’

জামায়াত ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে বৃহৎ ঐক্য গড়ে তুলতে চাইলেও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতপন্থী কয়েকটি ইসলামি দল বলছে, মতাদর্শিক ভিন্নতার কারণে জামায়াতের সঙ্গে কোনো ধরনের ঐক্য করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে গত নির্বাচনে অংশ নেওয়া ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ছৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাদের আর আমাদের মতাদর্শ অনেক ভিন্ন। তাই তাদের সঙ্গে আমাদের জোট বা অন্য কিছু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আবুল আ’লা মওদুদীর মতাদর্শ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদার পরিপন্থী। তাই তাদের সঙ্গে আমাদের মিটিং-মিছিল বা বসার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

তবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতপন্থী হলেও ঐক্যের বিষয়ে আগ্রহী চারটি নিবন্ধিত ও দুটি অনিবন্ধিত ইসলামি দলের জোট ‘সমমনা ইসলামি দলসমূহ’। জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘সামনে মেরুকরণ, সমীকরণ কী হয়, আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। কারও সঙ্গে কোনো ধরনের জোট করার নীতিগত সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি।’ জামায়াতের সঙ্গে দলটির মতাদর্শিক পার্থক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব পার্থক্যের কারণে ভবিষ্যতে আমরা কী করব, তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

জামায়াতের সঙ্গে মতাদর্শিক ভিন্নতা প্রশ্নে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা জামায়াতকে বলেছি, উলামায়ে কেরামদের সঙ্গে আপনাদের যে সকল মতপার্থক্য আছে, সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করেন। আর বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের যে ঐক্য হবে, এটা কোনো আদর্শিক ঐক্য হবে না, এটা হবে নির্বাচনী ঐক্য। তারা যদি আলেমদের পক্ষ থেকে যে প্রশ্নগুলো আছে, সেগুলো না শোধরায়, তারপরেও জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য হতে পারে।’

নির্বাচনী ঐক্যের বিষয়ে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে অন্য ইসলামি দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যের বিষয়টিরও সুরাহা চায় ইসলামী আন্দোলন।’ তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতের কিছু বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে যে প্রশ্ন আছে, তাদের আকিদাসংক্রান্ত বিষয়ে অনেকেই বলেন। এগুলো যদি পরিষ্কার না হয়, তাহলে আমাদের ঐক্যের প্রশ্নে এটাও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। জামায়াতের শুরু থেকেই উপমহাদেশে জামায়াতের ব্যাপারে প্রশ্ন আছে। আমরা চাই এই বিষয়টা সমাধান হোক এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে এটার একটা পরিষ্কার বক্তব্য আসুক।’

ajker patrika