জরিপ: ব্যবসায়ী-কৃষকদের পছন্দ বিএনপি, শিক্ষার্থী-চাকরিজীবীরা জামায়াতের দিকে!

24 Live Newspaper

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পেশাভিত্তিক রাজনৈতিক সমর্থনে নতুন এক প্রবণতা উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক জরিপে। এতে দেখা গেছে, দেশের ব্যবসায়ী, কৃষক ও শ্রমজীবী শ্রেণির বড় একটি অংশ বিএনপির দিকে ঝুঁকছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থী ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। জরিপটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছে ইনোভিশন কনসালটিং, ব্রেইন এবং ভয়েস ফর রিফর্ম।

বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর লোগো

সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিডিবিএল ভবনে ‘সোশ্যাল ডায়নামিক্স অন ইলেক্টোরাল প্রেফারেন্স’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে রাউন্ড-২ (পার্ট-৩)’-এর এই ফলাফল তুলে ধরা হয়। ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এই জরিপে মোট ১০ হাজার ৪১৩ জন ভোটারের মতামত নেওয়া হয়। ফলাফল উপস্থাপন করেন ইনোভিশন কনসালটিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াত সারোয়ার।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ব্যবসায়ী শ্রেণির ৩৭.৯ শতাংশ ভোটার বিএনপিকে, ২৪.৩ শতাংশ জামায়াতকে এবং ১৫.৯ শতাংশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন। কৃষক শ্রেণির মধ্যে এই সমর্থনের হার যথাক্রমে বিএনপির প্রতি ৩৯.২ শতাংশ, জামায়াতের প্রতি ২৭.৯ শতাংশ এবং আওয়ামী লীগের প্রতি ১৬.১ শতাংশ। এছাড়া, গৃহিণীদের ৩৩.৮ শতাংশ বিএনপি ও ২২.৫ শতাংশ জামায়াতকে এবং শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর ৩৭.৭ শতাংশ বিএনপি ও ২৬.৬ শতাংশ জামায়াতকে সমর্থন করছেন।

অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ২৭.৬ শতাংশ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছে, যেখানে বিএনপির পক্ষে রয়েছে ২৫.৭ শতাংশ। বেসরকারি চাকরিজীবী ও এনজিও কর্মীদের মধ্যে বিএনপির সমর্থন ৩৪.৪ শতাংশ এবং জামায়াতের ২৮.৭ শতাংশ। বেকার ভোটারদের মধ্যে বিএনপি ৩৭.৪ শতাংশ সমর্থন পেয়ে এগিয়ে আছে, জামায়াতের পক্ষে রয়েছে ২২.১ শতাংশ।

ভয়েস ফর রিফর্মের যুগ্ম আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর বলেন, এই ফলাফল প্রমাণ করে যে ভোটারদের পেশা ও সামাজিক অবস্থান তাদের রাজনৈতিক পছন্দে গভীর প্রভাব ফেলছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী কৌশল ঠিক করার সময় এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

জরিপে ভোটারদের সন্তুষ্টির মাত্রাও যাচাই করা হয়। স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ৩০.৪ শতাংশ ভোটার জামায়াতের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এরপরই রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ২৩.৭ শতাংশ এবং বিএনপির ২১ শতাংশ। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিএনপি সমর্থক ভোটাররা, যার হার ২৭.৬ শতাংশ।

রুবাইয়াত সারোয়ার জানান, ভোটারদের আচরণে লিঙ্গ, বয়স ও পেশাভিত্তিক পার্থক্য বেশ স্পষ্ট। নারী ভোটারদের মধ্যে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। প্রায় ৬৯ শতাংশ নারী এই পদ্ধতি সম্পর্কে খুব কম জানেন বা কিছুই জানেন না, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এই হার ৪৫ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ৪৮ শতাংশ নারী ভোটার এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের মতো বিষয়। তরুণ ভোটারদের মধ্যেও সিদ্ধান্তহীনতা লক্ষ্য করা গেছে। এই জরিপ থেকে এটি স্পষ্ট যে, নারী, তরুণ প্রজন্ম ও সংখ্যালঘু ভোটাররা আসন্ন নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া, দেশের অধিকাংশ মানুষ ভারত ও পাকিস্তান—উভয় দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক দেখতে চায়, যা একটি বাস্তববাদী পররাষ্ট্রনীতির ইঙ্গিত দেয়।