জনগণের নয়, এই সরকার ভারত, চীন, রাশিয়ার

জাতীয় নির্বাচনের পর রাজধানীর নয়াপল্টনে কালো পতাকা মিছিলের মাধ্যমে শোডাউন করেছে বিএনপি। মিছিল-পূর্ব সমাবেশে দলটির নেতারা বলেছেন, ৭ই জানুয়ারি দেশের ৭ শতাংশ মানুষও ভোট দেয়নি। এই সরকার জনগণের সরকার নয়, তারা ভারত, চীন, রাশিয়ার সরকার। এই সরকারকে আমরা মানি না, জনগণ মানতে বাধ্য নয়। এ সময় সংসদ অধিবেশন শুরুর দিন আগামী ৩০শে জানুয়ারি সারা দেশে ফের কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেয় দলটি। সংসদ বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আয়োজিত কালো পতাকা মিছিলে অংশ নিতে গতকাল দুপুর থেকেই নয়াপল্টনে জড়ো হন রাজধানী বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল শুরুর আগেই নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। কার্যালয়ের সামনে ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিকাল ৩টার পর কালো পতাকা মিছিলের উদ্বোধন করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। মিছিলটি নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়, ফকিরাপুল, আরামবাগ মোড় ঘুরে ফের নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়।

এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

তিনি বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার নয়, এই সরকার ভারত, চীন, রাশিয়ার সরকার। তাই এই সরকারকে আমরা মানি না, এই সরকারকে মানতে বাধ্য নই। এটা আমাদের ভোটের লড়াই, গণতন্ত্রের লড়াই এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই। সুতরাং প্রতিরোধের আগেই মানে মানে কেটে পড়ুন। গয়েশ্বর রায় বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই। আজকে জিনিসপত্রের দাম অতিমাত্রায় বৃদ্ধি। দেশের মানুষ দিশাহারা। ঘরে ঘরে অভাব। দিনমজুর মানুষ আগের মতো পেট ভরে দু’বেলা খেতে পারে না। তিনি বলেন, দেশটাকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। আর তারা নাকি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচন করেছে। আসলে এই ধারাবাহিকতা তাদের লুটপাট ও মহাদুর্নীতির কারণে। ১০ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। যারা পাচার করেছেন তারা কিন্তু অস্বীকারও করে না। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আজকে ৬শ’র বেশি সংসদ সদস্য। এর মধ্যে তারা নতুন সরকার গঠন করেছে। এটা তো আইনের লঙ্ঘন। আবার ওবায়দুল কাদের বলছেন- বিরোধী দল কারা হবে? গয়েশ্বর রায় বলেন, নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে গণভবনে ঘন ঘন বৈঠক করেছে। কে কয়টা আসন পাবে সেটা বলে দিলো। তৃণমূল দল করলো। কিন্তু সেটাও ছাগলে খেয়ে ফেললো। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইডি কার্ড নিয়ে নিজেরা নিজেরা ভোট দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সেদিন একজন বিজিবি সদস্যকে হত্যা করেছে। কেন কিসের অধিকারে তারা এটা করেছে? কেন একটা প্রতিবাদ নেই? আজকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন। কারণ অন্য কেউ যখন দেশের সিদ্ধান্ত নেয় তখন তো আমার সার্বভৌমত্ব থাকে না।

গয়েশ্বর বলেন, ৭ই জানুয়ারি নির্বাচনে শেখ হাসিনা ৭ পার্সেন্ট ভোটের মালিক। আর ৯৩ শতাংশ মানুষের নেতা তারেক রহমান। সরকারের মানসম্মান ও লাজ-শরম থাকলে জনগণের ভোটাধিকার ফেরত দিতো। দেখেন ১ শতাংশ ভোট পান কি না?

সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা অবৈধ অগণতান্ত্রিক সরকারের পদত্যাগ ঘটাতে রাজপথে নেমেছি। সরকার কালো পতাকার কালো চিহ্নে নিশ্চিহ্ন হয়ে বিদায় নিতে বাধ্য হবে। গত ৭ই জানুয়ারি দেশের জনগণ এই সরকারকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছে। সেদিন সরকারের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। তারা সেদিন পুলিশ দিয়ে গায়ের জোরে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে নির্বাচন করেছে। সরকার যত শতাংশ ভোট দেখাতে চেয়েছিল সেই মোতাবেক নির্বাচন কমিশন ভোট কাস্টিং দেখিয়েছে। সুতরাং কতো শতাংশ ভোট পড়েছে সেটি কথা নয়। সেদিন কোনো ভোট হয়নি।
তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না। বিএনপি দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। কারণ এই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে। জনগণ কখনোই বাকশালী শাসন মানেনি এবং মানবে না।

বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের সঞ্চালনায় মিছিল-পূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া মিছিলে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, কাদের গণি চৌধুরী, রফিক শিকদার, ঢাকা জেলা বিএনপি’র খন্দকার আবু আশফাক, নিপুণ রায় চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মৎস্যজীবী দলের মো. আবদুর রহিম, ওলামা দলের শাহ মো. নেছারুল হক, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল, মৎস?্যজীবী দল, জাসাসসহ হাজারো নেতাকর্মী কালো পতাকা হাতে অংশ নেন।