জঙ্গি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে আবারো বিভিন্ন ধরনের সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ঢাকার গুলশানে এক রেস্তোরায় জঙ্গি হামলার ১০ দিনের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল ঢাকায় এসে এই প্রস্তাব দিয়েছেন।
মিস বিসওয়াল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সাথে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন।
মার্কিন মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরির পক্ষ থেকে তিনি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে এসেছেন।
“এর আগেই মি. কেরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন। আমি জানাতে এসেছি যে, বাংলাদেশের এই বিরাট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে আমরা আপনাদের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত আছি,” বলেন তিনি।
জানা গেছে, এসব প্রস্তাব গ্রহণে বাংলাদেশ তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া দেয়নি।
তবে বাংলাদেশ সরকার বলছে, কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রয়োজন, সেটা যাচাই করে যুক্তরাষ্ট্রকে পরে জানানো হবে।
ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সাথে বৈঠকের পর মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মূল বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশের চাহিদামত প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
নিশা দেশাই বিসওয়াল গোয়েন্দা তথ্য আদান প্রদানে তাদের সহযোগিতার বিষয়ে জোর দিয়েছেন।
এছাড়াও জঙ্গি দমনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং ফরেনসিক পরীক্ষাসহ কারিগরি সহায়তাও দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকেও তিনি তাদের দিক থেকে এই একই ধরণের সহযোগিতার কথা তুলে ধরেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তথ্য বিনিময় গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রধানমন্ত্রীও মন্তব্য করেছেন।
তবে তিনি সহযোগিতা নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ নিজেদের চাহিদা নিরূপণ করার পর তা যুক্তরাষ্ট্রকে জানাবে।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীর সাথেও বৈঠক করেছেন।
এদিকে, মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও মিস বিসওয়ালের এবারের ঢাকা সফরের ক্ষেত্রে মূল বিষয় হিসেবে সহযোগিতার প্রস্তাবের কথাই বলা হয়েছে।
তাতে মিস বিসওয়াল বলেছেন, তিনি এখানে এসেছেন,সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা এবং সমর্থনের প্রস্তাব নিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশে জঙ্গি দমনে সহযোগিতার প্রস্তাব করে আসছে।
তাতে বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে অনাগ্রহ এবং অস্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে।
আইএস বা আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা বাংলাদেশে আছে কিনা, সেই প্রশ্নই এই অস্বস্তির অন্যতম একটি কারণ।
বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, স্থানীয় জঙ্গি সংগঠনগুলোই হামলা বা গুপ্ত হত্যার ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে।
আইএস বা আন্তর্জাতিক কোন জঙ্গি গোষ্ঠীর কোন অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই এবং তাদের সাথে কোন যোগাযোগও নেই।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেকে বিশ্বাস করেন,যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি করার জন্য বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব প্রমাণের একটা চেষ্টা রয়েছে।
ফলে যুক্তরাষ্ট্র বা বিদেশিরা কোন ভূমিকা রাখলে আইএস ইস্যু সামনে আসতে পারে।
তারা মনে করেন, একইসাথে বিদেশী সহায়তার বিষয় এলে সরকারের ব্যর্থতার প্রশ্নও আসতে পারে।
সন্ত্রাস বা জঙ্গি দমনে ব্যর্থতার প্রশ্ন সরকার মানতে রাজি নয়।
পরিস্থিতি পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও সরকার মনে করে।
তবে, গুলশানে জঙ্গি হামলার পর সহযোগিতার নেয়ার ব্যাপারে বিদেশীদের দিক থেকে চাপ বাড়ছে বলে মনে হয়।
ফলে এবার মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বক্তব্যে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
তিনি বলেছেন, কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রয়োজন , সেটা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাচাই করছে। এবং যাচাইয়ের পর সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে।
Source: BBC