স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলারজমিন ডেস্ক
১ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার
বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্যও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ ও মিছিল করার সময় এসব ঘটনা ঘটে। এসব কর্মসূচিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কোথাও কোথাও সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনাও ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্য আহত হন। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বিএনপি’র ডাকা সমাবেশের বিপরীতে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি ঘিরে গতকাল রণক্ষেত্রে পরিণত হয় কুমিল্লার নাঙ্গলকোট বাজার। এতে উভয়পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরে বিএনপি’র কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে ১০ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বাগেরহাটের চিতলমারীতে বিএনপি’র সমাবেশে যুবলীগের হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। সাভারে যুবদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন। নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও পুলিশের গুলিতে ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি গতকাল সকালে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। অপর দিকে একই সময়ে বিএনপি’র নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সমাবেশ ডাকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল সকালে নাঙ্গলকোট বাজার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও গুলি ছুড়ে। উভয়পক্ষের সংঘর্ঘে ও পুলিশের টিয়ারশেল এবং রাবার বুলেটের আঘাতে ৫০ শিক্ষার্থী ও পুলিশসহ উভয়পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। এ সময় উপজেলা বিএনপি কার্যালয়, লোটাস চত্বর, পুলিশের পিকআপ, নাঙ্গলকোট এ্যাপোলো হাসপাতাল, কয়েকটি মোটরসাইকেল ও বেশকিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আহতদের নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে ভার্তি করা হয়েছে। নাঙ্গলকোট এ.আর মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি’র বিক্ষোভ সমাবেশে উপজেলা বিএনপি সভাপতি নজির আহম্মেদ ভূঁইয়া ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়ার নেতৃত্বে হাজার-হাজার নেতাকর্মী সকাল থেকে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রথমে নাঙ্গলকোট পশ্চিম বাজারে পুলিশ বাধা দেয়, এ সময় বাধা ভেঙে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল বাজারে প্রবেশ করে।
একই সময় উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক নজির আহম্মেদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল এসে একসঙ্গে হয়ে উপজেলা সদরের প্রধান-প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পূর্ব থেকে লোটাস চত্বরে অবস্থান নেয়া উপজেলা বিএনপি সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন নয়নের নেতৃত্বাধীন নেতাকর্মীদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। একই সময় আওয়ামী লীগের সমাবেশ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা রেলস্টেশন এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাজারে আসলে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা সাইদ ইকবাল, বাবলু, নজির আহম্মেদ সুমন, ফারুক হোসেনসহ অর্ধশত নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগের ৪ নেতাকর্মী আহত হয়। এ সময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের কাঁদানে গ্যাসে শ্রেণিকক্ষে থাকা নাঙ্গলকোট এ.আর মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী আহত হয়। নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপি সভাপতি নজির আহম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশ হামলা চালায়। হামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৫০ নেতাকর্মী আহত ও ৫ নেতাকে অন্যায়ভাবে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়।
উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্মআহ্বায়ক অধ্যক্ষ সাদেক হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নাঙ্গলকোটবাসীকে আমরা বড় ধরনের একটি অঘটনের হাত থেকে রক্ষা করতে বাজারে অবস্থান নেই। গফুর ভূঁইয়া সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়ে আমাদের ৩-৪ জন নেতাকর্মীকে আহত করে। মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার মদনে আওয়ামী লীগ বিএনপির সংঘর্ষে মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফেরদৌস আলমসহ দুই পক্ষের অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার চাঁনগাঁও ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘর্ষে মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম, এএসআই খোরশেদ আলম, পুলিশ সদস্য আজিজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ কর্মী শরিফুল ইসলাম, রিপন, বুলবুল আহমেদ, রোকন মিয়া, আনোয়ার হোসেন, মোশারফ, সাগরকে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বিএনপির আহত ৭ নেতাকর্মীকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে মদন উপজেলা বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বিক্ষোভ মিছিলের জন্য চাঁনগাঁও ইউনিয়নের শাহপুর ঈদগাহ মাঠে জড়ো হয়। বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও একই স্থানে জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে দু-পক্ষই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম আকন্দ জানান, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। পরে আমাদের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে ৭ নেতাকর্মী আহত হয়। মদন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার খান এখলাছ জানান, আমাদের নেতাকর্মীদের দেখে বিএনপির নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলে তাদের ওপর ইট ছোড়া হয়। আমাদের ৭ নেতাকর্মীকে আহত অবস্থায় মদন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা করা হবে। মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম জানান, দুই পক্ষের উত্তেজনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যেতেই বিএনপি নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ে। এতে আমি ও আমার দুইজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করতে দেয়নি পুলিশ। কর্মসূচি পালন করার জন্য নেতাকর্মীরা জড়ো হতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বিএনপি ও যুবদলের অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বিকালে শহরের মণ্ডলপাড়া এলাকায়। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জানান, মহানগর বিএনপি’র ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্যোগে নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালনের জন্য শহরের মণ্ডলপাড়া এলাকায় জড়ো হন। এ সময় পুলিশ এসে তাদের কর্মসূচি পালন করতে নিষেধ করে।
পুলিশের বাধায় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা সড়কের ফুটপাথে বসে থাকেন। কিছুক্ষণ পর যুবদল নেতা জোসেফের নেতৃত্বে যুবদলের একটি মিছিল এলে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আহত নেতাকর্মীরা হলেন- মহানগর যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাগর প্রধান, সাবেক দপ্তর সম্পাদক শওকত খন্দকার, যুবদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ, আমির হোসেন, বিল্লাল হোসেন, ইব্রাহিম আহমেদ বাবু ও রাসেল। তাৎক্ষণিকভাবে অন্যদের নাম পাওয়া যায়নি। মহানগর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা ধারাবাহিকভাবে ৬টি প্রোগ্রাম করেছি। গতকাল ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। অথচ আমাদের সামনে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করেছে। তাদের বাধা দেয়নি। মহানগর বিএনপি’র সহ-সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের দাঁড়াতেই দেয়নি। একপর্যায়ে পুলিশ অতর্কিতভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। পুলিশের হামলায় আমাদের ১০ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, আমাদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিল তারা। পরে আমাদের পুলিশ সদস্যরা তাদের সরিয়ে দেন।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের চিতলমারীতে বিক্ষোভ-সমাবেশে যুবলীগের হামলায় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে সাবেক ছাত্রদল নেতার মোটরসাইকেল। মঙ্গলবার সকালে যুবলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে উপজেলা সদরে রামদা, হকিস্টিকসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে বিভিন্ন সড়কে মিছিল করে বেধড়ক পিটিয়ে ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করে বিএনপি’র বিক্ষোভ সমাবেশ ভণ্ডুল করে দেয়। সশস্ত্র মিছিলের ভিডিও যুবলীগের এক নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। চিতলমারী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আহসান হাবিব ঠাণ্ডা জানান, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যেরমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভোলায় দুই নেতাকে হত্যাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে চিতলমারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে আমাদের পূর্ব-নির্ধারিত সমাবেশ ছিল। সমাবেশ বানচাল করতে যুবলীগের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে পুলিশের উপস্থিতিতে উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়কে হকিস্টিক, রামদাসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে বেধড়ক পিটিয়ে বিএনপি’র ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করে। এ সময় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় সাবেক ছাত্রদল নেতা শফিকুল ইসলাম বাবুর মোটরসাইকেল।
আহত ১৫ নেতামীর মধ্যে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম মনি, কৃষকদল নেতা শেখ মোহাম্মাদ আালী, যুবদল নেতা কামাল বিশ্বাস ও সাবেক ছাত্রদল নেতা শফিকুল ইসলাম বাবুর অবস্থা গুরুতর। পুলিশের উপস্থিতিতে ওই সশস্ত্র মিছিলের ভিডিও যুবলীগের নেতা জামাল শিকদার তার ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন। চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাবুল হোসেন খান দাবি করেছেন, বিএনপি’র কোনো নেতাকর্মীর ওপর আওয়ামী লীগের লোকজন কোনো হামলা করেনি। বিএনপি মিথ্যা অভিযোগ করছে। চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম কামরুজ্জামান খান জানান, শুনেছি একজন মিছিলের মধ্যে প্রবেশ করে মোটরসাইকেল ফেলে চলে গেছে। এছাড়া চিতলমারীতে তেমন কোনো হামলার ঘটনার কথা শুনিনি আমরা। ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহে বিএনপি’র সমাবেশে আসার সময় নেতাকর্মীদের ওপর দেশীয় অস্ত্র, লাঠি, রামদা, হকিস্টিক ও হাতুড়ি দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বিএনপি নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘরে। হামলায় ১২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুরুতর ২৭ জনকে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ, শৈলকুপা, ঢাকা ও যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিএনপি’র সমাবেশে আসা- যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এই হামলা চালায়। বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে দেয়া হচ্ছে না। বুধবার দুপুরে এইচএসএস সড়কস্থ ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করে বিএনপি। জেলা বিএনপি’র সভাপতি এড. এমএ মজিদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, মঙ্গলবার ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী হাইস্কুল মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে সদর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও জেলার ৬টি উপজেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করে। আসার পথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পুলিশের সহযোগিতায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে প্রায় ১২০ নেতাকর্মী আহত হন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন, ঘোড়াশাল ইউনিয়নের নেতা আশিক, রুবেল, আলামীন, পলাশ, রিয়াজ হাসান, এনামুল, রিয়াজ, রাকিব, শুভ ও পারভেজ, মধুহাটি ইউনিয়নের কৃষক দল নেতা ইমরান ও নাজির, সাগান্না ইউনিয়নের বিএনপি নেতা মকলেছুর রহমান বকুল, মহারাজপুর ইউনিয়নের বিএনপি নেতা সঞ্জের আলী, গান্না ইউনিয়নের ছাত্রদল নেতা শামীম ও নিশাদ, বিএনপি নেতা আনিচ, শাহাজান, যুবদল নেতা জুবায়ের ও কাওসার, নলডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল, বিএনপি নেতা সবজেল, মনিরুল, আলীম, পদ্মাকর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি ওলিয়ার রহমান, শৈলকুপা উপজেলার যুবনেতা আনারুল, জুয়েল, বাবু, মাজেদ, আসাদুল, তারেক, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইফুল ইসলাম, কোটচাঁদপুর উপজেলা যুবদল নেতা সিরু, আশরাফ, কোটচাঁদপুর ছাত্রদলের সদস্য সচিব হীরা, কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সফর আলী, যুবদল নেতা লোকমান, কাষ্টভাংগা ইউনিয়নের বিএনপি নেতা আতিয়ার, যুবদল নেতা পিয়ার প্রমুখ। তারা বিএনপি’র নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি কামাল আজাদ পান্নু ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন আলমের মালিকানাধীন ঝিনাইদহ শহরের প্রিন্স হাসপাতাল অ্যান্ড ক্লিনিকে হামলা চালিয়ে দাঁতের এক্সরে মেশিন (ওজিটি), কম্পিউটার, অফিস ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এতে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। হামদহ অঞ্চলের সদর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ঠান্ডুর প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকার মালামাল লুট করে। জেলা শ্রমিক দল নেতা শিবলুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও নগদ অর্থ লুট করে।
যুবদলের থানা আহ্বায়ক আশরাফ হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। এ ছাড়া সাগান্না ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নিজেরা আগুন দিয়ে বিএনপি’র ১২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করেছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, বিএনপি নেতা মুন্সি কামাল আজাদ পাননু, সাজেদুর রহমান পাপপু, আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, আলামগীর হোসেন আলম, মাহফুজুর রহমান ইপিআর, শাহজাহান আলী, আবু বক্কার সিদ্দিক, জেলা মহিলাদলের সভাপতি অধ্যক্ষ কামরুন্নাহার লিজি,আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, মিজানুর রহমান সুজনসহ জেলা, উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, সাভারে পুলিশের সঙ্গে যুবদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ককটেল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও যুবদলের ২০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। পুলিশ যুবদল নেতা খোরশেদ আলমের বাড়ি ঘেরাও করে রাখায় ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল দুপুরে ঢাকা জেলা যুবদলের নেতা ও সাভার পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খোরশেদ আলম দলীয় নেতাকর্মীদের নিজ বাসভবনে জমায়েত করে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। এ সময় নিয়মিত টহল পুলিশ বিষয়টি জানতে ঘটনাস্থলে গেলে যুবদলের নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জের পাশাপাশি টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে যুবদল নেতাকর্মীদের দফায় দফায় চলা সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ৩ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ৩টি ককটেল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয় এবং তারা যুবদল নেতা খোরশেদের বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। অপরদিকে লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে যুবদলের নেতাকর্মীরা। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবদল নেতা খোরশেদ আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, অনুমতি না নিয়ে সমাবেশ করায় টহল পুলিশ সেখানে যায়। এ সময় পুলিশের উপর যুবদল নেতাকর্মীরা আক্রমণ করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। পরে দেশীয় অস্ত্র ও ককটেলসহ ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযান চলমান রয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।