সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত বছরের ১০ মে সন্ধ্যায় একটি বিপণিবিতানের বিক্রয়কর্মীকে আটকে টাকা ছিনতাই ও মারধরের ঘটনায় রাতে আটক হন নূর উদ্দিনসহ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই নেতা। পরদিন এ ঘটনায় হওয়া মামলায় তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। মাস দুয়েক পরে কারাগার থেকে বেরিয়ে নূর উদ্দিন আবার ছাত্রলীগে সক্রিয় হন। এবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহসভাপতির পদ পেয়েছেন তিনি।
নূর উদ্দিনের মতো নানা ঘটনায় বিতর্কিত ১২ জনের বেশি শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পেয়েছেন। গঠনতান্ত্রিক মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস পর গতকাল সোমবার সকালে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এ কমিটি ১২১ সদস্যের হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে সদস্যের সংখ্যা ২৮১ জনে দাঁড়িয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এ কমিটি অনুমোদন করেছেন।
২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতির সময় দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও বন্ধ ছিল। ওই সময় ক্যাম্পাস ও আশপাশ এলাকায় ছিনতাই-চাঁদাবাজিতে নাম আসে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন উপদপ্তর সম্পাদক আকতারুল করিম ওরফে রুবেলের। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি ‘উদ্যানের রাজা’ হিসেবে পরিচিতি পান।
২০২১ সালের জুলাইয়ে চাঁদার জন্য চানখাঁরপুলে অবস্থিত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের এক ওয়ার্ড বয়কে পিটিয়ে জখম করার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হন আকতারুল করিম। তখন তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি বেশ কিছুদিন জেল খাটেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগে গত রোববার আকতারুলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাঁকে সহসভাপতি পদে রাখা হয়েছে।
গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জড়িত ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক জিহাদুল ইসলাম। ঘটনার ছয় দিন পর ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। জিহাদুলকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া বেলায়েত হোসেন ওরফে রকির বিরুদ্ধে গত বছরের আগস্টে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে দোকানে চাঁদাবাজি, দোকানের কর্মচারীকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তুলে নিয়ে মারধর-হুমকি ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ আছে৷
গত বছরের ২২ জানুয়ারি রাতে বিজয় একাত্তর হলে শিবির সন্দেহে এক ছাত্রকে রাতভর নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে শাহনেওয়াজ বাবু ও ইউসুফ তুহিনের বিরুদ্ধে। শাহনেওয়াজকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে৷ ইউসুফকে করা হয়েছে কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে টিএসসিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় আলোচনায় আসেন শাহরিয়ার শহীদ ওরফে শুভ৷ তিনি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক হয়েছেন। একই বছরের ৬ মে শাহবাগের একটি খাবারের দোকানে চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে বিনা মূল্যে খাবার খাওয়ার অভিযোগ ওঠে সিফাত আহাম্মেদের বিরুদ্ধে। তিনি পেয়েছেন সমাজসেবা সম্পাদক পদ।
এ ছাড়া গত বছরের জুলাইয়ে রোকেয়া হলে ছাত্রলীগের আরেক নেত্রীকে মারধরে অভিযুক্ত ফারজানা পারভীনকে সহসভাপতি, চলতি মাসে চাঁদাবাজির অডিও রেকর্ড ভাইরাল হওয়া তানভীর হোসেন ওরফে শান্তকে নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক, ২০২২ সালের ১০ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনে অভিযুক্ত এমদাদুল হক ওরফে বাঁধনকে কৃষিশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্যাম্পাসে হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত মেহেদী হাসান ওরফে নিবিড়কে এক নম্বর সহসভাপতি, একই ঘটনায় অভিযুক্ত সায়েক্স শাহরিয়ার ওরফে নীরবকে প্রচার সম্পাদক, ২০১৯ সালে জগন্নাথ হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনে অভিযুক্ত সুস্ময় দাসকে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গত বছরের জুনে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সাংবাদিক লাঞ্ছনায় অভিযুক্ত শিবলী সাদিককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্কুলছাত্রবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।
বিতর্কিতদের পদ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সেই অভিযোগ আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে। আদালত তাঁদের নির্দোষ বলেছে। তাই তাঁদের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণিত কোনো অপরাধীকে কমিটিতে পদ দেওয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রথম আলো