চীন থেকে নেওয়া ঋণের সুদহার কমানো ও পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকলসের সঙ্গে পৃথক বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি।
বৈঠক শেষে চীনের ঋণ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ ক্ষেত্রে সুদহার কমানো ও পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দুই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়গুলো চলমান থাকবে। অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যেন কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা চালিয়ে যান। তারা নিশ্চিত করেছেন, এ ক্ষেত্রে সাধারণত যতটুকু সহায়তা করা হয়, তার চেয়ে বেশি করা হবে।
উচ্চ সুদে নেওয়া চীনা ঋণ বিষয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, সুদের হার নিয়ে কথা হয়েছে। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরও ১০ বছর বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা চীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। চীনা ঋণের সুদহার নিয়ে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রেট অব ইন্টারেস্ট নিয়ে উপদেষ্টা বলেছেন, এটা যত কমানো যায় এবং রিপেমেন্ট পিরিয়ডটা যেন বাড়ানো যায়। তারা সম্মত হয়েছে যে, বেইজিং হেডকোয়ার্টারে আমাদের কনসার্নটা পৌঁছে দেবে এবং তারা শিগগিরই আমাদের এ বিষয়ে জানাবে।’
চীনে থেকে কী পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী জানান, এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। এর মধ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে দেশটি।
গত আট বছরে চীনা অর্থায়নে অন্তত ১০টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে কর্ণফুলী টানেল, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার, ফোর টায়ার জাতীয় ডাটা সেন্টার নির্মাণসহ চারটির কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মা রেল সংযোগ, চট্টগ্রামের সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বা এসপিএম, ঢাকা আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, পিজিসিবির আওতায় বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন, ডিপিডিসির আওতায় বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থা, রাজশাহীতে ওয়াসার ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ প্রকল্প চলমান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের দিক থেকে ঋণের সুদহার নিয়ে যে আপত্তি উঠেছে, তা নিয়েও কথা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, চীনা অর্থায়নে বাংলাদেশে যেসব প্রকল্প চলমান, সেসব নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে। এসব প্রকল্প চলমান থাকবে। পাশাপাশি নতুন করে প্রয়োজনীয় সহায়তার বিষয়েও কথা হয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। সরকারের সঙ্গে কাজ করবেন তারা।
আগের সরকারের রেখে যাওয়া ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণের বোঝা কীভাবে কমাবেন, তা জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা বড় চাপ। প্রচণ্ড চাপ। উন্নয়ন সহযোগীদেরও বলতে হবে যে এটা বড় চাপ। বর্তমান সরকারও এগুলো সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করছে। নিজেদের মধ্যেও এ নিয়ে কথা হচ্ছে। এত বড় ঋণের বোঝা নিয়ে সরকার কাজ শুরু করেছে, যা আমাদের জন্য খুব কঠিন। ঋণ ফেরত দেওয়ার বিষয় আছে। এগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
আগের সরকার কিছু সমস্যা তৈরি করে রেখেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যেগুলো না নিলেও চলত। আমাদের ওপর ঋণের বোঝা পড়েছে। এগুলো দুঃখজনক। আগামীতে অপচয় না করে শুধু জনকল্যাণমূলক প্রকল্প নেওয়া হবে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে কিছু ইস্যু আছে, কানাডার সঙ্গে কিছু ইস্যু আছে। এগুলোর আলোচনা খুব বিস্তারিত হয়নি।
samakal