- কামাল উদ্দিন সুমন, নারায়ণগঞ্জ
- ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
২০০১ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ১৯ বছর। এই ১৯ বছর পরে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান জানালেন, চাষাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে ২০০১ সালের ১৬ জুন বোমা হামলার সাথে বিএনপির নেতারা জড়িত নন।
এনিয়ে তিনি সোমবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এবং বলেছেন, আমি চাই না কোনো নিরপরাধ মানুষ শাস্তি পাক। মামলাটি পুনঃ তদন্ত দাবি করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও বিএনপি নেতা কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকুসহ অন্যরা এ মামলার আসামি।
সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেন, নির্দোষ ব্যক্তিরা এই মামলায় শাস্তি পাক আমি তা চাই না। বিএনপি নেতা তৈমূর আলম ও শকু এই ঘটনার সাথে জড়িত না বলে আমি মনে করি।
শামীম ওসমান যখন আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন তখন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু আসামির কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্য দেয়ার পর সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন শামীম ওসমান। তিনি বলেন, ২০০১ এর ১৬ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বোম ব্লাস্ট হয়েছিল। এরই সূত্র ধরে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আজ আমার সাক্ষ্য ছিল। আমি খুব অবাক এবং বিস্মিত। এই ঘটনায় আমি ছিলাম প্রধান ভিকটিম। প্রধান ভিকটিম হিসেবে আমার যে সাক্ষ্য নেয়া হয়েছিল, আমি দেখলাম তার সাথে ঘটনার কোনো মিল নাই। সে কারণে আমরা আদালতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি, মামলা তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে তলব করতে এবং মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের। কারণ আমরা চাই প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পাক। এ মামলায় এমন মানুষেরও নাম আছে যে এ মামলার সঙ্গে জড়িত না।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শামীম ওসমান বলেন, বোমা হামলার দিন আমাদের পাশের মহল্লার ওবায়দুল্লাহ হক চাচা আওয়ামী লীগ অফিসে আসেন। খোকন একটা মিটিং ডেকেছিল আমি সেটার জন্য গিয়েছিলাম। ওয়াদুল্লাহ চাচা গিয়ে বললেন, তার পরিবার বিদেশ যাবে কাগজ সার্টিফাই করতে। আমি দেখলাম, কাগজে অনেক ভুল। তাকে বললাম, এটা আমি পারবো না। সে উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। এক পর্যায়ে তিনি ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিতে বললেন। আমি বললাম, কাল সকালে আপনার বাসায় দিয়ে আসবো। তিনি আবার উত্তেজিত হয়ে বললেন, এখনই দিতে। পরে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলেন। তার কিছুক্ষণ পরই ঘটলো বিস্ফোরণের ঘটনা।
শামীম বলেন, পুলিশকে বললাম, তদন্ত করে দেখো তাদের চারজনের পাসপোর্ট আছে কিনা। তদন্তে দেখলো পাসপোর্ট নেই। ওবায়দুল্লা সাহেবকে গ্রেফতার করা হলো। রাতে তার পরিবার থানায় গেলো। গিয়ে প্রচণ্ড হইচই শুরু করলো। এই বৃদ্ধ মানুষ এই কাজ কেন করবে? ওই সময় পুলিশও দ্বিধায় ছিল। কাজটা ঠিক হলো কিনা। রাতে ওসি বেরিয়ে গেলেন কিন্তু ওবায়দুল্লাহ সাহেবের পরিবার সারারাত রইলো। সকালে ওসি এসে ড্রয়ার খুলে দেখেন, এক্সপ্লোসিভ। আমি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেলাম। ফেরার পর তখন নির্বাচন চলে। দল বললো নির্বাচন করতে। এদিকে বোমা হামলার দায় আমাদের উপরই চাপানো হলো। জজ মিয়া নাটক সাজানো হলো। ২০০৪ সালে আপিল হলো, ২০০৮ এ তদন্তের রায় আসলো। আমি সাক্ষ্য দিলাম কিন্তু ওই সাক্ষ্যর সঙ্গে এখন কোনো মিল নাই। আমার সাক্ষ্যই ভুল লিখেছে। চার্জশিট দেয়ার পর সেই ওবায়দুল্লাকে আর দেখলাম না। কী অভিশপ্ত জীবন এটা আমরা বুঝি।
শামীম ওসমান বলেন, আমি ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দলের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছি, এই চার্জশিট, এজাহার আমি মানি না। কারণ এখানে আমি কোনো নেগোশিয়েশন করবো না। ওরা আমাকে মারতে গিয়ে কাপুরুষের মতো আরো ২০ জনকে মেরেছে। আমি যদি বেঁচে নাও থাকি এই মামলাটা যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। যারা সত্যিকারের দোষী লোক তাদের যেন বিচার হয় এবং যারা নিরাপরাধ সে বিএনপি, জাতীয় পার্টি যাই করুক তাদের যেন কোনো বিচার না হয়। আদালত আমার বক্তব্যে কনভিন্সড হয়েছেন এবং এডিশনাল পিপিকে পিটিশন দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আইনের ফাঁক-ফোকরে একজন অপরাধী হয়তো পার পেয়ে যেতে পারে। তাতে আমাদের কষ্ট পাবার কিছু নাই। একই আইনের ফাঁকে কোনো নির্দোষ ব্যক্তি সে যদি আমার শত্রুও হয় তাও যেন সাজাপ্রাপ্ত না হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি কাউকে অপরাধী মনে করি না। আর আমি মনে করি না যে, কাউন্সিলর শকু এটার সাথে জড়িত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু বলেন, ‘এমপি সাহেব যথার্থই বলেছেন। এটাই তো সত্য। আমি কিংবা তৈমূর ভাই কেউই এই ঘটনায় জড়িত না। আমাদের এতদিনে যত কষ্ট করতে হয়েছে তা সব শেষ হয়ে গেছে এমপি সাহেবের এই কথায়।’