চালের দাম বেড়েছে, চড়া চিনিও

বাজারে এক মাসে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। খুচরায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম। তবে সরু চালের দাম তুলনামূলক কম বেড়েছে। বেড়েছে চিনির দামও। সরবরাহ সংকটকে দায়ী করে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, খোলা ও প্যাকেটজাত উভয় ধরনের চিনির দাম কেজিতে অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহজাহানপুর, মালিবাগ ও রামপুরা বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাসের ব্যবধানে মোটা (স্বর্ণা ও ইরি) ও মাঝারি (বিআর ২৮) মানের চালের দাম খুচরা বাজারে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা এবং সরু (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) চালের দাম খুচরায় ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে।

বাজারে এখন মোটা চালের দাম পড়ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি, আর মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৯ থেকে ৬০ টাকায়। সরু চালের মধ্যে মিনিকেট চাল প্রতি কেজি মানভেদে ৬৫ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল চালের বেশ কয়েকটি ধরন বাজারে পাওয়া যায়। দাম ৭৫ থেকে ৯৫ টাকা। তবে দাম বেশি হওয়ায় কম ও সীমিত আয়ের মানুষ সাধারণত এই চাল কম কিনে থাকেন।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এইচ আর খান পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, মিলমালিকেরা চালের দাম না বাড়ালেও খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে। তাই চালের বাজার তদারকি করা প্রয়োজন। তবে এবার চালের উৎপাদন ভালো এবং নতুন চালও দ্রুত বাজারে আসবে। তাতে চালের দাম আর বাড়বে বলে মনে হয় না।

ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে চালের দাম বাড়ার তথ্য পাওয়া গেলেও সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের বাজারদরের তালিকা অবশ্য বলছে, মোটা ও সরু চালের দাম গত এক মাসে ২ শতাংশ কমেছে। আর মাঝারি চালের দাম কমেছে ৩ শতাংশ।

এদিকে বাজারে বেড়েছে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম। খুচরায় এখন খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত চিনিও ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে চিনির দাম এখনো বাড়ছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাঁরা মিলফটক থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি পাচ্ছেন না। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চিনির সংকট আছে এবং সে কারণেই দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারের জন্য প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১৩০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকায় সরকারিভাবে নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু পাইকারি বাজারেই চিনি বিক্রি হচ্ছে সরকারি দামের চেয়ে বেশি।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতকাল পাইকারি বাজার থেকে তাঁরা প্রতি কেজি খোলা চিনি কিনেছেন ১৩৭ টাকায়। কেউ কেউ এর চেয়ে বেশি দামেও কিনেছেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে মোড়কে প্রতি কেজির দাম ১৩৫ টাকা লেখা থাকলেও পাইকারি বাজারে প্যাকেটজাত চিনি ১৩৭ থেকে ১৩৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে চিনির সরবরাহ কম, তাতে দাম বেড়েছে। তবে বড় কোনো সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই।’

এদিকে এক সপ্তাহ আগের তুলনায় বাজারে সবজির দাম কমেছে। দাম কমে মুরগির বাদামি ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামও কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম পড়ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। আলুর দাম একটু কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। মাছ, গরুর মাংসসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে।

রামপুরা বাজারের ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী আরমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকটি পণ্যের দাম একটু কমলেও খুব কমেছে, তা বলা যাবে না। কারণ, দাম যেখান থেকে উঠেছিল, সেই পর্যায়ে এখনো ফেরেনি।

মোকামেও চালের দাম বাড়তি

দেশে চালের অন্যতম বড় মোকাম নওগাঁয় এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ১-২ টাকা বেড়েছে। সেখানকার মেসার্স চকদার চালকলের মালিক ও জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ধানের দাম মণে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। এ কারণে চালের দামও বেড়েছে।

দাম বেড়েছে আরেক বড় মোকাম কুষ্টিয়ার চালের বাজারেও। খাজানগর এলাকার মিলমালিকেরা বলেন, পুরোনো ধানের সংকটে দাম বেড়েছে। ধান কাটা পুরোপুরি শুরু হয়নি। নতুন ধান বাজারে এলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।

প্রথম আলো